হজরত ঈসা (আঃ)- এর আর্বিভাব-পর্ব ৪
হজরত ঈসা (আঃ)- এর আর্বিভাব-পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আল্লাহ তোমাকে উপযুক্ত মর্যাদা দান করবে। হযরত মাইরয়াম কেঁদে কেঁদে নয় মাস কাটালেন, তাঁর পরে একদিন হঠাৎ তাঁর প্রসব বেদন শুরু হল। তখন তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে বিরাট মাঠ পাড়ি দিয়ে বাইতুল আম নামক এক স্থানে গিয়ে পৌঁছলেন, স্থানটি ছিল বাইতুল মোকাদ্দাসের থেকে বার মাইল দূরে। সেখানে পৌঁছে তিনি একটি শুকনা খেজুর গাছের নিচে বসলেন, তখন তাঁর প্রসব তীব্র হল। অল্পক্ষনের মধ্যে তিনি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। আসমান থেকে ফেরেস্তা ও হুরেরা এসে তাঁর ধাত্রির কাজ সমাধা করলেন।
ইতোমধ্যে শুকনা খেজুর গাছে পাকা খেজুর দেখা গেল এবং একটি ছোট নদী তাঁর নিকট থেকে বইতে আরম্ভ করল। খুব স্বছল ও নির্মল ছিল তাঁর পানি। ফেরেস্তারা নবজাত শিশুকে নদীর পানি দ্বারা গোছল করালেন, মারইয়াম কে নদীর পানি পান করতে দিলেন। শুকনো গাছে ধরা খেজুর এনে মারইয়াম কে খেতে দিল। এত সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে মারইয়াম এর সেবা-যত্ন চলল যাতে তিনি প্রসব যাতনা, ক্ষুধা যন্ত্রণা বা জনশূন্যতার অভাব কিছুই অনুভন করলেন না। জান্নাতি হুরেরা নদীর পানিতে ঈসা (আঃ) গোছল করিয়ে আতর গোলাপ লাগালেন, অতপর তাঁকে জান্নাতি পোশাক পরিয়ে মারইয়ামের কোলে দিলেন। ফেরেস্তারা মারইয়াম কে বললেন, আমরা
আল্লাহ তায়ালার নির্বাচিত বেহেস্তী নামে তোমার ছেলের নাম রেখে দিলাম ঈসা (আঃ)। অপলক চোখে ছেলের মুখপানে তাকিয়ে ছিলেন। এমন সময় ছেলে বলে উঠল, হে আমার প্রিয় মা! তুমি আজ পুত্রবতী হয়েছ। কিন্তু আজ তোমাকে অভিনন্দন জানানোর মত কোন আপনজন তোমার পাশে নেই। তাই আমি তোমাকে প্রথমে ছালাম দিচ্ছি। তাঁর পরে জানাচ্ছি তোমাকে অশেষ মোবারকবাদ। তুমি আমার অন্তর নিঃসসৃত সালাম গ্রহণ কর। হযরত মারইয়াম নবজাত শিশুর কথা শুনে বললেন, অ-আলাইকুমুচ্ছালাম। তিনি নবজাতের মুখে এ ধরনের কথা শুনবে তা কখনই কল্পনা করতে পারি নি। তিনি এ সমস্ত অলৌকিক ঘটনা দেখে মোহিত হলেন, এবং আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করতে লাগলেন।
ফেরেস্তা ও হুরেরা চারপাশে বসে এ দৃশ্য দেখে অবলোকন করছিলেন। এ সময় আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হযরত মারইয়ামকে বলা হল। হে মারইয়াম! এখন তুমি তোমার পূর্বে আবাস স্থলে চলে যাও। সেখানে লোকেরা যদি তোমার পুত্র সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করে তুমি তাদের কে জানিয়ে দিবে যে তুমি রোজা। অতএব আমি আজকে কার সাথে কথা বলব না। হযরত মারইয়াম আল্লাহর দির্দেশ অনুসারে বাইতুল মোকাদ্দাসের দিকে রওয়ানা হলেন। দীর্ঘ সময় পথ চলার পরে তিনি এসে পৌঁছলেন। বনি ইসরাইলের লোকেরা এ খবর জানতে পেয়ে, মজা দেখার জন্য ভিড় জমাল। কতক লোক মারইয়ামের কাছে এসে প্রশ্ন করে এর পিতা কে? মারইয়াম তাদের সাথে কোন কথা না বলে জানিয়ে দিল, আমি রোজাদার।
আল্লাহর নামে আমি রোজা মানত করেছি। অতএব কারো সাথে কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তখনকার দিনে রোজা রেখে কথা বলার বিধান ছিল না। সে অনুসারে তিনি কোন প্রশ্নের জবাব দিলেন না। তখন তাঁরা বলে উঠল মারইয়ামের অবৈধ সন্তানের গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে যাবে বলে রোজার বাহানা তুলেছে। অনেকে বলল, এছাড়া আর উপায় কি? কতক লোক মারইয়ামের প্রতি আস্থা পোষণ করত। তাঁরা ইহুদীদের এ ধরনের বিদ্রূপাত্মক কথা শুনে নিরব রইল।
তাদের নিকট কোন অকাত্য প্রামাণদী ছিল না। তাই তাঁরা নির্বাক হয়ে থাকতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ সময় মানুষেরা নানা রকম ঠাট্টা- বিদ্রূপ করে যখন খুব মজা জমিয়ে ফেলল এখন হযরত মারইয়াম কে আল্লাহ জানিয়ে দিল হে মারইয়াম! তোমার সন্তানের পরিচয় সম্বন্ধে তাঁর নিকট প্রশ্ন করতে বল, হযরত মারইয়াম আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে সকলকে জানিয়ে দিলন তোমরা সন্তানের পরিচয় সম্বন্ধে তাঁর নিকট জিজ্ঞেস কর। এ কথা শুনে মানুষেরা আবার অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল। তারা বলল, এ নবজাত কি কথা বলতে শিখেছে, যে আমাদের কথার জবাব সে দিবে। এগুলোধোকাবাজি কথা।
এ ধরনের বাহানা করে আসল ঘটনা গোপন করা যাবে না। আজ হোক কাল হোক সত্য ঘটনা অবশই প্রকাশ হয়ে যাবে। তাঁর মধ্যে একজন বলল, চলনা দোলনার কাছে গিয়ে আমরা তাঁর জন্ম রহস্য জিজ্ঞেস করে দেখি। মারইয়াম যদি সত্যিবাদী হয় তবে হয়ত ছেলেটি কথা বলে উঠবে। এ কথা বলে কয়েকজন লোক হযরত ঈসা (আঃ) এর দোলনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে বলল, হে মারইয়াম পুত্র! তোমার পিতার পরিচয় কি? তখন হযরত ঈসা (আঃ) বলল, আচ্ছালামু আলাইকুম, আমি আল্লাহর এক বান্দা। আল্লাহ আমাকে যুগের নবী করে পাঠিয়েছে।