হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – পর্ব ৫
হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ইউসুফ (রঃ) তাঁকে অভয় দিলেন। নিঃসঙ্কোচে তিনি বলতে পারেন।
আবু ওসমান সাহস পেয়ে বললেন, আপনার কাছে দাঁড়িয়ে আছে দাড়ি-গোঁফশূন্য বালক। সামনে রয়েছে শরাবের সোরাহী, পানপত্র। এর রহস্য কী হুজুর?
হযরত বললেন, মানুষ আসল ব্যাপার না জেনে, ভেতরে তলিয়ে না দেখে শুধু বাইরে থেকে যা দেখে বা শোনা তাকেই আসল মনে করে অনেক কিছু বলে বা ভাবে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল। এই যে ছেলেটিকে দেখছে, এ আমার নিজের ছেলে। আর ঐ শরাবের সোরাহীও শরাবের নয়, পানির। আর ঐ পানপত্র ও দিয়ে আমি পানিই পান করি।
আবু ওসমান খুব সহজ আর হালকা বোধ করছিলেন। তাই আরও অন্তরঙ্গ হয়ে বললেন, হুযুর সব সময় তো ভেতরের ব্যাপার সকলের পক্ষে জানা বা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। বরং মানুষ বাইরে থেকে যা দেখবে বা বুঝবে, তারই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে। তো আপনি বাইরের দিকটাকে এভাবে উপস্থিত করেন কেন?
হযরত ইউসুফ (রঃ) তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এর কারণ জানতে চাও? কারণ হল এই যে, এ দৃশ্য দেখে কেউ তার সুন্দরী বাঁদী আমার কাছে আমানত রাখতে না আসে।
হঠাৎ যেন আবু ওসমানের জ্ঞান-চক্ষু উন্মীলিত হল। তিনি বুঝতে পারলেন, প্রকৃত যারা ধর্মভীরু, তারা পার্থিব বিষয়াদি থেকে হৃদয় ও দৃষ্টি সরিয়ে নেন। মানুষের দুর্নাম বা অপবাদে তাদের কিছু যায় আসে না।
আর এই উপলব্ধি অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে তার মনে যে চাঞ্চল্য ও রূপজ মোহ দেখা দিয়েছিল তা তিরোহিত হয়ে গেল। নির্মূল হয়ে গেল কামনার বীজাঙ্কুর। শুদ্ধ স্নাত হয়ে গেলেন তিনি।
এই মহাতাপস সম্বন্ধে সোনা যায়, এশার নামাজের পর থেকে ফজর পর্যন্ত সারা রাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তিনি কাটিয়ে দিতেন। অর্থাৎ, দণ্ডায়মান অবস্থায় তিনি আল্লাহর ধ্যান করতেন। এর
কারণ হিসেবে তিনি বলতেন, এশার নামাজের পর রুকু কিংবা সেজদা দেবার মতো শক্তি থাকে না। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই এবাদত করি।
বিখ্যাত সাধক হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)- কে তিনি একবার এক পত্রে লেখেন, আল্লাহ পাক কখনও আপনাকে যেন প্রবৃত্তির স্বাদ উপভোগ না করান। কেননা, সে স্বাদ উপভোগের সুযোগ এলে তখন কিছুই আপনার দৃষ্টির সম্মুখে প্রতিভাত হবে না।
প্রত্যেক নবীর উম্মতের মধ্যে এক শ্রেণীর ধর্মভীরু লোক থাকেন, যারা প্রকৃতই আল্লাহর বন্ধু। আল্লাহ সর্বত্রভাবে তাদের রক্ষা করেন। আর লোকচক্ষুর আড়ালে, গোপনে তাদের রেখে দেন। রাসূলে কারীমের উম্মতের মধ্যে সুফী সাধকগণ হলেন সেই শ্রেণীর ধর্মভীরু মানুষ, রাব্বুল আলামীনের একান্ত প্রিয়জন।
হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন