হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ ) এর কষ্ট সহ্য করা – ২য় পর্ব
হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ ) এর কষ্ট সহ্য করা – ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
(সকালবেলা) হযরত আবু যার (রাঃ) নির্দেশ মোতাবেক কাজ করিলেন এবং হযরত আলী (রাঃ) অনুসরণ করিয়া চলিলেন। অবশেষে হযরত আলী (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহহি ওয়াসাল্লামের ঘরে প্রবেশ করিলেন এবং সঙ্গে হযরত আবু যার (রাঃ) ও প্রবেশ করিলেন। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহহি ওয়াসাল্লামের কথাবার্তা শুনিয়া সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করিলেন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহহি ওয়াসাল্লাম তাহাকে বলিলেন, তুমি নিজের কওমের নিকট ফিরিয়া যাও এবং তাহাদিগকে সকল বিষয়ে অবগত কর। তোমার নিকট আমার নির্দেশ পৌঁছা পর্যন্ত তুমি সেখানেই অবস্থান কর। হযরত আবু যার (রাঃ) বলিলেন, সেই পাক যাতের কসম, যাহার হাতে আমার প্রাণ রহিয়াছে, আমি কাফেরদের মাঝে উচ্চস্বরে কলেমায়ে তাওহীদের ঘোষণা দিব। তিনি সেখান হইতে বাহির হইয়া মসজিদে আসিলেন এবং উচ্চস্বরে ঘোষণা দিলেন, আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ। মুশরিকগণ এই আওয়াজ শুনিবামাত্র উঠিল এবং তাহাকে মারিতে মারিতে শোয়াইয়া ফেলিল।
এমন সময় হযরত আব্বাস (রাঃ) সেখানে আসিলেন এবং (তাহাকে বাঁচাইবার জন্য) তাঁহার উপর শুইয়া পড়িল বলিলেন, তোমাদের নাশ হউক! তোমরা কি জাননা যে, এই ব্যক্তি গিফার গোত্রের লোক? সিরিয়ার পথে তোমাদের বাণিজ্য কাফেলাকে তাহাদের নিকট দিয়া অতিক্রম করিতে হয়? এইভাবে হযরত আব্বাস (রাঃ) তাহাকে মুশরিকদের হাত হইতে মুক্ত করিলেন। পরদিনও হযরত আবু যার (রাঃ) এইরূপ করিলেন এবং কাফেরগণ তাঁহার উপর ঝাঁপাইয়া পড়িয়া তাহাকে মারধর করিল, আর হযরত আব্বাস (রাঃ) তাঁহার উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া তাহাকে বাঁচাইলেন।
ইমাম বোখারী (রঃ) হইতে অপর এক রেওয়ায়াতে আছে যে, হযরত আবু যার (রাঃ) বলিলেন, হে কোরাইশগণ, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই এবং সাক্ষ্য দিতেছি যে, (হযরত) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাহহি ওয়াসাল্লাম) তাঁহার বান্দা ও রাসূল। মুশরিকগণ বলিল, এই বেদ্বীনকে ধর। তাহারা উঠিয়া আমাকে এমন মার মারিল যে, আমি মৃত্যুর মুখে পৌছিয়া গিয়াছিলাম।
হযরত আব্বাস (রাঃ) আমার সাহায্যে আগাইয়া আসিলেন এবং আমার উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া লোকদেরকে বলিলেন, তোমাদের নাশ হউক, তোমরা একজন গিফার গোত্রীয়কে হত্যা করিতেছি? অথচ গিফার গোত্রের উপর দিয়াই তোমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের পথ। হযরত আব্বাস (রাঃ) এর এই কথার পর লোকেরা আমার নিকট হইতে সরিয়া গেল। পরদিন সকালবেলা আমি পুনরায় পূর্বের ন্যায় কলেমায়ে শাহাদাতের ঘোষণা দিলাম। লোকেরা বলিল, ধর এই বেদ্বীনকে। সুতরাং গতকল্যের ন্যায় আজও আমার সহিত একই ব্যবহার করা হইল, আর হযরত আব্বাস (রাঃ) আমার সাহায্য আগাইয়া আসিলেন এবং আমার উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া লোকদেরকে পূর্বের ন্যায় বলিলেন।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ ) এর কষ্ট সহ্য করা – ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন