স্বামীকে উপদেশ দান-পর্ব ৪
স্বামীকে উপদেশ দান-পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অদ্য ফেরাউন তার স্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করেছিল তার সঙ্গে কিছুক্ষণ খোশালাপ করতঃ মনের বর্তমান অশান্তিকে একটূ লাঘব করতে। কিন্তু তার বদলে আছিয়ার মুখে এ অনভিপ্রেত উপদেশ সমূহ শ্রবণ করে তার মনের অশান্তি শতগুণে বেড়ে গেল। সে আর একমুহূর্ত সেখানে অপেক্ষা না করে ক্রোধে দম্ভে দন্ত ঘর্ষন করতে করতে বের হয়ে গেল। যাবার সময় সে বলে গেল, আমাকে উপদেশ দান করছ?
সাহসের সীমা দেখছি মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আচ্ছা অপেক্ষা কর শীঘ্রই আমি মজা দেখাচ্ছি। বুঝতে পারবে এ দুঃসাহসের পরিণাম কত মারাত্নক হয়। ফেরাউন এরূপ ক্রোধান্বিত ভাবে আছিয়ার কক্ষ হতে বের হয়ে সোজা দরবার কক্ষে চলে গেল। দরবারে গিয়ে সমস্ত সভাসদগণকে বের করে দিয়ে একা হামানকে নিয়ে সে পরামর্শে বসল।
ফেরাউন বলল, হামান! বেগমের আস্পর্দ্ধা যেরূপ সীমাতিক্রম করছে তাতে এখন আর আমার পক্ষে ধৈর্য ধারণ করা সম্ভব নয়। তাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করবো। তুমি বল, কোণ শ্রেণীর শাস্তি দ্বারা উত্তম ফল হবে?
হামান বলল, জাঁহাপানা বেগমের প্রতি শাস্তি প্রয়োগের আমি পক্ষপাতী নই। মূলে তিনি তো তেমন দোষীও নন। যত ঝামেলা বাঁধিয়ে তুলছে তাঁর পালকপুত্র মুছা আঃ। মুছাই আঃ তাঁকে নানা রকমের পরামর্শ দ্বারা আপনার অবাধ্য করেছে। নতুবা শুনা যায় এখন বেগম সাহেবা আপনার সম্মুখেই নাকি নিরাকার আল্লাহর কথা বলে থাকেন।
আপনার গৃহে মুছা আসার পূর্বে তো কখনও এমন ঘটনা ঘটে নাই।
ফেরাউন বলল, সত্য উজীর। আজই বেগম আমার সামনে বসে আমাকেই তার সে আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করতে উপদেশ দিল। এটা অপেক্ষা ধৃষ্ঠতা আর কি হতে পারে?
হামান বলল, এটা মুছারই আঃ কুপরামর্শ ও প্ররোচনার ফল। বেগম এজন্য দোষী নন। তিনি অবলা রমণী। মুছাকে তিনি স্বীয় প্রাণাপেক্ষা অধিক স্নেহ করেন বলে মুছার পরামর্শও রক্ষা করে থাকেন। আর এ সুযোগে মুছাও তাঁকে আপনার প্রতি বিরূপ করতঃ সে অদৃশ্য খোদার প্রতি আকৃষ্ট করে ফেলেছে। কাজেই শাস্তি মুছারই পাওয়া প্রয়োজন, বেগমের নয়।
হামানের এ যুক্তি বাদশাহর খুবই মনোপুত হল এবং মুছাকে এজন্য কঠোর শাস্তি দানের মনস্থ করল। স্বীয় পত্নীর প্রতি ক্রোধ অনেকটা লাঘব হয়ে গেল। তবে বেগমের কাছে তার যাতায়াত পূর্বাপেক্ষা অনেকটা কমে গেল।
এটার বেশ কিছুদিন পরের ঘটনা, একদা ফেরাউন বেগম আছিয়াকে নিয়ে নীল নদী তীরস্থ ফুল বাগিচায় ভ্রমণোপলক্ষ্যে গেল। সেখানে সে বেগমের সাথে নানা রকমের গল্পগুজব আরম্ভ করলো। কিন্তু ফেরাউন যত রকমের গল্প গুজবই করুকনা কেন, বিবি আছিয়ার মনে সর্বক্ষণই একই চিন্তা বিরাজ করছিল। তিনি তার স্বামীকে কি ভাবে ভ্রান্তি হতে উদ্ধার করতঃ মুক্তির পথে আনবেন, তাঁর অন্তরে শুধু ঘুরে ঘুরে ফিরে সে বিষয়টিই পাক খাচ্ছিল।