হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া এর পৃথিবীতে অবতরণ-২য় পর্ব
তাই তিনি দুহাত তুলে বললেন, হে প্রভু! তোমার নামের সাথে মোহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ লেখা যে নামটি দেখছি, সে নামের বরকতে তুমি আমার অপরাধ ক্ষমা কর। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে হযরত জিব্রাইল (আঃ) সেখানে হাজির হয়ে হযরত আদম (আঃ)-কে বললেন, এবার আপনি যে নামের বরাত দিয়ে আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তাতে আপনার জীবনের সব গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিয়েছেন। বেহেস্তে বসে যদি এ নামের ঊছিলা ধরে আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তাহলে আপনাকে আর পৃথিবীতে আসতে হত না। যদি একান্ত আসতে হত তাহলে রাজার বেশে আসতেন ভিখারীর বেশে নয়।
হযরত জিব্রাইল (আঃ) হযরত আদম (আঃ)-কে বললেন, এখন আল্লাহ্র দরবারে শোকর আদায়ের উদ্দেশে কাবাঘর জিয়ারত ও হজ্জ সমাধা করুন। এখানে আপনি কতদিন থাকবেন তা কেউ জানে না। অতএব এখানের সর্ব বৃহৎ নেয়ামত হল বাইতুল্লাহ জিয়ারত ও হজ্জ আদায়। হযরত আদম (আঃ) জিব্রাইল (আঃ) এর কথায় তাই আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে ক্রমে প্রথমে জিব্রাইল (আঃ) কে নিয়ে কাবাঘর সংস্কারের কাজে হাত দিলেন। অল্প দিনের মধ্যে কাবাঘরের সংস্কার সম্পন্ন হলে হযরত জিব্রাইল(আঃ)-এর সহায়তায় হজ্জ সমাধা করেন।
হজ্জ সমাধার পরে আল্লাহ তায়ালা জিবরাইলকে বললেন তুমি হযরত আদম (আঃ)-কে নিয়ে আরাফাতের নিকটবর্তী ‘ওয়াদীয়ে নোমান’ নামক স্থানে চলে যাও। সেখানে পৌঁছে তোমার পাখা হযরত আদম (আঃ)-এর পৃষ্টে ঘসে দাও। হযরত জিব্রাইল (আঃ) যখন হযরত আদম (আঃ)-কে নিয়ে যথাস্থানে পৌঁছালেন এবং নিজ পাখা দিয়ে তাঁর পিঠ স্পর্শ করলেন তখন পিপীলিকার ন্যায় অসংখ্য বনী আদম এর রুহ পিঠ থেকে বের হয়ে ময়দান পরিপূর্ণ হতে আরম্ভ করে। তখন হযরত আদম (আঃ) জিজ্ঞেস করেন এরা কোন জাতির প্রানী।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর উত্তরে বলেন, এরা সকলে বনী আদম, তোমার নছল থেকে পৃথিবীতে যে সব মানুষ আসবে তাঁর রূহগুলো একত্রিত করে তোমাকে দেখানো হচ্ছে। হযরত আদম (আঃ) বললেন, আমার এত সন্তান হবে? এরা থাকবে কোথায়? পৃথিবীতে এদের সংকুলান আদৌ সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, সে ব্যবস্থা আমি পূর্বেই করে রেখেছি। কতক থাকবে পিতার পৃষ্টে, কতক থাকবে মাতৃগর্ভে। কতক থাকবে মাটির উপরে আর কতক থাকবে মাটির নিচে। অতএব হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তায়ালার নিকট জিজ্ঞেস করলেন, এদের মধ্যে প্রকারভেদ থাকবে কেমন? আল্লাহ তায়ালা বললেন, এদের মধ্যে অনেক প্রকারভেদ থাকবে।
কেউ ধনী মোমেন, কেউ ধনী কাফের, কেউ গরীব মোমেন, কেউ গরীব কাফের। কেউ প্রথম জীবনে মোমেন শেষ জীবনে কাফের আবার কেউ প্রথম জীবনে কাফের শেষ জবনে মোমেন। এ ছাড়া কতক দোযখের আজাজব ভোগ করার পরে বেহেস্ত লাভ করবে। হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তায়ালার নিকট তাঁর সন্তানদের মধ্যে মোমেন ও কাফেরের সংখ্যা দেখার আবেদন জানালেন। তখন হযরত আদম (আঃ)-কে দাঁড় করিয়ে তাঁর দান পাশে ও বাম পাশে হযরত আদম (আঃ) এর সন্তানদেরকে বিভক্ত করার জন্য জিব্রাইল(আঃ) কে হুকুম দিলেন।
জিব্রাইল(আঃ) বনী হযরত আদম (আঃ)-কে দুভাগে ভাগ করলেন। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমার ডান পাশের সন্তানেরা মোমেন এবং বাম পাশের সন্তানেরা কাফের। হযরত আদম (আঃ) তাঁর সন্তানদের মধ্যে অধিক সংখ্যক কাফের দেখে কেঁদে দিলেন এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমার সন্তানদের মধ্য থেকে অধিক সংখ্যক যাতে ইমানদার হতে পারে সেজন্য আমি তোমার আওলাদের মধ্য থেকে অধিক নবী সৃষ্টি করব।
অতপর আল্লাহ তায়ালা সকল বনী আদম এর নিকট এর জিজ্ঞেস করে ছিলেন, হে বনী আদম! আমি কি তোমাদের প্রভু নই? সেদিন সকলে সমস্বরে উত্তর দিয়ে ছিল হ্যাঁ, আপনি আমার প্রভু। আমরা আপনারাই তাবেদারী করব। কাউকে শরীক করব না। বনী আদম-এর এ স্বীকৃতির ভাষা সেদিন রেকর্ড করা হয় এবং নির্মিত আকারে একজন ফেরেস্তার নিকট জমা রাখা হয়। কিয়ামতের দিন সে ফেরেস্তা বনী আদম-এর রেকর্ড শুনাবেন এবং নির্মিত অঙ্গীকারপত্র প্রকাশ করবেন। যারা আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে ওয়াদা ঠিক রাখবে তাঁদেরকে বেহেস্তে প্রদান করা হবে। আর জার ওয়াদা খেলাপকারী তাঁদেরকে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া এর পৃথিবীতে অবতরণ-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন