স্বামীগৃহে আছিয়া
বিবি আছিয়া তাঁর পিতা ও মাতার নিকট হতে বিদায় নিয়ে স্বামীর গৃহে চলে আসলেন। এবার তাঁর জীবন নাটকে নতুন অঙ্কের সূচনা হল। এতদিন তিনি মাতৃ-পিতৃ আশ্রয়ে থেকে তাঁদের কোলে পরম আদরে পালিত হয়েছিলেন। তাঁরা তাঁকে একান্ত যত্নে মনের মতন করে শিক্ষা-দীক্ষা প্রদান করতঃ সর্ব বিষয় পরিপূর্ণ করে দিয়েছিলেন। কাজেই তাঁকে স্বামীর গৃহের নতুন পরিবেশেও তেমন অধিক অপ্রস্তত হতে হল না। নতুন অবস্থায় দু’চারদিন সামান্য কিছুটা জড়তার ভাব থাকলেও তা অতি শীঘ্রই দূর হয়ে গেল।
তিনি অচিরেই স্বীয় দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনে সক্রিয় হয়ে উঠলেন এবং বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ির সেবা ও যত্ন মন –প্রাণ দিয়ে আরম্ভ করলেন। তাদের কাছে মনে হল, তারা খোদার কৃপায় স্বর্গীয় হুরী গৃহে পেয়েছেন। এমন গুণ ও জ্ঞান যে কোন নারীর থাকতে পারে তা তাদের কম্পনায়ও ছিল না।
অতএব তারা দুজনেই দিবানিশি শুধু আছিয়ার উদ্দেশ্যে দোয়া করতেন আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন, ওহে করূণাময়! তুমি এ নারীটির সুখ্যাতি সারা জগত ব্যাপি প্রচার করে দাও। আছিয়ার শ্বশুর-শাশুড়ীর এ অকৃপণ দোয়া সত্যিই বুঝি আল্লাহ কবুল করেছিলেন। আর তার ফলেই তাঁর কীর্তির খ্যাতি আজ জগদ্বাসীর মুখে মুখে শুনা যায়।
কাবুসের পিতা বলেছিল যে, উত্তমের সংসর্গের ফলে বহু অধমেরা উত্তম রূপ লাভ করে থাকে। কথাটি কাবুস সম্পর্কেও বুঝি সত্য হতে চলল। বিবি আছিয়াকে গৃহে আনার পর হতেই কাবুসের স্বভাবে পরিবর্তিত হতে লাগল। সে এখন তার লম্পট বান্ধবদের সাথে আড্ডা না জমিয়ে দিনের অধিক সময় স্ত্রী আছিয়ার কাছে কাটিয়ে দেয়। ফলে কাবুসের স্ত্রীর গুণের প্রভাব একটু একটু তার ভিতরেও প্রবেশ করতে লাগল।
কাবুসের পিতা-মাতা এবং পাড়া-প্রতিবেশীগণ এটা লক্ষ্য করে পরম আনন্দ লাভ করলেন। আর এটা যে কেবল কাবুসের এ গুণান্বিতা বধুটিরই চেষ্টার ফল তা বুঝতে পেরে সকলেই তাঁকে ধন্য ধন্য করে উঠল; এবং কাবুসের পিতা-মাতা পুত্র বধুর উদ্দেশ্যে আরো বেশী আশীর্বাদ করতে আরম্ভ করল।
বিবি আছিয়া জানতেন যে, স্বামী গুনী হোক, নির্গুণ হোক, যোগ্য হোক কিংবা অযোগ্য হোক, সে পত্নীর কাছে সর্বাবস্থায় মান্যজন। তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করা, সেবা যত্ন দ্বারা তার হৃদয় তুষ্ট করে তোলা, প্রাণ দিয়ে তাকে ভালবাসা এবং তার হিতোদ্দেশ্যে সদা সর্বদা রত থাকাই সতী সাধ্বী এবং উত্তম নারীর কর্তব্য।
অতএব তিনি স্বামীর গৃহে আগমন অবধি এ কর্তব্য মন-প্রাণ দিয়ে পালন করতেন। স্বামী তাঁর অযোগ্য একথা একবারও তাঁর মনে উঠত না এবং কখনও ভূলেও তাকে অবজ্ঞা কিংবা অবহেলা করতেন না। সাধ্বী নারীর এ ধরনের সাধনা ও ত্যাগের ফলে কাবুসের অবস্থা পরিবর্তিত হল।
কিছুদিনের মধ্যে সত্যিই সে এক উত্তম যুবক হয়ে গেল। ফলে তার আত্নীয়-এগানা ও পাড়া-প্রতিবেশীগণ সকলেই খুশি হল; কিন্তু কেবল সে সব দুশ্চরিত্র যুবক কয়টি কাবুসের এ পরিবর্তনে খুশি হল না-যারা তাকে ধ্বংসের পথে টেনে নামিয়েছিল। কারণ তারা কাবুসকে সঙ্গে পেয়ে এতদিন তাদের দুষ্কার্য সাধনে যে সুযোগ সুবিধা লাভ করেছিল এখন সে সুযোগ আর নেই।
কাবুসের দল সদা সর্বদা ব্যাভিচার চালিয়েছিল। কাবুস ব্যতীত আর কারও কাছে তেমন অর্থ নেই। কাজেই তাদের এ সমস্ত বদভ্যাসগুলো ব্যহত হয়ে পড়ল। অথচ এ অভ্যাসগুলো এমনই মারাত্নক যে, একবার তাতে লিপ্ত হলে পরিত্যাগ করা প্রায় অসাধ কাজ। এ জন্যই কাবুসের এ বর্তমান অবস্থা উপরোক্ত লম্পটদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে পড়ল।
সুতরাং তারা অল্পতেই দমে না গিয়ে কিভাবে আবার কাবুসকে তাদের সঙ্গী করতে পারে সে চেষ্টায় আত্ননিয়োগ করলো।