হযরত আবু ইয়াকুব ইবনে ইসহাক নহর জওয়ান (রঃ) – শেষ পর্ব
হযরত আবু ইয়াকুব ইবনে ইসহাক নহর জওয়ান (রঃ)-এর তত্ত্বকথাসমূহঃ
১. দুনিয়া একটি দরিয়ার মতো-যার শেষ প্রান্তে পরকাল। সমস্ত লোকই হল মুসাফির আর ঐ দরিয়া পাড়ি দেয়া তরণী হল তাকওয়া, ধর্মভীরুতা।
২. যেব্যক্তি খেয়ে তৃপ্ত, তার ক্ষুধা কোনদিন মেটে না। যে পার্থিব ধনে ধনী, সে সব সময়েই গরীব। যেব্যক্তি লোকের নিকট নিজের অভাব প্রকাশ করে, সে কিছু পায় না, আর যেব্যক্তি নিজের কাজে আল্লাহর সাহায্য না চায়, সে সর্বদা লাঞ্চিত হয়।
৩. তুমি যে নেয়ামতের শোকর করবে, তার ধ্বংস নেই। যে ধনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, তার সে ধনের স্থায়িত্ব নেই।
৪. দাস যখন প্রকৃত ঈমান পূর্ণ হয়, তখন তার নিকট বিপদও নেয়ামতে পূর্ণ হয়।
৫. প্রকৃত সংযম চারটি। যথাঃ (১) অল্প আহার করা, (২) অল্প কোথা বলা, (৩) অল্প শয়ন করা, (৪) রিপুর কামনা ত্যাগ করা।
৬. মানুষ যখন আল্লাহতে বিলীন হয়, তখন আল্লাহর সঙ্গে সে জীবিত হয়ে থাকে। আর এ জন্যই কোন কোন সাধক আনাল হক বা আমিই আল্লাহ বলে গিয়েছেন।
৭. যেব্যক্তি সেবা-পরিচর্যায় আনন্দ প্রকাশ না করে এবং ফানা ও বাকা উভয় অবস্থায় সেবার ধরণ ঠিক না রাখে, সে নিজের দাবীতে মিথ্যাবাদী।
৮. আনন্দ তিন প্রকার। যথাঃ (১) আল্লাহর এবাদতে মনের এবং (২) আল্লাহর স্মরণে ও (৩) দুনিয়া ভুলে যাওয়ার যে আনন্দ সেই আনন্দ। এই তিন প্রকার আনন্দ যে লাভ করে, সে সর্বদা আল্লাহর এবাদতে মশগুল থেকে দুনিয়া ত্যাগী হয়ে যায় এবং বিশ্ব-জগত তাকে মন্দ মনে করতে থাকে।
৯. উত্তম আমল সেটিই, যার সঙ্গে জ্ঞান ও বিদ্যার সম্পর্ক থাকে।
১০. তত্ত্বজ্ঞানী তিনটি বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন না। তা হল, বিদ্যাচর্চা ও খেলওয়াত। কেননা, এ তিনটির সঙ্গে যিনি সম্পর্ক ছিন্ন করেন, তিনি কখনও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন না। সেহেতু তার অন্য কিছুর জন্য অনুশোচনাও থাকে না।
১১. নির্ভরশীলদের রুজি আল্লাহর নিজের জিম্মায় থাকে। বিনা পরিশ্রমে তারা তা আল্লাহর ধনভাণ্ডার থেকে পেয়ে যান।
১২. এলমে হাকীকী সেই বস্তু, আল্লাহ হযরত আদম (আঃ)-কে যা শিক্ষা দেন।
১৩. পার্থিব শান্তি ও অশান্তি থেকে বেপরোয়া ব্যক্তিই প্রকৃত মুহাওয়াক্কিল। হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (আঃ)-ই প্রকৃত তাওয়াক্কুল লাভ করেন। কেননা, তিনি ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) থেকে সাহায্য কামনা করেননি।
১৪. নির্ভরশীল ব্যক্তির বিশ্বাস ও নির্ভরতা যখন প্রবল আকার ধারণ করে তখন তাকে আগুনে নিক্ষেপ করলেও সে আগুনের দহনজ্বালা অনুভব করে না।
১৫. হযরত ইয়াকুব (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় কি? তিনি বলেন, মুর্খদের থেকে দূরে থাকা, আলেমদের সঙ্গ অবলম্বন করা, জ্ঞান অনুযায়ী চর্চা করা ও আল্লাহর ধ্যানে সময় ব্যয় করা।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আবু ইয়াকুব ইবনে ইসহাক নহর জওয়ান (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন