হযরত আইয়ুবের ধৈর্য ও শয়তানের নির্যাতন

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ শয়তান আল্লাহর দরবারে আবেদন করেছিল, হে প্রভু! আমাকে হযরত আইয়ুব (আঃ) এর উপর প্রভাব বিস্তার করার অনুমতি দিন। 

আল্লাহ্‌ বলেন, ওর সম্পদ-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততির উপর প্রভাব বিস্তার অনুমতি তোকে দেওয়া হল কিন্তু ওর দেহের উপর নয়। 

সুতরাং শয়তান তার বাহিনীকে জড়ো করে বলল, আমাকে হযরত আইয়ুব (আঃ) এর উপর কর্তৃত্ব করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা তোমাদের কৃতিত্ব দেখাও।

তখন শয়তান বাহিনী আগুনের রুপ ধরে সামনে এল।  তাঁরপর পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত পানি হয়ে বয়ে গেল।

শয়তান তখন তাঁর একটি বাহিনীকে পাঠাল তার উটগুলোর কাছে। একটা বাহিনী পাঠাল তাঁর গরুর পালের উপর।  একটা বাহিনী পাঠাল তাঁর ছাগলের পালে। তাঁরপর তাদের উদ্দেশ্য শয়তান বলল, কেবলমাত্র ধৈর্য সবর ছাড়া হযরত আইয়ুব (আঃ) তোমাদের  হাত থেকে হেফাযতে থাকতেই পারবে না। 

সুতরাং শয়তানের দলবল এরপর হযরত আইয়ুব (আঃ) এর উপর বিপদের পর বিপদ ফেলতে লাগল।  ক্ষেতের তত্ত্বাবধায়ক এসে বলল, আপনি দেখেননি, আল্লাহ্‌ আপনার ফসলের উপর আগুন নামিয়ে দিয়েছে, যা আপনার ক্ষেতের সব ফসল পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।

এরপর হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কাছে উটচালক এসে বলল, আপনি কি দেখছেন, আল্লাহ্‌ আপনার উট পালের উপর মুসীবত  নামিয়েছে, যার কারণে উটগুলো সব মারা গেছে। 

তারপর গরু ছাগলের দেখভালকারীরাও হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কাছে এসে বলল, আপনি দেখবেন চলুন, আল্লাহ্‌ আপনার গরু ছাগলের পালে দুশমন পাঠিয়েছেন, তাঁরা এ গুলোকে সাবাড় করে দিয়েছে। 

অর্থাৎ হযরত আইয়ুব (আঃ) এর তখন সব সম্পদ-সম্পত্তি শেষ হয়ে গেল।  রইলেন কেবল তিনি আর তাঁর সন্তান-সন্ততি।

শয়তান একদিন হযরত আইয়ুব (আঃ) এর সব ছেলেকে একটা বড় বাড়িতে জড়ো করল। তারপর তাঁরা সবাই যখন একসাথে খানা পিনায় ব্যস্ত হল, সেই সময় শয়তান এমন জোরে বাতাস চালাল যে, বাড়িটার থামগুলো উপড়ে গেল এবং গোটা বাড়িটা হযরত আইয়ুব (আঃ) এর ছেলেদের উপর পড়ল। 

এরপর শয়তান একটা ছেলের রুপ ধরে, কানে বালা পরে, হযরত আইয়ুব (আঃ) কাছে গিয়ে বলল, আপনি কি আপনার পালন কর্তার ব্যবহার দেখছেন? আপনার ছেলেরা সবাই যখন বাড়িতে একত্রিত হয়ে খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত ছিল, সেই সময় এবং গোটা বাড়িটা আপনার ছেলেদের উপর হুড়মুড় করে ভেঙে ফেলেছেন।  আপনি যদি ওদেরকে খাবার জিনিসপত্র আর রক্তে মাখামাখি  অবস্থায় দেখতেন,

তাহলে না জানি আপনার অবস্থা কি হত।

হযরত আইয়ুব (আঃ) জিজ্ঞাসা করেন, তুমি তখন কোথায় ছিলে।  শয়তান বলল, আমি তো ওদের সাথেই ছিলাম।

হযরত আইয়ুব (আঃ) বলে, তা তুমি কিভাবে বেঁচে গেলে। শয়তান বলল, এই এমনিই।  হযরত আইয়ুব (আঃ) বলেন, তাহলে তুই শয়তান। এরপর হযরত আইয়ুব (আঃ) বলেন, আমি এখন সেই অবস্থায় আছি, যখন আমার মা আমাকে প্রসব করেছিলেন।  একথা বলে তিনি উঠে পড়লেন।  মাথা ন্যাড়া করান।  তারপর নামাজের দাঁড়িয়ে যান। 

সেই সময় শয়তান নিজের ব্যর্থতা আর হযরত আইয়ুব (আঃ) ধৈর্য দেখে এমন ভাবে কেঁদেছিলেন যে, তার সেই কান্না আকাশ  পৃথিবীর সবাই শুনেছিল। এরপর শয়তান আসমানে গিয়ে (সেই সময় শয়তানের পক্ষে আসমানে যাবার অনুমোদন ছিল) আল্লাহকে বলে, হে প্রভু! হযরত আইয়ুব (আঃ) তো তোমার হাত থেকে নিরাপদে বেরিয়ে গেল।  এবার আপনি আমাকে খোদ ওর শরীরের উপর হামলা করার অনুমতি দিন। কেননা আপনার অনুমতি ছাড়া আমি ওর উপর চড়াও হরে পারব না। 

আল্লাহ্‌ বলেন ঠিক আছে, যা আমি তোকে ওর শরীরের উপর হামলা করার অনুমতি দিলাম।শয়তান তখন ফের হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কাছে এল তাঁর পায়ের তলায় এমন ভাবে ফুঁক দিল সে তাঁর আপাদমস্তক কেঁপে উঠল।  তাঁরপর তাঁরা সারা গায়ে ফোড়া হল। একসময় তাঁকে ছায়ের গাদায় রাখা হল। শেষ পর্যন্ত তাঁর পেটের নাড়ি-ভূড়িও বের হয়ে পড়ল।

সেই কঠিন সময়ে একজন স্ত্রী তাঁর সেবা যত্ন করতেন। একদিন তাঁর সেই স্ত্রী তাঁকে বলল, আল্লাহর কসম! আপনার সেবা যত্ন  করার ও অনাহারে থাকার কারণে আমার অত্যন্ত কষ্ট হচ্ছে। আমার যাবতীয় জিনিসপত্র অন্নের বিনিময়ে বেঁচে দিয়ে আপনাকে খাইয়েছি। আপনি দোয়া করুন না, যেন আল্লাহ্‌ আপনাকে সুস্থতা দান করেন।  কিন্তু ধৈর্য সবরের মূর্তপ্রতীক হযরত আইয়ুব (আঃ) বলেন, আমরা সত্তর বছর যাবত আল্লাহর নিয়ামতে আরাম আয়েশে ছিলাম। এখন ধৈর্য সবর করো। যাতে দুঃখ কষ্টের মধ্যেও সত্তর বছর কাটাতে পারি। সুতরাং সেই অবর্ণণীয় দুঃখ কষ্টের পরীক্ষার মধ্যেও তিনি সত্তর বছর কাটিয়ে দেন।   

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।