হযরত আমর ইবনে মুররাহ জুহানী (রাঃ) কর্তৃক নিজ কওম কে দাওয়াত প্রদান – শেষ পর্ব

রাসূল (সাঃ) (কবিতা শুনিয়া) বলিলেন, তোমাকে মারহাবা, হে আমর! হযরত আমর বলেন, আমি বলিলাম, আমার পিতামাতা আপনার উপর কোরআন হউক, আমাকে আমার কওমের নিকট প্রেরণ করুন হয়ত আমার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তাহাদের প্রতি দয়া করিবেন, যেমন আপনার দ্বারা আমার প্রতি দয়া করিয়াছেন। অতএব তিনি আমাকে প্রেরণ করিলেন এবং নসীহত করিলেন যে, নম্র ব্যবহার করিবে, সহজ সরলভাবে কথা বলিবে। কঠোর কথা বলিবে না। অহঙ্কারী ও হিংসুক হইবে না। আমি আমার কওমের নিকট আসিয়া বলিলাম, হে বনি রাফাআহ, বরং হে জুহাইনা গোত্র, আমি আল্লাহর রাসূলের দূত হিসাবে তোমাদের নিকট আসিয়াছি। তোমাদিগকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিতেছি এবং তোমাদিগকে খুনের হেফাজত, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, এক আল্লাহর এবাদত করা, মূর্তিপূজা বর্জন করা, বাইতুল্লাহর হজ্জ করা ও বার মাসের একমাস অর্থাৎ রমজান মাসের রোজা রাখার হুকুম করিতেছি। যে ব্যক্তি মানিয়া লইবে সে বেহেশত পাইবে, আর যে অমান্য করিবে সে দোযখে যাইবে। হে জুহাইনা গোত্র, আল্লাহ তায়ালা তোমাদিগকে সমগ্র আরবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বানাইয়াছেন এবং যে সকল ঘৃণিত কাজ অন্যান্য আরবদের নিকট পছন্দনীয় ছিল তাহা তিনি তোমাদের নিকট জাহিলিয়াতের যুগেও অপছন্দনীয় করিয়া দিয়াছিলেন। কারণ, অন্যান্য আরবগোত্রগণ সহোদর দুইবোনকে একই সময়ে স্ত্রী হিসাবে রাখিত, সম্মানিত মাসে লড়াই করিত এবং পিতার মৃত্যুর পর তাহার পরিত্যক্ত বংশে প্রেরিত এই নবীর কথা মানিয়া লও, দুনিয়ার সম্মান ও আখেরাতের মর্যাদা লাভ করিবে।

হযরত আমর (রাঃ) বলেন, কওমের কেহই আমার নিকট আসিল না। শুধু এক ব্যক্তি আসিয়া বলিল, হে আমর ইবনে মুররাহ! আল্লাহ তোমার জীবনকে তিক্ত করুন, তুমি কি আমাদিগকে এই আদেশ করিতেছি যে, আমরা আমাদের মাবুদগুলিকে পরিত্যাগ করি? আমরা ছিন্ন ছিন্ন হইয়া যাই এবং উন্নত চরিত্রের অধিকারী আমাদের বাপদাদাদের ধর্মের বিরোধিতা করি? তেমহা নিবাসী এই কোরাইশী আমাদিগকে কিসের প্রতি আহবান করিতেছে? আমরা না তাহাকে ভালোবাসি, আর না তাহাকে সম্মান করি। তারপর সেই খবীস এই কবিতা আবৃতি করিল-

অর্থঃ আমর ইবনে মুররাহ এমন কথা লইয়া আসিয়াছে যাহা মীমাংস প্রিয় ব্যক্তির কথা হইতে পারে না। আমার ধারণা যে, তাহার কথা ও কাজ দেরীতে হইলেও একদিন গলার কাঁটা হইবে। সে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে বোকা প্রমাণ করিতে চাহিতেছি যে এমন কাজ করিবে সে কখনও সফলকাম হইবে না।

হযরত আমর (রাঃ) বলেন, (আমি তাহার এই সকল কথার জবাবে বলিলাম,) আমাদের উভয়ের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী হয় আল্লাহ যেন তাহার জীবনকে তিক্ত করিয়া দেন এবং তাহাকে বোবা ও অন্ধ করিয়া দেন।

বর্ণনাকারী বলেন, খোদার কসম, মৃত্যুর পূর্বেই সেই খবীসের সমস্ত দাঁত পড়িয়া গিয়াছিল এবং সে অন্ধ ও পাগল হইয়া গিয়াছিল। কোন প্রকার খাদ্যদ্রব্যেই সে স্বাদ পাইত না।

অতঃপর হযরত আমর (রাঃ) আপন কওমের যাহারা মুসলমান হইয়াছিল তাহাদিগকে লইয়া রওয়ানা হইলেন এবং তাহারা নবী কারীম (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হইলেন। তিনি

তাহাদিগকে দীর্ঘ হায়াতের দোয়া দিলেন, মারহাবা দিলেন এবং তাহাদিগকে একটি পত্র লিখিয়া দিলেন, যাহা নিম্নরূপ ছিল-

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

ইহা মহাপরাক্রান্ত আল্লাহর পক্ষ হইতে তাঁহার সেই রাসূলের ভাষায় (লিখিত) একটি পত্র যিনি সত্য, হক ও হক কথা বলে এমন কিতাব লইয়া আসিয়াছেন। এই পত্র জুহাইনা ইবনে যায়েদ গোত্রের নামে আমর ইবনে মুররাহ হাতে দেওয়া হইল। (তোমাদের এলাকার) নিচু ও সমতল ভূমি এবং উপত্যকার নিম্নরূপ ও উপরিভাগের সকল স্থানে তোমাদিগকে অধিকার দেওয়া হইল। যেখানে ইচ্ছা হয় তোমাদের পশু চরাইতে পারিবে এবং পঞ্চমাংশ পরিশোধ করিতে থাকিবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করিবে এবং ভেড়া ও বকরীর দুই পাল যদি একত্র করা হয়, (যাহার সংখ্যা একশত বিশের অধিক কিন্তু দুইশতের কম হয়) তবে (এক্ত্রিত দুই পাল হইতে) দুইটি বকরী যাকাত বাবদ দিতে হইবে। আর যদি পৃথক পৃথক দুই পাল হয় (যাহার প্রত্যকটিতে চল্লিশটি করিয়া বকরী থাকে) তবে পাল প্রতি একটি করিয়া বকরী যাকাত বাবদ আদায় করিতে হইবে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বা পানি টানার কাজে ব্যবহৃত পশুর উপর কোন যাকাত নাই। আল্লাহ তায়ালা ও উপস্থিত সমগ্র মুসলমান এই অঙ্গীকার পত্রের উপর সাক্ষী রহিল। বকলম, কায়েস ইবনে শাম্মাস। (কানযুল উম্মাল)

হযরত আমর ইবনে মুররাহ জুহানী (রাঃ) কর্তৃক নিজ কওম কে দাওয়াত প্রদান – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।