হযরত আহমদ সাওয়ারী (রঃ) – পর্ব ১
মুরশিদ রয়েছেন আল্লাহর প্রেমে বিভোর। ভাবোন্মত্ত বলে ফেললেন, তুমি নিজে গিয়ে উনুনের মধ্যে বস।
পীরের আদেশ তিনি যা বলেন তাই করতে হয়। পীর-মুরীদের মধ্যে এ রকমই চুক্তি আছে। পীর যা বলেন, তাই বলতে হবে। অন্যথা করা চলবে না। অতএব মুরীদ গিয়ে সত্যিই উনুনের মধ্যে বসলেন।
কিছুক্ষণ পরে মুরশিদের ভাবতন্ময়তা কেটে গেল। তিনি তাঁর নিজের আদেশের মনে পরে গেল। দেখা গেল, সত্যিই মুরীদ বসে আছে উনুনের ওপর। তবে আশ্চর্য এই যে, তাঁর একটি লোমও পোড়েনি।
এই একান্ত অনুগত মুরীদটিই হলেন বিখ্যাত সাধক হযরত আহমদ সাওয়ারী (রঃ)। আর স্বনাম-ধন্য মুরশিক হলেন হযরত সুলায়মান দারানী (রঃ)। যেমন, পীর তেমনি তাঁর মুরীদ।
আহমদ সাওয়ারী (রঃ) সমকালের একজন বিখ্যাত তাপস। হাদীসশাস্ত্রে তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল অসাধারণ। সে যুগের সবাই ধর্মীয় জিজ্ঞাসা নিয়ে তাঁর শরণাপন্ন হত। শিক্ষাগুরু সূলায়মান (রঃ) ছাড়াও প্রখ্যাত হাদীস-বেত্তা সুফিয়ান ইবনে ও আইনিয়ার (রঃ) সাহচর্য আহমদ সাওয়ারী (রঃ) লাভ করেন।
কথিত আছে, শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি যখন সিদ্ধি লাভ করেন, তখন তাঁর গঠিত বইগুলো সব নিক্ষেপ করেন নদী গর্ভে। বলেন, এগুলো আমার জন্য এক সময় মূল্যবান দলিল ও পথ-প্রদর্শক ছিল। কিন্তু এগুলোর এখন আর প্রয়োজন নেই। কেননা, মুরীদ যতদিন পর্যন্ত পথের পথিক থাকেন, ততদিন পর্যন্ত তাঁর পথ প্রদর্শকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু গন্তব্য-স্থলে উপনীত হওয়ার পর আর পথ-প্রদর্শনের প্রয়োজন থাকে না।
হযরত আহমদ (রঃ) এক পরমা সুন্দরীকে স্বপ্নে দেখে তাকে বললেন, হে সুন্দরী! তোমার চেহারা সত্যিই দেখবার মতো। রমণী উত্তর দেন, আমার এ সৌন্দর্য আপনার উসিলায়ই পেয়েছি। আপনি এক রাতে কান্নাকাটি করেন, তা আপনার মনে আছে কী! সেদিন আপনার চোখ থেকে ঝরে পড়া পানির কিছুটা আমি আমার চেহারায় মাখিয়ে দিয়েছিলাম। আর এই জন্যই আমি এমন লাবণ্যময়ী হয়েছি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া