হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – পর্ব ২
হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, রূপমুগ্ধা সেই অভিসারিকাকে আপনি প্রশ্রয় দেননি। পাপের ছোবল থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে আপনি দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আল্লাহ পাক স্বয়ং এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে সমস্ত ফেরেশতা ও আমাকে ডেকে বললেন, জুলায়খা যেমন নির্জন কক্ষে আপনাকে পাপ পথে আহবান করেছিল, আর আপনি ছুটে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলেন, তেমনি আপনার নামের আর এক ইউসুফ আরবের এক আমীর-কন্যার প্রেম নিবেদন উপেক্ষা করে আমাকে খুব খুশী করেছে। অতএব, আপনি ফেরেশতাসহ তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে আমার প্রিয় সাধকদের অন্তর্ভুক্ত করার সুসংবাদ দান করুন। আর তাঁকে একথাও জানিয়ে দিন, সে যেন একালের শ্রেষ্ঠ তাপস যুননুন মিশরীর দরবারে হাজির হয়ে তাঁর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করে।
বলাবাহুল্য এমন জান্নাতী স্বপ্ন দর্শনে তরুণের মনে প্রভূত আনন্দের সঞ্চার হয়। আর পরদিন প্রত্যুষেই তিনি হযরত যুননুন (রঃ)-এর উদ্দেশ্যে মিসর অভিমুখে যাত্রা করেন। মিসরে গিয়ে এক মসজিদে তিনি তাঁর দেখা পেলেন বটে। তবে সাহস করে তাঁকে কিছু বলতে পারলেন না। আর এভাবে সংকোচের শিকার হয়ে পুরো একটি বছর পার করে দিলেন। পরে একদিন হযরত যুননুন (রঃ)-ই তাঁকে নামধান ও তাঁর আগমনের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন।
এবার সাহস এল মনে। তরুণ বললেন, সেরা প্রদেশ থেকে এসেছে। তাঁর কিছু নিবেদন আছে।
কিন্তু না, আবার হতাশা! হযরত যুননুন (রঃ) তাঁর কথা শুনে আর কিছু বললেন না। কী তাঁর নিবেদন, জানতে চাইলেন না। ফলে তরুণ তাঁর কথা ইচ্ছার কথা এবারও প্রকাশ করতে পারলেন না। আরও একটি বছর কেটে গেল।
আর যায় কোথায়। প্রচুর সাহস নিয়ে তরুণ বললেন, আমি আপনার দরবারে ইসমে আজম শেখার জন্য এসেছি। কিন্তু এবারও সেই শীতলতা। হযরত যুননুন (রঃ) আবারও চুপ করে গেলেন। হ্যাঁ-না কিছুই বললেন না। এভাবে আরও এক বছর অতিবাহিত হল।
তারপর হঠাৎ একদিন হযরত যুননুন (রঃ) তরুণের হাতে মুখ-আঁটা কাঠের একটি কৌটা দিয়ে বললেন, নীল নদের ওপারে অমুক জায়াগায় একটা লোক আছে। তাঁকে এটা দিয়ে এস। আর সে যা বলে তা মনে রেখো।
কৌটা নিয়ে যেতে যেতে তরুণের মনে হল, এর ভেতরে কী যেন নড়াচড়া করছে। প্রবল কৌতূহল দমন করতে না পেরে তিনি কৌটার মুখ খুলে যেই দেখতে যাবেন, অমনি ওর ভেতর থেকে ছোট একটা ইঁদুর লাফ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
বড় বেকুব বনে গেলেন তরুণ। এইবার! খালি কৌটাটা নদী পারের লোকটিকে দিয়ে লোকটির কাছেই গেলেন। তাঁকে কিছু বলার আগে তিনিই বললেন, তুমি হযরত যুননুন (রঃ)- এর কাছে ইসমে আজম শিখতে এসেছিলে? তরুণ সঙ্গে সঙ্গে বললে, জি হুযুর। আপনি ঠিকই ধরেছেন। তিনি বললেন, তিনি হয়তো তোমাকে একটু অসহিষ্ণু মনে করে ঐ ইঁদুরটি তোমার হাতে দিয়ে থাকবেন। আর তুমি সামান্য একটা ইঁদুর ধরে রাখতে পারলে না? কী করে সেই মহান মহার্ঘ্য পবিত্র নাম অন্তরে ধরে রাখবে?
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন