হযরত আছিয়ার জন্মলাভ – পর্ব ১
যে সময়ের কথা বলতে যাচ্ছি, তখন মিশর রাজ্যে মোজাহাম নামে বনী ইসরাইল বংশে জনৈক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি শিক্ষা-দীক্ষা, চরিত্র এবং জ্ঞান-বুদ্ধি সর্ববিষয়ে দেশের ভিতরে যোগ্য এবং শ্রেষ্ঠ পুরুষ ছিলেন। খোদার অসীম কৃপার তাঁর পত্নীও যেমন বিদূষী তেমন সতী সাধ্বী ও বুদ্ধিমতি রমণী ছিলেন।
এরা কেবল পার্থিব বিষয় ও বুদ্ধিতেই নয় ধর্মে-কর্মেও অদ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ের লোকগণ এ দু’ ব্যক্তিকে যারপরনেই মান্য করত। কেবলমাত্র তারাই নয় পরম শত্রু কিবতী লোকেরাও এ দু’ ব্যক্তিকে অতিশয় মান্য এবং শ্রদ্ধা করত। আর্থিক অবস্থা এদের মোটামুটি ভালই ছিল। সুতরাং এ দম্পতি যুগল খোশহালেই জীবন-যাপন করছিলেন।
সর্বোপরি এদের বৈশিষ্ট ছিল এ যে, মোজাহাম ছিলেন স্বয়ং হযরত ইউসুফ (আঃ) এর জনৈক বৈমাতৃয় ভ্রাতা লেবির বংশোদ্ভূত লোক এবং তাঁর পত্নীও ছিলেন ইউসুফ (আঃ) এর অন্যতম ভ্রাতার বংশোদ্ভূতা মহিলা। এ কারণে তাঁদের উভয়ের মিশরে যথেষ্ট প্রতি বৈরীভাব প্রদর্শন করিলেও এ দম্পতির প্রতি তেমন খারাপ আচরণ কখনই করত না; বরং কিছুটা সম্ভ্রম করে চলত।
দম্পতি যুগলের বিবাহের পরে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হল কিন্তু এদের কোন সন্তান সন্ততি ভূমিষ্ঠ হল না। এতে তারা উভয়ে প্রথম দিকে তেমন অশান্তি ভোগ না করলেও কিছুদিন পরেই তাঁদের মানসিক অশান্তির বিকাশ ঘটল।
তাঁদের পরিবারে সুখের অভাব নেই। সমাজে তাঁদের যথেষ্ট প্রভাব, মান-সন্মান সকলেই বিদ্যমান কিন্তু একটি সন্তানের অভাব তাদেরকে পীড়া দিতে আরম্ভ করল।
এ অভাবের কারণ যে কে স্বামী-স্ত্রীর কার দোষে যে তারা একটি সন্তান লাভ করছেন না; তা নিয়ে উভয়ের ভিতরে মাঝে মাঝে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। মোজাহাম একদা পত্নীকে বললেন, দেখ তোমার মত হতভাগিনীকে গৃহে এনে বোধ হয় আমার বংশই লোপ পেল।
নতুবা এতদিন হয় বিবাহিত হলাম অথচ একটি সন্তানের মুখ আজ পর্যন্ত দেখতে পেলাম না। এজন্য মনের ভিতরে কত যে অশান্তি ও দুঃখ নিয়ে কাল কাটতেছি তা তুমি বুঝবে না। আমার মন কি বলছে, তা তুমি জান? তুমি না হয়ে আর কেউ যদি আমার পত্নী হত তবে হয়ত আল্লাহ্ নিশ্চয়ই এত দিনে আমাকে একটি সন্তান দান করতেন।