কয়েকদিন আগে একটা চিঠি পেয়েছি, ডাকযোগে। টাইপ করা চিঠিটাতে কোন নাম ঠিকানা ছিল না, খামের ওপরেও নয়। কাজেই, প্রেরকের পরিচয় জানা গেল না। ইংরেজীতে টাইপ করা চিঠিটির একটা হেডিংও আছে ইংরেজীতে, যার মানে হ’লো ভালবাসা সবকিছু করতে পারে। চিঠিটির মূল ভাষ্য এরূপঃ “এই চিঠি তোমার জন্য সৌভাগ্যের খবর বয়ে এনেছে। চিঠি পাওয়ার ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে এটির ২০ কপি করে তোমার বন্ধু-বান্ধব ও সতীর্থদের মধ্যে বিতরণ করো। অচিরেই দেখবে, সৌভাগ্য তোমার পায়ের তলায়।”
এরপরেই উল্লেখ করা হয়েছে কয়েকটি ঘটনার। দেখা যাচ্ছে- ২০ কপি করে বিতরণ করার পর রাজকীয় বিমানবাহিনীর একজন সদস্য লাভ করেছেন ১০,০০০ পাউন্ড, অন্য দু’জন ৪০,০০০ ডলার, একজন লটারীতে পেয়েছে ২ মিলিয়ন ডলার ইত্যাদি। এই চিঠির উৎপত্তি হয়েছে ভেনিজুয়েলায়। দক্ষিণ আমেরিকান এক পুরোহিত সেন্ট অ্যান্টন ডি গ্র“ফ এটির জন্মদাতা। চিঠির দাবী অনুযায়ী এটির মূল কপি নিউজিল্যান্ডে সংরক্ষিত আছে। এক চিঠিতে অস্বীকার করতে মানা করা হয়েছে, সঙ্গে দেখানো হয়েছে ভয়ও। বলা হয়েছে ডালন ফেয়ার চাইল্ড ডাষ্টবিনে ছুঁড়ে ফেলার কারণে ৯ দিন পর মারা গিয়েছে, কালো নামে এক লোক তার চাকরী হারিয়েছে ইত্যাদি। সবচেয়ে মজার কথা হলো- আপনি যদি কুসংস্কারাচ্ছন্ন নাও হোন তাহলেও এই চিঠি আপনার জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে। আমার ধারণা, অনেক পাঠকই এমনতরো চিঠি পেয়ে থাকবেন। চিঠিটির তিন ধরনের ভাষ্য এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। বর্ণিত চিঠি হলো একটি। বাকি দুটো বাংলায়। এর একটির উৎপত্তি দাবি করা হয়েছে সৌদি আরবে।
এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তককে। ঐ চিঠির বয়ানে একটি স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে, যেটি দেখেছেন একজন পুরোহিত। স্বপ্নে প্রেরিত পুরুষ বিশ্বব্যাপী অরাজকতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং শান্তির জন্য এই স্বপ্ন প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই থেকে এটি হয়ে আসছে। তৃতীয় চিঠিটি দ্বিতীয়টির মতো। তবে, এখানে রয়েছে হিন্দু ধর্মের কথা এবং স্থান প্রভৃতি ভারতের কোন মন্দির! তিনটি চিঠিতেই মোটামুটি একই ধরনের সৌভাগ্যের কথা বলা হয়েছে। একই ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। তা এ ধরনের গাল-গল্প চালু থাকার কারণটা কি? দৃশ্যত দুটো কারণ। একদল লোক এই চিঠিগুলোর বয়ানকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে। সম্ভব হলে তক্ষুণি কপি করতে শুরু করে। ফটোকপিয়ার না থাকলে হাতে লিখে।
এদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। পড়তে পারে, কাজেই এরা অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। তবে, শিক্ষিত যে নন তাতো বোঝা যাচ্ছে। দ্বিতীয় কারণের পেছনে রয়েছে এক ধরনের সুবিধাবাদি মনোভাব। অনেকে মনে করেন, ২০ কপি করতে কি এমন কষ্ট বা খরচ। এ করে যদি লাইগ্যা যায়, তাহলেতো ভালই। আর না লাগলেই বা ক্ষতি কি! এই ধরনের মনোভাব, সামগ্রিক অর্থে যথেষ্ট ক্ষতি করে সমাজের। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে, যেখানে প্রতারক জ্যোতিষীরা খবরের কাগজের পাতা দখল করে আছে, সেখানে এভাবে অজ্ঞানতার প্রচার বেশ ক্ষতি করতে সক্ষম।
এই সকল চিঠির অযৌক্তিকতা, ভিত্তিহীনতা নিয়ে আলোচনা করাটা বাতুলতা। কারণ, ওপরে বর্ণিত দু’দল মানুষকে সহজে শোধরানো যাবে বলে মনে হয় না। তবু, সচেতনভাবে এগুলো ঠেকানোর চেষ্টা পাঠকরা করবেন বলে আমি আশাবাদী। আর কাজটা সহজই। পাবার সঙ্গে সঙ্গে ছিড়ে ফেলুন, ডাষ্টবিনে ফেলে দিন এবং বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকুন।