স্বামীকে উপদেশ দান-পর্ব ৩
স্বামীকে উপদেশ দান-পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
স্বামীর বাক্য শ্রবণ করে আছিয়া তাঁর অশ্রুসিক্ত চক্ষুদ্বয় উপরে তুলে স্বামীর মুখের দিকে তাকালে এবং অত্যন্ত ধীরভাবে বলতে আরম্ভ করলেন, প্রাণ-প্রিয় স্বামী! আপনি বিশ্বাস করুন দুনিয়াতে আমি সর্বাপেক্ষা আপনাকেই বেশী ভালবাসি ও শ্রদ্ধা করে থাকি। আপনাকে আমি হৃদয়ের মাঝে এমন আসনে বসিয়ে রেখেছি যে আসনে আর অন্য কারও কোন অধিকার নেই।
কিন্তু তবুও আমাকে সত্য কথাটি বলা প্রয়োজন যে, আমার হৃদয় নিবিড়ে এমন একটি স্থান রয়েছে যা সকল কিছুর উর্ধে, সে স্থানটিতে সদা বিরাজিত তিনি যিনি আমার নিকটে আপনার অপেক্ষাও বেশী ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্র। তিনিই আমার প্রভু। তিনি আপনারও প্রভু এবং সারা জাহানেরও প্রভু। তিনিই সারা জগতের সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা, পালনকর্তা, জীবন-মৃত্যুর মালিক। তিনি দুনিয়ার সমগ্র সম্রাটগণের সম্রাট ও সমস্ত প্রভুগণের প্রভু।
তাঁরই ইঙ্গিতে আকাশে চন্দ্র-সূর্যের উদয়-অস্ত ঘটে। তাঁরই ইঙ্গিতে দিবারাত্রের আবির্ভাব ও তিরোধান ঘটে। তাঁরই ইঙ্গিতে সাগর ও নদে ভাঁটা ও জোয়ার সৃষ্টি হয়। জগতের যত প্রাণীকুল আছে তাঁরই দয়ায় তারা পানাহার করে, আরাম-আয়েশ ও সুখ লাভ করে। আবার তাঁরই ইশারায় তারা দুঃখ-অশান্তি ও মৃত্যু-বরণ করে। তিনি মহাশক্তিমান অদ্বিতীয় আল্লাহ তায়ালা।
হে স্বামী! আপনিই ভেবে দেখুন, আপনাকে আমি স্বামী হিসাবে হৃদয়ের সর্বোচ্চ আসনে বসিয়েও সে অদ্বিতীয় লা-শরীক আল্লাহর আসনে কোনরূপে কল্পনা করতে পারি কিন না।
স্বামী! আপনি যত বেশী ক্ষমতাশালী ও প্রতাপান্বিতই হউন না কেন মহাপ্রভূ আল্লাহ তায়ালার অতুলনীয় ক্ষমতা ও প্রতাপের কাছে আপনার ক্ষমতা ও বল অতিশয় তুচ্ছ এবং যারপরনেই ক্ষুদ্র। আপনি তাঁরই এক ক্ষুদ্র সৃষ্টজীব-সীমিত শক্তির অধিকারী।
আপনি মহাশক্তিমান হতে পারেন কিন্তু সর্বশক্তিমান নয়। আপনি মহাজ্ঞানী হতে পারেন কিন্তু সর্বজ্ঞ নয়। তা সে মহাপ্রভু আল্লাহ তায়ালা। তাঁর অসীম যোগ্যতার সম্মুখে আপনার যোগ্যতার মূল্য কানাকড়িও নয়। আপনার মনে সুখ, দুঃখ, চিন্তা, শোক, আতঙ্ক আছে কিন্তু তিনি এ সকলের উর্ধে।
আপনি জন্মলাভ করেছেন, আপনার পিতা ও মাতার উছিলায়। তিনি কারও উছিলায় কিংবা সাহায্য দ্বারা জন্মগ্রহন করেন নাই। আপনি বহু ব্যাপারেই অন্যের কাছে মূখাপেক্ষী অথচ তিনি বেনিয়াজ। এমতক্ষেত্রে আপনার পক্ষে শোভনীয় নয় তাঁর সাথে সমকক্ষতা করা কিংবা তাঁকে অস্বীকার করতঃ নিজেকে তাঁর স্থানে কল্পনা করতে যাওয়া।
স্বামী! আপনার এ অশোভন আস্পর্দ্ধার ফল অতি ভয়াবহ। অতি অমঙ্গলজনক । আমি দিবানিশি শুধু আপনার সে অমঙ্গল আশঙ্কাতেই চিন্তিত থাকি। সে ভাবনাতেই আমার হৃদয় জুড়ে অহরহ শুধু দুঃখ ও অশান্তির আগুন জ্বলছে। অতএব হে প্রিয়তম! আমার একান্ত মিনতি এই যে, আপনি সে সকল কাজে মহাপ্রভূর শাস্তি কিংবা অভিশাপ আসার সম্ভাবনা আছে, সে সমস্ত কার্যগুলি বর্জন করুন এবং পরিবর্তে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের রাস্তা ধরে চলতে থাকুন।