হযরত আবু বকর (রাঃ)- এর জীবনে যবনিকা –শেষ পর্ব
হযরত আবু বকর (রাঃ)- এর জীবনে যবনিকা –পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ গুরুদায়িত্ব পালনের পর প্রথম খলিফা তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষায়াদির প্রতি মনোযোগ দেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) কে তিনি একটি জায়গীর প্রদান করেছিলেন। অন্তিম সময় তাঁর খেয়াল হল যে, অন্য উত্তরাধিকারীদের অধিকার নষ্ট হয়েছে। তাই তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, স্নেহপ্রতিম! অভাব স্বচ্ছল সকল অবস্থায়ই তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয় সন্তান।
কিন্তু তোমাকে আমি যে জায়গীর প্রদান করেছিলাম তাতে তুমি তোমার সকল ভাই-বোনদের অংশীদার করে নেবে? হযরত আয়েশা (রাঃ) এ প্রস্তাবে সম্মতি দিলেন। তারপর বায়তুল মালের ঝণ সম্পর্কে অসিয়ত করলেন এবং বললেন, আমার কাছে মুসলমানদের কোন সম্পদ নেই। মাত্র একজন দাসী ও দুটি উটনী আছে। আমার এন্তেকালের পরই এগুলো হযরত ওমর (রাঃ) এর কাছে পাঠিয়ে দেবে। তাঁর নির্দেশ মোতাবেক এগুলো হযরত ওমর (রাঃ) এর কাছে পাঠানো হয়েছিল।
হযরত আয়েশা (রাঃ) এর জবানীতে জানা যায় যে, তিনি প্রথম খলিফা আরও বলেছিলেন, আমার দাফন শেষ হয়ে যাওয়ার পর তোমরা তালাশ করে দেখ বায়তুলমালের অন্য কোন সম্পদ আমার কাছে রয়েছে কি না! যদি কিছু থাকে তবে তা হযরত ওমর এর কাছে পাঠিয়ে দেবে। হযরত আবু বকর (রাঃ) মৃত্যুর পর তাঁর বাসগৃহ তালাশ করে রাষ্ট্রের কোন কিছুই পাওয়া যায়নি। রোগশয্যায় তাঁর পরিধানে যেসব কাপড় ছিল সেগুলোই ধুয়ে কাফন দেয়ার জন্য তিনি উপস্থিত সকলকে বললেন, হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, এগুলো তো পুরাতন।
কাফনের জন্য নতুন কাপড় দরকার। তিনি এরশাদ করলেন, নতুন কাপড়ে মৃতদের চেয়ে জীবিতদেরই হক বেশি। আমার পুরাতন কাপড়ই যথেষ্ট। এ আলোচনার পর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সেদিন কি বার? সমবেত লোকজণ জানালেন, সেদিন সোমবার। পুনারায় জিজ্ঞেস করলেন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের দিন কি বার ছিল? সমবেত লোকজন জানালেন, সোমবার ছিল।
তিনি তখন বললেন, তাহলে আমার বাসনা, আজ রাতেই যেন এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যাই। তাঁর অন্তিম ইচ্ছা আল্লাহ্ পূরণ করে দেন। সোমবার দিন শেষে মঙ্গলবার রাত্রিশ তেষট্টি বছর বয়সে হিজরীর জমাদিউল আখের মাসের শেষাংশে ৬৩৪ ঈসায়ী সনের ২৩ শে আগস্ট জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৫ দিন রোগাক্রান্ত থাকার পর হযরত আবু বকর (রাঃ) ইহলোক ত্যাগ করেন।
তাঁর ইচ্ছাঅনুসারে রাতেই দাফন করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর বিবি হযরত আসমা (রাঃ) বিনতে আসীম তাঁর গোছল দেন। হযরত ওমর ফারুখ (রাঃ) তাঁর জানাযার নামায পড়ান। হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রাঃ) হযরত তালহা (রাঃ) হযরত আবদুর রহমান (রাঃ) ইবেন আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত ওমর ফারুখ (রাঃ) তাঁর লাশ কবরে রাখেন। সরওয়ারে দু’জাহানের প্রিয় সহচরকে তারই পাশে সমাহিত করা হয়।
হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন খুবই সর্তক। এ কারণে অন্যান্যদের তুলনায় তাঁর হাদীস সংখ্যা খুবই সীমিত। তাঁর থেকে ইবনে ওমর, ইবনে আমর, ইবনে আব্বাস, হুযাইফা, যায়েদ ইবনে সাবিত, উকবা, আবু বারায়া আবু মুসা তাঁর কন্যা আয়েশা ও আসমা (রাঃ) আনহুমা হাদীস বর্ণনা করেছেন। বিশিষ্ঠ তাবেয়ীরাও তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হযরত আবু বকর (রাঃ)- এর জীবনে যবনিকা –পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন