সৎ ভাইদের আরজ – ২য় পর্ব
হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের আরজ – ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ইউসুফ (আঃ) তখন অনাহারী মানুষের মাঝে খাদ্য-শস্য বন্টন করতে আরম্ভ করেন। দেশের মানুষর মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য-শস্য পৌঁছে দেবার ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলো। এরপরে শুরু হল বিদেশীদের আগমন। সিরিয়া, দামেস্ক, বাহরাইন প্রভৃতি অঞ্চল থেকে আসতে থাকে অগণিত মানুষ। হযরত ইউসুফ (আঃ) সকলকে এক উট বোঝাই করে খাদ্য-শস্য দিতে থাকেন। বিদেশীদেরকে এত পর্যাপ্ত পরিমাণ শস্য বিতরণের প্রতিবাদে সদস্যবৃন্দ আপত্তি জানালেন। হজরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, “ এ অভাবের দিনের গুদামজাত শস্য তাঁদের অংশ আছে। অতএব তাদেরকে মাহরুম করা যাবে না।” একথা বলে তিনি লাইন ধরে খাদ্য-শস্য দিতে থাকেন।
ইতমধ্যে একদিন হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর আদেশ অনুসারে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ডাক দিয়ে ইয়ামেনবাসীকে লাইন ছেড়ে ভিন্নভাবে তাঁর নিকট আসতে বললেন। ইয়ামেন বাসীরা এটা একটি শুভ আলামত মনে করে লাইন থেকে বের হয়ে কর্মকর্তার সম্মুখে আসলে তিনি তাদেরকে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সম্মুখে নিয়ে যান। হযরত ইউসুফ (আঃ) তাদেরকে দেখে চিনতে পারলেন কিন্তু তাঁরা হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে চিনতে পারল না।
হযরত ইউসুফ (আঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের পরিচয় কি এবং কি জন্য এখানে এসেছ বল? তাঁরা হজরত ইউসুফ (আঃ)-কে কুর্নিশ করে বলল, “ সম্মানিত আজিজ মেছের! আমরা ইয়ামেনবাসী ভীষণ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়েছি। আমাদের দেশে মানুষ অনাহারে মরছে। তাই আমাদের পিতা আপনার বদান্যতার খবর শুনে কিছু কম্বল নিয়ে আপনার দরবারে প্রেরণ করেছেন। এর বিনিময়ে আমাদেরকে খাদ্য-শস্য দান করবেন বলে আমাদের আশা।” হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, “তোমাদের পিতার নাম কি?
তোমার একে অপরের কি হও? তোমার যে শত্রু রাজ্যের গোয়েন্দা নও তাঁর প্রমাণ কি? তোমাদের মুখশ্রী বলে দিচ্ছে, তোমাদের মিথ্যা বলার অভ্যাস আছে। তখন তাঁদের মধ্য থেকে ইয়াহুদ বলল, হুজুর আজিজ মেছের! আমরা সকলে ভাই ভাই। হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর বংশের নবী হযরত ইয়াকুব (আঃ) আমাদের পিতা। তিনিই আমাদেরকে খাদ্য-শস্যের জন্য আপনার নিকট প্রেরণ করেছেন। আমরা কোন গোয়েন্দা নই। তবে ব্যক্তিগতভাবে জীবনে অনেক ন্যায় অন্যায় করেছি। আল্লাহ যদি দয়া মাফ করেন তবে রক্ষা।
না হয় আমাদের অদৃষ্টে অনেক দুর্ভোগ আছে। হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁদের সরল মনের কথাবার্তা শুনে মনে মনে সুখী হলেন। যদিও ইতোপূর্বে তিনি ভাইদের কৃতকার্যের প্রতিশোধ নিবেন বলে ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার এটা পছন্দনীয় নয় বলে তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয়। তাই তিনি ভাইদের প্রতি দয়ার্দ হন। প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন। হযরত ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরা জানতেন মিশরের প্রধান মন্ত্রীর নাম আজিজ মেছের। তাই তাঁরা ঐ নামে সম্বোধন করে তাঁদের কথা বার্তা বলেছেন। অথচ আজিজ মেছেরের পরে যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) সে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সে খবর তাঁদের জানা ছিল না।
হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর প্রহরীকে বললেন, এই ইয়েমেনবাসীদেরকে মেহমান খানায় নিয়ে যাও এবং তাদেরকে উত্তম থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কর। এদেরকে তিন দিন পরে বণ্টন দেয়া হবে। ওরা সকলে প্রহরীর সাথে চলে গেল। সুরম্য অট্টালিকায় তাঁদের বিছানা দেয়া হল এবং শাহী খাবার তাদেরকে পরিবেশন করা হল। তখন তাঁরা খুবই চিন্তিত হল এবং নিজেরা আলোচনা করল, আমাদের ভিন্নভাবে এ ধরনের ব্যবস্তা করার কারণ কি? তবে কি এ ব্যক্তি ইউসুফ? অন্য জনে বলল, সে আজ পর্যন্ত আর বেঁচে নেই।
যদি বা বেঁচে থাকে তাহলে হয়ত গোলাম হিসেবে কোথাও জিবন-যাপন করছে। আর একজনে বলে, তবে এ ব্যক্তি কে? কেন আমাদের নিকট এত তথ্য জিজ্ঞেস করল। কত দেশ-বিদেশের মানুষ এখানে সমবেত হয়েছে, সকলকে লাইনে দাঁড় করিয়ে শস্য দিয়ে বিদায় করছে। অথচ আমাদিগকে রাজমহলে এনে এত সম্মানপ্রদর্শন করছে কেন? অন্য এক ভাই বলল, যদি সে ইউসুফ হত তাহলে সে কি আমাদের প্রতিশোধ না নিয়ে এভাবে সম্মান প্রদর্শন করত ইত্যাদি নানা কথা তাঁদের মাঝে আলোচনা হতে থাকে।
দ্বিতীয় দিন হযরত ইউসুফ (আঃ) ইয়েমেনীদের নিকট এসে অনেক কথা জিজ্ঞেস করল। যার উত্তরে তাঁরা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট বললেন, আমরা চার মায়ের বার ছেলে সন্তান। এর মধ্যে ছোট মায়ের ছিল দুই সন্তান।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের আরজ – ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন