হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর স্বপ্ন-১ম পর্ব

একদা হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর পিতার নিকট বললেন, “আব্বাজান! আমি স্বপ্নে দেখেছি এগার তারকা ও চন্দ্র সূর্য আমাকে ছেজদা করছে।”

হযরত ইয়াকুব (আঃ) হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর স্বপ্নের তাৎপর্য বুঝে ছিলেন। তিনি জানতেন চার মায়ের বার সন্তান। ওদের মাঝে যদি হযরত ইউসুফ (আঃ) উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয় তবে বাকি ভাইদের মান-মর্যাদা রক্ষা পায় না। তাই হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের এহেন খবর যদি ভাইয়েরা অবগত হয় তবে তাঁরা অবশ্যই ঈর্ষান্বিত হবে এবং ক্রোধের বশবর্তী হয়ে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ক্ষতি সাধন করবে।

এ স্বপ্ন যে হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে একজন অধিক মর্যাদা সম্পন্ন নবী হিসেবে বাছাই করে নেয়ার পুর্বাভাস। তা পরবর্তী আয়াতসমূহে আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। সেখানে আরো বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে আল্লাহ তায়ালা গায়েবী এলেম দান করবেন। অর্থ সম্পদের প্রাচুর্য দান করবেন।, যাদ্বারা তিনি পৃথিবীর মানুষের অশেষ কল্যান সাধন করবেন এবং অসংখ্য ধর্মচ্যুত মানুষকে ধর্মের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় দিতে সক্ষম হবেন।

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর স্বপ্নটি তাঁর পিতা ভাইদের নিকট প্রকাশ করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু সুচতুর শয়তান আর নিরব থাকতে পারে নি। সে সুকৌশলে স্বপ্নটির মূল রহস্য উদঘাটন করে ভাইদের নিকট প্রকাশ করে দিল। এতে প্রতিক্রিয়া যা হবার সম্ভাবনা ছিল তাই হল।

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সৎ ভাইয়েরা পিতার পক্ষপাতিত্বের জন্য বিরূপ ছিল। পরে স্বপ্নের ঘটনায় তাঁদের মনে হিংসার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। তাঁরা আর এক মুহূর্ত বিলম্ব করতে রাজি হল না। সত্বর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সকলে একত্রে বৈঠাক বসল। কেউ বলল পিতার কাছে না বলে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে চল এবং গভীর জঙ্গলে এনে গলা কেটে মেরে ফেলি। কেউ বলল ইউসুফকে গভীর অরণ্যে গাছের সাথে বেঁধে রেখে দেই, অরণ্যের বাঘ এসে তাঁকে খেয়ে ফেলুক।

 যাতে করে আমরা হত্যার অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করতে সক্ষম হব। কেউ বলল, ইউসুফকে পিতার নিকট থেকে সরিয়ে আনা খুবই কঠিন কাজ। অতএব পিতার নিকট মিথ্যা কিছু অভিযোগের কথা বলে তাঁকে পিতার চোখের আড়াল করার ব্যবস্থা প্রথমে করতে হবে। যেহেতু পিতা তাঁকে সর্বক্ষণ তাঁকে চোখে চোখে রাখেন এবং আমাদের মাতা ও ইউসুফের বড় হিতাকাঙ্ক্ষী। এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা ও সম্ভবত তাঁর হেফাজতের জন্য ফেরেস্তা নিয়োগ করে রেখেছেন। সে যে স্বপ্ন দেখেছে সেটা খুব সহজ ব্যাপার নয়। এমতাবস্থায় ভালভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। নচেৎ পিছনে আমাদের সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা অধিক। শেষোক্ত ভাইয়ের মন্তব্যে সকলে কিছুটা আতঙ্কিত হল। তাই সকলে দীর্ঘ সময় নির্বাক অবস্থায় কাঁটালো। সর্বশেষে সকলের বড় ভাই ইয়াহুদ প্রস্তাব দিল হ্যাঁ, আমার পিতাকে সম্মত করে যা করার তা করব। তবে তাঁর পূর্বে ইউসুফকে দৌড় প্রতিযোগিতা দেখার জন্য উৎসাহ প্রদান করি এবং তাঁকে বুঝিয়ে আমাদের সঙ্গে যেতে রাজি করি।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর স্বপ্ন-২য় পর্ব  পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।