হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর দর্শনে মহিলাদের বিভ্রান্তি-পর্ব ২
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর দর্শনে মহিলাদের বিভ্রান্তি-পর্ব ১–পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রক্তে কাপড় চোপড় ব্যতীত যাবতীয় খাদ্য দ্রব্য পর্যন্ত রঞ্জিত হল। যাতে করে সেদিন আর করো খাওয়া দাওয়া হল না। শুধু ইউসুফ (আঃ)-এর প্রতি তারা আসক্তির নেশার মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল। আনন্দের বদলে সেখানে যেন এক বিষাদ নেমে আসছিল। কারো মুখে আর হাসি ছিল না। সকলেই বিষণ্ণ বদনে বিদায় গ্রহণ করতে উদ্দত হল।জোলেখা তখন সকলকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা ইতোপূর্বে আমাকে অনেক ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছ। এবার দেখ কিসের নেশায় আমি উম্মাদ হয়েছি। রমণীগণ নিরুত্তর হয়ে সে দিনের মত চলে গেলেন।
রমণীগণ ঘরে ফিরে গেলেন বটে কিন্তু হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর রূপে তীক্ষ্ণ বানে ক্ষত-বিক্ষত হল সকলের হৃদয়। তাই তারা দ্বিতীয় বার ইউসুফ (আঃ)-এর রূপসুধা পান করার নিমিত্ত ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তাই একদিন তারা কয়েকজনে পরামর্শ করে জোলেখার নিকট আসলেন এবং তাঁকে বলেন, “জোলেখা তুমি দীর্ঘ দিন যাবত ইউসুফ (আঃ)-এর হৃদয় কুটিরে প্রবেশ করার জন্য আমরণ চেষ্টা চালিয়ে সফল হতে পারনি। হৃদয়। ইউসুফ (আঃ)-কে বুঝিয়ে বলে তাঁকে আকৃষ্ট করা যায় কিনা? অতএব একদিন তাঁকে আমাদের সম্মুখে হাজির করে দাও। জোলেখা আগ পর না ভেবে এ ধরনের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে গেলেন এবং পরের দিন এ অনুষ্ঠানের জন্য তারিখ নির্ধারণ করে দিলেন।
পরের দিন যথাসময়ে তারা একত্রিত হলেন। এবার আড়ম্বর বেশে ইউসুফ (আঃ)-কে তাঁদের সম্মুখে হাজির করা হল। রমণীগণ সকলে অপলক চোখে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর প্রতি দীর্ঘ সময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাটিয়ে দিলেন। জোলেখা তখন বললেন তোমার নিরব রহিলে কেন? তোমাদের কথা বল। তখন রমণীদের মোহ কিছুটা দূর হল, তাঁদের চেতনা ফিরে এল। একজনে প্রথমে বলল, হে ইউসুফ ! তুমি জান, জোলেখা তোমার জন্য কি না করেছেন ? তোমাকে একজন রাজার মনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তোমাকে লাভ করার জন্য তাঁর জীবন যৌবন উৎসর্গ করেছেন। তোমার হৃদয় রাজ্যে একটু স্থান করে নেয়ার জন্য তাঁর জীবনের সকল আরাম হারাম করেছেন।
এমতাবস্থায় তুমি তাঁকে বার বার উপেক্ষা করে তাঁর হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করছ কেন? তোমার মধ্যে কি দয়ার কোন লেশ নাই ? এটা তোমার কৃতজ্ঞতার পরিচয় নয়। তুমি ভাল করে আর একবার চিন্তা ভাবনা করে দেখ, তোমার মঙ্গল কোথায় ? অন্যথায় তোমাকে শেষ পর্যন্ত কারাবরণ করে ভীষণ দুর্দশা পোহাতে হবে। অতএব তোমরা নিজ মান-ইজ্জত ও স্বার্থ রক্ষার খাতিরে জোলেখাকে তোমার হৃদয় মাঝে স্থান করে দাও। এটা তোমার নিকট আমাদের একান্ত অনুরোধ।
হযরত ইউসুফ (আঃ) রমণীদের কথা শুনে উঠে দাঁড়ালেন । তখন রমণীগণ তাঁকে হাত ধরে আবার বললেন। এটা ছিল হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে স্পর্শ করার একটা সুযোগ বেছে নেয়া। হযরত ইউসুফ (আঃ)- বললেন, আমি আল্লহ তা’য়ালা কে ভয় করি। জোলেখা আমার নিকট যা আশা করে তা সম্পন্ন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন রমণীগণ এক ফাঁকে নিজেরা হযরত ইউসুফ (আঃ)- নিকট প্রেম নিবেদন করে বসলেন, “হে প্রভু ! আমাকে যে পথে প্রলদ্ধ করা হচ্ছে, তাঁর চেয়ে কারাগার আমার অধিক প্রিয়। তুমি যদি এ নারীদের খপ্পর থেকে আমাকে রক্ষা না কর, তাহলে হয়ত আমি বোকার ন্যায় তাঁদের প্রতি ঝুকে পরব।”
জোলেখা রমণীদের কার্যবিধি লক্ষ্য করে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেন। তিনি মনে মনে খুবই পরিতাপ করলেন এবং বললেন, ইউসুফকে রমণীদের সম্মুখে হাজির করা বা তাঁদেরকে দাওয়াত করা নিতান্ত অন্যায় হয়েছে। পরিনামে তারা সকলে ইউসুফ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। যদি তাঁদের সম্মুখে ইউসুফকে প্রদর্শন করা না হত তাহলে তারা এ সুযোগ আদৌ পেতনা। আমি জীবনে এত জাতনা কখনই ভোগ করিনি, যা ইউসুফকে লাভ করার জন্য করেছি। এখন আমার সে সাধের ধন ও সাধনার ফল আমার সম্মুখ থেকে অন্য লোকে ছিনিয়ে নিবে। আর আমি তা নিরবে সহ্য করব। এটা কখনও সম্ভব নয়। অতএব অতি সত্তর ইউসুফ (আঃ) কে এক নির্জন প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
ওদিকে আজিজ মেছেরের নিকট জোলেখার বর্তমান কার্যকলাপ ও রমণীদের হাত কাটার বিস্তারিত খবর যথাযথ ভাবে পৌঁছে গেল।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর দর্শনে মহিলাদের বিভ্রান্তি-পর্ব ৩ –পড়তে এখানে ক্লিক করুন