
নাম কেন সুন্দরবন
সুন্দরবনের নাম ‘সুন্দরবন’ হল কেন? তার আগে বলো, সুন্দর বনে সবচেয়ে বেশি কোন গাছ পাওয়া যায়? সুন্দরী গাছ। আর তার থেকেই মনে হয় বনটির নাম হয়েছে সুন্দরবন। তবে ভিন্নমতও আছে।
অনেকে বলেন, আগে এই বনের নাম ছিল ‘সমুদ্রবন’। আর সেই নামটিই পরে হয়ে গেছে ‘সুন্দরবন’। আবার অনেকে বলেন, স্থানীয় আদিবাসীরা বনটিকে ডাকত ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামে। আর সেই নামটিই বিকৃত হতে হতে হয়ে গেছে ‘সুন্দরবন’। তোমার কী মনে হয়, কোন গল্পটা সত্যি? বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু সুন্দরী গাছের গল্পকেই সত্যি বলে মানে।
সুন্দরবনে মানুষের ইতিহাস
মানুষের ইতিহাস বলতে আমরা যা বুঝি, সুন্দরবনের সেই ইতিহাসের শুরু হয়েছে মুঘল আমলে। সেই সময়েই, সম্ভবত ১২০৩ সালে প্রথম এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। তখন থেকেই বনটি মুঘল রাজাদের অধীনে ছিল।
১৭৫৭ সালে বাংলার ইতিহাসে এক বড় পালাবদল ঘটে। হ্যাঁ, পলাশীর যুদ্ধে হেরে যান নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। আর দুর্বল মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে বাংলার ইজারা নিয়ে নেয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বাংলার সঙ্গে সঙ্গে তারা সুন্দরবনেরও ইজারা নেয়। আর ওরাই প্রথম সুন্দরবনের একটা মানচিত্র তৈরি করে।
বাংলা ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চলে যায় কোন সালে বলো তো? ১৮৫৬ সালে, সিপাহী বিদ্রোহের পরপর। ওদিকে সুন্দরবন কিন্তু আরও আগেই চলে গিয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের অধীনে, ১৮২৮ সালে। আর তার পরের বছরই এল টি হজেস নামের এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক বনটিতে প্রথম জরিপ চালান।
১৮৬০ সালে বাংলায় বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই বনটিকে বন বিভাগের দায়িত্বে দেওয়া হয়। কিন্তু সুন্দরবনে বন বিভাগের পুরো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত লেগে যায়। তখনও অবশ্য সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। তাই বন বিভাগও ঠিকমতো দেখাশুনা করতে পারছিল না।
পরে ১৮৭৮ সালে বনটিকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দিলে পরের বছর থেকেই সুন্দরবন শুধুই বন বিভাগের অধীনে চলে যায়।
সুন্দরবনের আয়তন
সুন্দরবনের মোট আয়তন কত বলতে পারবে? অনেকেই তো চেঁচিয়ে বলবে, ৬ হাজার ১৭ বর্গকিমি। উহু, সে হলো আমাদের দেশের সুন্দরবনের আয়তন। ভারতেও তো সুন্দরবনের একটা বড় অংশ থেকে গেছে।
দুটো মিলিয়ে সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিমি। তবে ইউনেস্কো আবার সুন্দরবনকে দু’ভাগ করে হিসেব করে; ওদের কথা অনুসারে আমাদেরটার নাম সুন্দরবন, আর ভারতের অংশটুকুর নাম সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্ক। সেই হিসেবে অবশ্য তোমার কথায় কোনো ভুলই নেই!
সুন্দরবনের গাছপালা
সুন্দরবনের প্রধান গাছ কোনটা, সে তো আগেই বলে দিয়েছি—সুন্দরী গাছ। এছাড়াও গেওয়া, কেওড়া, গরান আর ধুন্দল গাছও ওখানে প্রচুর পাওয়া যায়।
এছাড়া শন, নলখাগড়া, গোলপাতার মতো উদ্ভিদও জন্মে প্রচুর। তবে মোটমাট কয় প্রজাতির গাছ যে ঐ বনে আছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ, আমাদের প্রিয় এই বনে যে ঠিকমতো জরিপই হয় না।
সুন্দরবনের বনবাসীরা
সুন্দরবনের পশুপাখির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পশুটির নাম তুমি কেন, সম্ভবত পৃথিবীর সবাই জানে—রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তবে দিনদিন মানুষের আগ্রাসনে সুন্দরবন যেমন ছোট হয়ে যাচ্ছে, তেমনি কমে যাচ্ছে ওদের সংখ্যাও।
ওদের নিয়ে সর্বশেষ জরিপটি করা হয়েছিল ২০০৪ সালে। তাতে দেখা গেছে, এখন সুন্দরবনে মোট বাঘই আছে ৪৪০টি। তারমধ্যে ২৯৮টা মেয়ে বাঘ, ১২১টা ছেলে আর বাকি ২১টা বাঘের বাচ্চা।
সুন্দরবনে অভয়ারণ্য
অভয়ারণ্য বলতে বোঝানো হয়, এমন বন বা বনের এমন অংশকে, যেখানে গাছপালা ও পশুপাখিদেরকে মানুষের হাত থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
আমাদের সুন্দরবনেও এরকম ৩টি অভয়ারণ্য আছে—পূর্বাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্য, পশ্চিমাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্য আর দক্ষিণাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্য।
সুন্দরবনে প্রশাসন
সুন্দরবনের দেখাশোনা করার জন্য বন বিভাগ সুন্দরবনকে দুটো ভাগে ভাগ করেছে। এই দুটো ভাগে মোটমাট বন বিভাগের রেঞ্জ আছে—চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও বুড়িগোয়ালিনি।
এই রেঞ্জগুলোর অধীনে আবার অনেকগুলো স্টেশনও আছে। মোটমাট বন স্টেশনের সংখ্যা ১৬টি। এগুলোকে সুন্দরবনে বন বিভাগের অফিস বলতে পারো।