হযরত আমর ইবনে ওসমান মক্কী (রঃ) – পর্ব ১
বিশ্ব-নন্দিত তাপস হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর সুযোগ্য মুর্শিদ ছিলেন হযরত ওসমান মক্কী (রঃ)। বায়তুল্লাহ শরীফে তিনি দীর্ঘ দিন এতেকাফে ছিলেন বলে তাঁকে পীরে হরম খেতাব দেওয়া হয়। তিনি প্রখ্যাত তাপস হযরত আবু সাঈদ খাযযাব (রঃ)-এর সংস্পর্শেও আসেন। মক্কায় ও গান-সাধকগণ বসবাস করতেন, তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যমণি। তরীকতের ওপর অমূল্য গ্রন্থ রচনা করে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। সুফী-সাধক হিসেবে তাঁর শ্রেষ্ঠ বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে।
বহু জ্ঞানী ব্যক্তি মনে করেন, হযরত হুসাইন ইবনে মানসুর হাল্লাজের জীবনের যে মর্মান্তিক পরিণতি দেখা দেয়, তা মূলে ছিল হযরত আমর ইবনে ওসমান (রঃ)-এর অভিশাপ। কিন্তু সে অভিসম্পাতের কারণ কি?
একদিন হযরত হুসাইন ইবনে মানসুর হাল্লাজ (রঃ) কিছু লিখলেন হযরত আমর (রঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি অমন বিভোর হয়ে কি লিখছেন? জবাবে হযরত হুসাইন বলেন, এমন কিছু যা কুরআনের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পার। কথাটি খুবই মারাত্মক। এ ধষ্টতা সহ্য করতে না পেরে হযরত আমর (রঃ) তখনই আল্লাহর দরবারে তাঁর প্রতি বদদোয়া করেন।
কথিত আছে, একবার হযরত আমর (রঃ) মক্কা শরীফ থেকে ইরাকের তাপস মণ্ডলীকে যেমন- হযরত জুনায়েদ (রঃ), হযরত শিবলী (রঃ), হযরত হারীরী (রঃ) প্রমুখকে একখানি চিঠি দেন। তিনি লিখেন যে, যারা পবিত্র কাবা শরীফের সৌন্দর্য দেখতে চায়, তাদের বলুন নিজেদের রিপুকে ছাঁটাই না করে তা দেখতে পাবে না। আর যারা বায়তুল্লাহ যিয়ারত করে আল্লাহ নৈকট্য লাভের প্রত্যাশী, তাদেরও বলে দিন আত্মাকে নিধন না করে কখনও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না। আর এ পথের পথিকদের এ কথাও জানা দরকার যে, এ পথে দু’হাজার বিশাল আগ্নেয় পর্বত ও এক হাজার অতল গভীর সমুদ্র আছে। যারা তরীকতে পথে যেতে চায়, তাদের এই বিপজ্জনক বাঁধাগুলি অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে। যারা তা করতে সক্ষম, একমাত্র তারাই যেন এ পথে অগ্রসর হয়।
ইরাকে চিঠি পৌঁছল। আর হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) দেশের সমস্ত সাধককে এক জায়গায় মিলিত করলেন। সাধক সমাবেশ হিজায থেকে আগত হযরত আমর (রঃ)-এর চিঠি পাঠ করা হল। তারপর দু’হাজার আগ্নেয় পর্বতের মর্তোদ্ধারের জন্য সবাইকে বলা হল। সকলে এই অভিমত প্রকাশ করলেন যে, আগুনের পাহাড়ের অর্থ হল, নিজের আত্মাকে দু’হাজার বার বিলীন করা ও প্রকাশ করা। এভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করে তবেই এ পথে পা বাড়াতে হবে। না হলে আল্লাহর মহান দরবারে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) বললেন, আমি দু’হাজারের মধ্যে আজ পর্যন্ত মাত্র একটি অতিক্রম করেছি। হযরত হারীরী (রঃ) বললেন, ধন্যবাদ। আমি ওপথে মাত্র তিন পা এগিয়েছি। হযরত শিবলী (রঃ) বললেন, আপনারা দু’জনেই সৌভাগ্যবান। আর আমি এমনই হতভাগ্য যে, আজ পর্যন্ত এ পথ দূর থেকে দেখারও যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আমর ইবনে ওসমান মক্কী (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন