হযরত ইউসা (আঃ) এর জন্ম নবুয়াত প্রাপ্তি ও ধর্ম প্রচার-৬ষ্ঠ পর্ব
হযরত ইউসা (আঃ) এর জন্ম নবুয়াত প্রাপ্তি ও ধর্ম প্রচার-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দোয়া করামাত্র আল্লাহ্ তাঁর দোয়াটিও কবুল করলেন এবং তাঁর স্ত্রী পুনরায় স্বভাবিক অবস্থা ফিরে পেল। কিন্তু দরবেশ বালাম বাউরের ভাগ্য খারাপ বলে সে প্রথম হতেই স্ত্রীর মনজয় করতে গিয়ে নিজেকে ধ্বংসের কোলে ঠেলে দিলেন।
হযরত ইউসা (আঃ) কাফির রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যে সব গণীমত লাভ করলেন তা স্তুপাকারে রেখে দেয়া হল। তৎকালে গণীমতের মাল ভোগ করা তৌরাত কিতাবের বিধান ছিল না বরং তা আগুনে পোড়িয়ে দেয়া হত। তাই হযরত ইউসা (আঃ) তাঁর যুদ্ধলব্ধ সমস্ত মাল পবিত্র তৌরাতের বিধান অনুসারে আগুনে জ্বালিয়ে দিলেন।
অতঃপর হযরত ইউসা (আঃ) তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে আলী নামক একটি শহরে পৌঁছলেন। ঐ শহরে বার হাজার লোক বাস করত। তারা সকলেই ছিল মূর্তি পূজক। আল্লাহ্ পাকের প্রতি তাঁদের কোন বিশ্বাসই ছিল না। হযরত ইউসা (আঃ) তাঁদের কাছে দ্বীনের কথা পেশ করার সাথে সাথে তারা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দিলেন। হযরত ইউসা (আঃ) তাঁদের সাথে যুদ্ধ করে তাঁদেরকে ধ্বংস করে দিলেন।
এরপর হযরত ইউসা (আঃ) পাহাড়ের পাদদেশে কিছু লোক বাস করত। তারা সকলে হযরত ইউসা (আঃ) দ্বীন কবুল করে নিজেদের কল্যাণ ডেকে আনলেন। উক্ত পাহাড়দ্বয়ের একটির নাম ছিল আমাদ এবং অন্যটির নাম ছিল জাউন। উক্ত পাহাড়ী এলাকায় বালাক নামীয় অপর এক শক্তিশালী বাদশাহ হযরত ইউসা (আঃ)-এর আগমনবার্তা শুনে সহজেই তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন। দেখাদেখি তাঁর সৈন্যগণ ও প্রজাগণ দ্বীনের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
বাদশাহ বালাক ও তাঁর লোকজনকে ধর্মে দীক্ষিত করার পর হযরত ইউসা (আঃ) তথা হতে পশ্চিমাঞ্চলে গমন করে দারমানী নামক একটি সম্প্রদায়ের এলাকায় উপস্থিত হলেন। সেখানে পাশাপাশি পাঁচটি রাজ্যে এ একই সম্প্রদায়ের লোক বাস করত। এ পাঁচটি রাজ্যের পাঁচজন বাদশাহ তারা সকলে একযোগে তারা সকলে একযোগে হযরত ইউসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল। আল্লাহ্র রহমতে হযরত ইউসা (আঃ) এর সেনাদের হাতে পরাজয় বরণ করল।
হযরত ইউসা (আঃ) বেদ্বীনদের সাথে মোকাবেলা ও ধর্ম প্রচার কাজে অতিবাহিত করার পর বনি ইসরাঈলগণকে বললেন, এবার চল আমরা বেলকা নগরীতে প্রবেশ করে আল্লাহ্র দরবারে সিজদাহ করতঃ আমাদের প্রতি আল্লাহ্র অসীম রহমতের শোকরিয়া আদায় করি। বনি ইসরাঈলগণ তাঁদের নিজ ভাষায় হিত্তাতুন অর্থাৎ হে আল্লাহ্! আমাদের পাপসমূহ মাফ করে দিন, বলতে বলতে উক্ত নগরীতে প্রবেশ করতে লাগল। তাঁদের মধ্যে কিছু সংক্ষক লোক এমন প্রকৃতির ছিল, দ্বীন ইসলাম পালনের ক্ষেত্রেও হঠকারিতা, বিরোধিতা ও ঠাট্টা বিদ্রূপ করত। এমনকি হযরত মূসা (আঃ) এর মতো নবীর সাথেও তারা তর্ক ও বেয়াদবী করত হযরত ইউসা (আঃ) কে তো তারা মোটেই গ্রাহ্য করত না। ঐ শ্রেণীর লোকজন হযরত ইউসা (আঃ) এর নির্দেশিত হিত্তাতুন। শব্দ বলার পরিবর্তে হিনতুন অর্থাৎ আমাদেরকে গম দাও বলতে লাগল। আর নগরে প্রবেশ করে তারা আল্লাহ্র দরবারে সিজদায় শুকরিয়া করার পরিবর্তে দুষ্টামী করত হামাগুড়ি দিয়ে রইল এবং হাস্য কৌতুক করতে লাগল।
এরূপ আচরণের ফলে তাঁদের প্রতি আল্লাহ্র গজবে অনেকেই মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাল। বাকী লোকজন অগ্নিবৃষ্টির কবলে পড়ে অকালে মৃত্যুবরণ করল। তবে যারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সাথে সাথে আল্লাহ্র দরবারে তাওবাহ করল, আল্লাহ্ পাক তাঁদেরকে ক্ষমা করে বিপদমুক্ত করলেন।
হযরত ইউসা (আঃ) সাত বছর পর্যন্ত ধর্ম প্রচার অভিযানে সর্বমোট একত্রিশটি রাজ্য করতল করলেন। রাজ্যগুলোর অধিপতিদের কতকে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হল। কতকে হযরত ইউসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রাজ্য হারাল এবং প্রাণ বিসর্জনও দিল।
বেলকার অবস্থানকালে হযরত ইউসা (আঃ) এর কাছে খবর পৌছাল যে, সালেম পাহাড়ে যে সমস্ত লোক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল তারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে মূর্তি পূজা শুরু করছে। এ খবর শুনে তিনি তাঁদের সম্পর্কে আল্লাহ্র দরবারে হেদায়েতের দোয়া করতঃ তিনি বনি ইসরাঈলদেরকে নিয়ে মিসর চলে গেলেন এবং তাঁদের জন্য সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করলেন।
এ সময় হযরত ইউসা (আঃ) এর পার্থিব জীবনের শেষ লগ্ন ঘনিয়ে আসছিল। তিনি তা বুঝতে পেরে নিজের প্রধান সহচর হযরত কালুতকে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করে আপন উম্মত বনি ইসরাঈলদেরকে তাঁর হাতে ন্যস্ত করতঃ মহান আল্লাহ্ পাকের দরবারে চলে গেলেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল দু’শত বছর। কারো মতে তিনি ১৬৯ বছর আয়ু লাভ করেছিলেন।
হযরত ইউসা (আঃ) এর জন্ম নবুয়াত প্রাপ্তি ও ধর্ম প্রচার-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন