হযরত আবু আলী জুরজানী (রঃ)
হযরত আবু আলী জুরজানী (রঃ) প্রখ্যাত তাপস হযরত হাকীম তিরমিজি (রঃ)-এর সুযোগ শিষ্য ছিলেন। খোরাসানের পরম সম্মানিত এই সাধক তাপস-দরবেশগণের মধ্যে ছিলেন আদর্শস্থানীয়। তাঁর অমূল্য বাণী মানুষকে আলোর পথে পরিচালিত করে।
তিনি বলতেন। যথাঃ
১. তওহীদের তিনটি গ্রস্থি আছে। যথাঃ ভয়, আশা ও প্রেম। ভয় থাকলে অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দূর হয়। জান্নাতের আশায় পুণ্য কর্ম বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। আর প্রেম যিকিরে উদ্বুদ্ধ করে। তা ছাড়া আল্লাহর ভয়ে ভীত ব্যক্তি শোক-দুঃখের আধিক্যকে পরোয়া করে না। আশা পোষণকারী কখনও উদ্দেশ্য সাধনের পথ থেকে ফিরে আসে না। আল্লাহ-প্রেমীগণ কখনও আল্লাহর যিকির হ্রাস করে না।
২. আল্লাহ-ভীতি আগুন সদৃশ, যা মনের মন্দ কামনাকে পুড়িয়ে দেয়। আল্লাহর দীদার আর জান্নাতের আশা এক জ্যোতি সদৃশ, যা অন্তরকে আলোকিত করে, আর প্রেম যেন সেই জ্যোতির ওপরে জ্যোতি।
৩. সৌভাগ্যবানদের নিদর্শন হল, তাঁরা এবাদত খুবই সহজ মনে করেন। সুন্নাতের অনুসরণকেও প্রদর্শন করেন। অভাবগ্রস্তদের দান করেন। মুসলমানদের সাহায্য করেন এবং সময়ের অপচয় না করে প্রতিটি মুহূর্তে জন্য কর্মে অতিবাহিত করেন।
৪. মানুষ যে পাপের কথা জানে না তাদের নিকট তা প্রকাশ করা উচিত নয়।
৫. প্রকৃত তাপস তিনিই, যিনি নিজের অবস্থার বিলুপ্তি হয়ে আল্লাহর যিকির দ্বারা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আর তিনিই তত্ত্বজ্ঞানী, যিনি নিজের মনকে আল্লাহর এবাদতে নিয়োজিত রেখে দেহকে সৃষ্টি সেবা নিযুক্ত রাখেন।
৬. আল্লাহ সম্বন্ধে উত্তম ধারণা জন্মানোই মারেফাতের চরম অবস্থা। আর নিজ প্রবৃত্তির সঙ্গে সন্দেহ ও সতর্কভাব দেখানো মারেফাতের মূল।
৭. আল্লাহ পাকের দরজায় দৃঢ় আশা নিয়ে স্থায়ীভাবে পড়ে থাকবে। কোন না কোন সময়ে আল্লাহর দরজা অবশ্যই উন্মুক্ত হবে।
৮. তোমরা অলৌকিকতার প্রত্যাশী না হয়ে অবিচলতা অবলম্বন কর। কেননা, অলৌকিকতা কামনা করে নফস আর অবিচলতা পছন্দ করেন আল্লাহ।
৯. আনুগত্য দাসত্বের আবাসস্থল। সবর তার দরজা। মৃত্যু যার দ্বারদেশে দণ্ডায়মান। ঐ ঘরে রয়েছে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য এবং কোঠাগুলিতে রয়েছে শান্তি।
১০. তিনি বলেন, বোখল বা কৃপনতার মধ্যে রয়েছে তিনটি হরফ। যথাঃ বা-তার দ্বারা বোঝা বার বালা-মসিবত বা বিপদ-আপদের কথা। খা- দ্বারা বোঝা যায় ক্ষয়-ক্ষতি আর লাম দ্বারা বোঝা যায় লানত বা অভিশাপের কথা।