সুনাম সুখ্যাতি হতে আত্মরক্ষা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রঃ) বলেন, হযরত ওহাব বিন মোনাব্বেহ হতে বর্ণিত যে, একদা এক মুসাফির দরবেশ স্বীয় সাথীবৃন্দকে বললেন, ভাইসব আমি আল্লাহ পাকের নাফরমানী ও অবাধ্যতার ভয়ে আমার যাবতীয় ধন সম্পদ ও আত্মীয় স্বজন ত্যাগ করেছি বটে, কিন্তু এখন আমার আশংকা হচ্ছে ধন সম্পদের কারণে মানুষ যে পরিমাণ আল্লাহ্ পাকের অবাধ্য হয় এখন দ্বীনের কারণে আমি তা হতেও অধিক অবাধ্য হয়ে যাই কি না। কারণ আমার বর্তমান অবস্থা হল আমি যখন কারো সাথে সাক্ষাৎ করি তখন সে আমার দ্বীনদারীর কারণেই নানাভাবে আমার তাজীম ও একরাম করতে থাকে। কাউকেও কোন কাজের কথা বললে সে আমার দ্বীনদারীর কারণেই তা যথাযথভাবে পালন করে নিজেকে ধন্য মনে করে। এমনি ভাবে আমার দ্বীনদারীর কারণেই কোন জিনিস কিনতে গেলে আমার নিকট থেকে দাম কম রাখা হয়।
সে বুজুর্গ বাদশাহ উপরোক্ত দরবেশের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হবার পর মনে মনে ভাবলেন, ঐ দরবেশ নিশ্চয়ই বুজুর্গীতে বহু উচ্চ মকাম অর্জন করেছেন। অতঃপর তিনি রাজকীয় নিরাপত্তা প্রহরী ও কতিপয় সাথীসহ সেই দরবেশের সাথে সাক্ষাত করতে রওনা হলেন। দরবেশের দরবারে বাদশাহর আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর চারদিক হতে কৌতুহলী মানুষ ছুটে এসে প্রচণ্ড ভীড় সৃষ্টি করল। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আশেপাশের সকল পাহাড় ও মাঠ ঘাট লোকে ভরে গেল। এদিকে দরবেশ খাদেমকে জিজ্ঞেস করলেন, বাইরে এত মানুষের ভীড় কেন? খাদেম উত্তর দিলেন, দেশের বাদশাহ আপনার সাথে দেখা করতে এসেছেন। একারণেই কৌতূহলী মানুষ ভিড় জমিয়েছে। দরবেশ তাড়াতাড়ি খাদেমকে খাবার দিতে বললেন। খাদেম শাক-সবজি, রুটি, জয়তুনের তৈল ও খুরমা এনে হাজির করল। দরবেশ সাথে সাথে বড় বড় গ্রাস তুলে মুখে দিয়ে খেতে শুরু করলেন।
এমন সময় বাদশাহ দরবেশের জীর্ন, কুটিরের সামনে এসে দাড়ালেন। বাদশাহ সম্ভবত প্রথম দর্শনেই দরবেশকে পছন্দ করতে পারেননি। তিনি লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেন- তোমাদের দরবেশটা কোথায়? লোকেরা ইশারা করে দেখাল, বাদশাহ নিকটে এসে দরবেশের কুশল জিজ্ঞেস করলে তিনি সংক্ষেপে বললেন, ভাল। বাদশাহ বললেন, এ ব্যক্তির মধ্যে আমি ভালর কোন লক্ষণই দেখতে পাচ্ছি না। একথা বলেই তিনি ফিরে গেলেন। বাদশাহ প্রস্থান করার সাথে সাথে দরবেশ বাদশাহকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলেন, আলহামদুলিল্লাহ্! আল্লাহ্ পাকের শুকর যে, তুমি আমার প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়ে ফিরে গেছ।