হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ৩

হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ২   পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

একবার হযরত আবু ওসমান (রঃ) বলেন, মানুষের মঙ্গলের জন্য তিনি কিছু উপদেশ দিতে চান। আবু ওসমান (রঃ) তাঁকে এও বলেন যে, মানুষের প্রতি তাঁর অসীম মমতা। এমনকি, জাহান্নাম থেকে মানুষকে বাঁচাতে তিনি নিজে শান্তি গ্রহণ করতেও রাজি।

হযরত আবু হাফস (রঃ) তাঁকে বলেন, অন্যকে উপদেশ দেওয়ার আগে উপদেশ নিতে হবে। এ ব্যাপারে খুব সতর্ক হওয়াও জরুরী। যেমন, বক্তৃতার সময় শ্রোতার সংখ্যা যদি খুব বেশী হয়, তাহলে মনে যেন এতটুকু অহমিকা না জন্মে। সব সময় মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ সর্বদশী।

এরপর একদিন সত্যিই এক বিশাল সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য গেলেন আবু ওসমান (রঃ)। আএ ঐ সমাবেশে হযরত হাফস (রঃ) ও গোপনে বসে রইলেন। বক্তৃতা শেষ হল। মিম্বর থেকে হযরত ওসমান (রঃ) নেমে আসবেন, এমন সময় একটি লোক দাঁড়িয়ে সভায় একখানি কাপড় চাইল। আবু ওসমান (রঃ) তৎক্ষণাৎ তাঁর গায়ের চাদরখানি তাকে দান করলেন। আর যায় কোথায়। হঠাৎ হযরত হাফস (রঃ) তাঁর কাছে এসে ধমক দিলেন, নেমে এস মিম্বর থেকে তুমি এখনও মানুষকে নসীহত করার যোগ্যতা অর্জন করনি। আবার তুমি দাবী কর, মানুষের প্রতি তোমার প্রচুর ভালোবাসা। তোমার দাবী যদি সত্য হত, তাহলে চাওয়ামাত্র অত তাড়াতাড়ি লোকটিকে তুমি চাদরখানা দান করতে না। তার মানে, অন্য কাউকে এ কাজ করার তুমি সুযোগই দিলে না। অগ্রগামী দাতা হিসেবে তুমি পুণ্যের অধিকারী হাতে চাইলে। প্রকৃতই তুমি যদি মানবদরদী হতে, তাহলে এ ব্যাপারে একটু সবুর করে অন্য কাউকে অগ্রবতী দাতা হওয়ার সুযোগ দিতে।

হযরত আবু হাফস (রঃ) আরবী জানতেন না। কেননা, তিনি ছিলেন খোরাসানের লোক।

একবার কিছু শিষ্যসহ হজ্ব সম্পন্ন করে তিনি বাগদাদে যান। তাঁর সঙ্গীরা বলেন, সঙ্গে একজন দোভাষী থাকলে কথাবার্তা বলার বেশ সুবিধা হত। ওদিকে তাঁকে নিজের দরবারে স্বাগত জানাবার জন্য কয়েকজন শিষ্যকে পাঠিয়ে দিয়েছেন হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)। হযরত হাফস (রঃ) তাঁদের সঙ্গে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর দরবারে গেলেন। আএ সেখানে পৌঁছে অনায়াসে ভঙ্গিতে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর সঙ্গে আরবী ভাষায় অনর্গল কথা বলে গেলেন। যেন আরবী তাঁর মাতৃভাষা। আর এই অলৌকিক কাণ্ড দেখে সবাই তাজ্জব বনে গেলেন।

আর একবার হযরত জুনায়েদ (রঃ) ও হযরত হাফস (রঃ)-এর মধ্যে কথাবার্তা চলছে। সেখানে উপস্থিত আছেন বিশিষ্ট কিছু লোক। কথা বলার ফাঁকে তাঁরা হযরত হফাস (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন গুণের মধ্য দিয়ে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়? তিনি তখন হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, কোন লোক কোন বীরত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে যেন ধারণা না করে যে, কাজটি তার দ্বারা সাধিত হয়েছে। আর সে যে এ ব্যাপারে দুঃসাহস দেখিয়েছে, সে কথা সে যেন নিজের মুখে প্রকাশ না করে। অর্থাৎ বীরত্বপূর্ণ কাজটির সঙ্গে সে যে সংশ্লিষ্ট, তা কোন রক্ষণাদির দারাই যেন প্রকাশ না পায়। এটাই মানুষের প্রকৃত বীরত্ব।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ খোরাসানী (রঃ) – পর্ব ৪   পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।