হযরত আদম (আঃ) – এর বিবাহ-২য় পর্ব
এ সময় জিব্রাইল (আঃ) হযরত আদম (আঃ)-কে ঘুম থেকে জাগ্রত করলেন । হযরত আদম (আঃ) জাগ্রত হয়ে সম্মুখে অপরূপ সুন্দরী, চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল এক যুবতীকে দেখে তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলেন । হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন , ইনি হলেন আপনার জীবন সঙ্গিনী বিবি হাওয়া । হযরত আদম (আঃ) তাঁর জীবন সঙ্গিনীর সুসংবাদ শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন । তাঁর প্রানের যে অতৃপ্তি ছিল তা যেন নিমিষে দূরীভূত হল । হৃদয়ের মাঝে অফুরন্ত প্রেমের বান ডেকে উন্নত তরঙ্গের ন্যায় চতুর্দিকে আচড়ে পড়তে লাগল । কি যে তৃপ্তি, কি যে আনন্দ, কি যে মায়া তখন তাঁর অন্তরে বিরাজ করছিল তাঁর বর্ণনা দেয়া করো পক্ষে কোন দিন সম্ভব নয় ।
কথিত আছে , পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা কয়েকজন নারীকে অপরূপ সৌন্দর্য দান করেছিলেন । তন্মধ্যে বিবি হাওয়ার সৌন্দর্য ছিল অন্যতম । হযরত আদম (আঃ) দীর্ঘসময় বিবি হাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার উদ্দেশে সম্মুখে অগ্রসর হলেন । তখন জিব্রাইল (আঃ) বাঁধা দিয়ে বললেন , তাঁকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার পূর্বে তাঁর নিকটবর্তী হওয়া আপনার জন্য জায়েজ নেই । অতএব প্রথমে আল্লাহ্র দরবারে বিবাহের জন্য আবেদন করুন । হযরত আদম (আঃ) জিব্রাইলের শিখানো পদ্ধতিতে হাওয়াকে বিবাহ করার জন্য আল্লাহ্র দরবারে আরজ করলেন ।
আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ)-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদম হাওয়ার বিবাহের মঞ্চ ঠিক করার জন্য ফেরেশতাগণকে হুকুম দিলেন । ফেরেশতাগণ অত্যন্ত আনন্দ সহকারে স্বর্ণ, রৌপ্য, হিরা জহরত ও মণিমুক্তা দ্বারা এক বিরাট মঞ্চ তৈরি করলেন । এ মঞ্চটি তৈরি করা হল বেহেস্তের মধ্যকার সবচেয়ে আরামের জায়গায় । তুষা নামক ছায়াদানকারী এক বিশাল বৃক্ষের নিচে সকল ফেরেশতাগণকে দাওয়াত দেয়া হল এ বিবাহ মজলিশে ।
আল্লাহ তায়ালা আরশ থেকে এ মঞ্চ পর্যন্ত সব পর্দা উঠিয়ে দিলেন । যাতে সব ফেরস্তা ও আদম-হাওয়া যেন বেহেস্তের মধ্যকার সবচেয়ে অধিক তৃপ্তিকর জিনিস আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করে অশেষ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন । অতপর আল্লাহ তায়ালার স্বয়ং সংক্ষিপ্ত খোতবা দান বিবাহের কার্জ সমাধা করে দিলেন । বিবাহের খুৎবায় আল্লাহ তায়ালা যে কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন তা সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার, গৌরব ও অহংকার তাঁর ভূষণ । নবী ও রাসুলগণ তাঁর প্রেরিত বান্দা । তাদেরকে মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে ।
হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর একান্ত বন্ধু ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল । আল্লাহ তায়ালা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন । সবাইকে শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে । ফেরেশতাগণ তাঁর আজ্ঞাবহ । যে ফেরেশতাগণকে সাক্ষী রেখে আদম ও হাওয়ার বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন করেন । তিনি এদের দ্বারা সৃষ্টির আরেক অধ্যায়ের সূচনা করলেন । এ বিবাহের মহরানা হবে দুরুদ ও তাছবীহ ।
আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই । তিনি এক তাঁর কোন শরিক নেই । অতপর আদম (আঃ)-কে বলা হল, হে আদম! তুমি ও তোমার বিবি বেহেস্তে পরম আনন্দে বসবাস কর । সেখানের ফলমূল ভক্ষণ কর । কিন্তু নির্দিষ্ট ঐ গাছটির কাছে যেওনা । যদি যাও তবে তা হবে অন্যায় ও পাপের অন্তর্ভুক্ত কাজ । অতপর তোমরা সাবধান থেক । শয়তান তোমাদর পরম শত্রু । তোমাদের উপর আল্লাহ্র বরকত ও রহমত নাযিল হোক । হযরত আদম ও হাওয়া বিবাহ অনুষ্ঠানের পরে পাঠ করলেন, হে মহান প্রভু! আমরা তোমার গুণগান করে জীবন কাটাতে চাই । তুমি মহান। তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন উপাস্য নেই । তোমার সাহায্য ছাড়া কারো রক্ষার পথ নেই । তুমি আমাদেরকে তোমার রহমতি ছায়া দান কর । আমিন ।
বিবাহের পরে হযরত আদম (আঃ) বিবি হাওয়াকে স্পর্শ করার জন্য যখন অগ্রসর হলেন, তখন তাঁকে বাঁধা দেয়া হল এবং বলা হল প্রথমে বিবির মহরানা আদায় কর তাঁর পরে তাঁকে স্পর্শ কর । তখন হযরত আদম (আঃ) বললেন, হে খোদা! আমি কি দিয়ে এ মহরানা আদায় করব । তখন তাঁকে বলে দেয়া হল, তুমি শেষ নবী মোহাম্মদ (সাঃ) –এর উপর অন্তত দশ বার
দুরুদ শরীফ পাঠ কর । তাহলে তোমার পক্ষ থেকে মহরানা আদায় হয়ে যাবে । তখন আদম (আঃ) দশ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করলেন এবং নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর কলেমা পাঠ করে তাঁর দ্বীন গ্রহণ করলেন । মানব জাতির মধ্যে সর্ব প্রথম হযরত আদম (আঃ) নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর ইমান আনেন এবং তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হন ।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী