হযরত আবু বকর কেতানী (রঃ) – পর্ব ১
হযরত শায়েখ আবু বকর কেতানী (রঃ) মক্কা শরীফে বসবাস করতেন। আল্লাহর সেরা আবেদ রূপে তিনি সুবিদিত। গূঢ়-তত্ত্বে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর ছিল দয়ার্দ্র চিত্ত। তাঁর দানশীলতা কোন তুলনা ছিল না। তিনি হযরত জুনায়েদ বাগাদাদী (রঃ), হযরত আবু সাঈদ খায়যর (রঃ) ও হযরত নূরী (রঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেন। তাঁকে বলা হত হেরেম শরীফের প্রদীপ।
কথিত আছে, তিনি এশা থেকে ফজর পর্যন্ত নফল নামাজে রত থাকতেন। ঐ নামাজে প্রতিরাতে একবার করে কুরআন পাক খতম করতেন। শোনা যায়, ত্রিশ বছরের মধ্যে তিনি মোট বারো হাজার বার কাবা শরীফ তওয়াফ করেন। আর ত্রিশ বছর ধরে হেরেম শরীফের একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে থাকতেন। ঐ ত্রিশ বছর কাটে বিনিদ্রা অবস্থায়।
প্রথম জীবনে মায়ের অনুমতি নিয়ে তিনি হজ্জে যান। পথে ঘটনাক্রমে তাঁর স্নান অবশ্য করণীয় হয়ে ওঠে। তাতে তাঁর ধারণা হল, মা অনুমতি দিলেও হয়ত তা খুশী মনে দেননি। ফলে তিনি বাড়ী ফিরে আসেন। এসে দেখেন, মা দরজায় বসে আছেন বিষণ্ণ মনে। তিনি মাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আমাকে হজ্জে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন? মা বললেন, দিয়েছিলাম, তবে তুমি যে কোঠায় থাকতে, সেখানে গিয়ে তোমাকে দেখতে না পেয়ে আমার হৃদয় একেবারে শূন্য মনে হয়। কিছুতেই মনে শান্তি ফিরে এল না।
তখন সেই শূন্য ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, যতদিন তুমি বাড়ী না ফিরবে, ততদিন আমি আর ঘরে ঢুকবো না। সেদিন থেকে আমি বাইরেই বসে আছি। মায়ের কথায় তিনি বুঝতে পারলেন মাকে এভাবে একা ফেলে রেখে হজ্জে যাওয়া তাঁর মোটেই ঠিক হয়নি। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, যতদিন মা বেঁচে থাকবেন, তিনি আর হজ্জে যাবেন না। আর শুরু করলেন মায়ের সেবা-পরিচর্যা।
মায়ের মৃত্যুর পর হজ্জ যাত্রায় আর বাঁধা রইল না। তিনি হজ্জে গেলেন। পথে যেতে যেতে এক মাঠে দেখলেন, এক দরবেশ হাসাহাসি করছেন। তিনি তাঁকে বললেন, আপনি না মৃত, অথচ এভাবে হাসছেন, এর রহস্য বুঝতে পারলাম না। দরবেশ বললেন, আল্লাহর প্রেমের ধারাই এরূপ। আল্লাহ প্রেমীগণ মরেও অমর।
হযরত আবুল হাসান মুযাইয়ান (রঃ) মনে মনে ভাবতেন, তিনি যখন খুব বড় একজন দরবেশ, তখন আল্লাহর ওপর নির্ভর করে পাথেয় ছাড়াই হজ্জে যাওয়া উচিত। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সত্যিই তিনি হজ্জ যাত্রায় বেরিয়ে পড়লেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া