সাইয়্যেদুশ শোহাদা হযরত হামযা (রা.)-এর লাশ উত্তোলন
পাকিস্থান নিবাসী ডাঃ নূর আহমাদ নূর বলেনঃ ১৯৬৮ সালের ঘটনা আমি তখন সৌদি আরবের বারিদা নামক স্থানে একটি উচ্চপদে কর্মরত ছিলাম। একবার জুমার দিন রাসুলে করীম (সা.)-এর রওজা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা শরীফ গেলাম। সেখানে আমার এক ডাক্তার বন্ধুর কাছে অবস্থান করলাম-ডাক্তার বন্ধুটি ছিলেন তখন অত্যন্ত অসুস্থ। এদিকে অসংখ্যা রোগী তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলো। বাসায় প্রচন্ড ভিড় জমে গেলো রোগীদের। শেষে বন্ধবর আমাকে রোগী দেখার জন্য অনুরোধ জানালেন।
বন্ধুর অনুরোধে আমি রোগী দেখা শুরু করলাম। একেক করে সবাইকে প্রেসক্রিপশন করে দিলাম। ইতিমধ্যে এক যাযাবর রোগী দেখার জন্য আমাকে উহুদ পাহাড়ের সন্নিকটে নিয়ে গেলেন। শুহাদায়ে ওহুদের কবরের পাশেই একটি অনাড়ম্বর তাবুর মাঝে সেই রুগী বিছানায় শুয়ে ছটফট করছিলো। আমি তাঁকে দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলাম। তারপর সেই বয়োবৃদ্ধ বেদুঈন আমাকে হযরত হামযা (রা.) কবরের কাছে নিয়ে গেলেন এবং বললেনঃ আজ থেকে প্রায় ১৩০০ বছর পূর্বে হযরত হামযা (রা.) কে পাহাড়ের উপত্যকায় কবর দেওয়া হয়েছিল। একদা প্রচন্ড ঝড় ও প্রবল বেগে বৃষ্টিপাত হলে তাঁর কবর পানিতে ডুবে যায়। হেযামের (মক্কা-মদিনার) শাসনকর্তা ছিলেন তখন মক্কার এক সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তি। ঘটনাক্রমে যিয়ারাতকালে হযরত হামযা (রা.) কে তিনি এ কথা বলতে শুনেছেন, হে মক্কার অধিপতি! বৃষ্টির পানি আমাকে সংকচিত করে রেখেছে। আপনি অতিসত্বর এর একটা সুষ্ঠ সুরাহা বের করুন। আমাকে পানির গ্রাস থেকে উদ্ধারের সুব্যবস্থা গ্রহণ করুণ।
স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হওয়ার পর হেযাযের শাসনকর্তা তৎকালীন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কিরামদের নিয়ে এ ব্যাপারে একটা পরামর্শ সভা ডাকলেন। যথাসময়ে দীনদার-বুদ্ধিজীবিদের এ শীর্ষ বৈঠক বসলো। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হল যে, হযরত হামযা (রা.) কবরকে খুলে দেখতে হবে। তাতে লাশ সুসংরক্ষণের ব্যাপারে প্রতিকূলতা সৃষ্টিকারী বা প্রতিবন্ধক কোন বস্তু আছে কি না। যদি এমন কোন বস্তু থাকে, তাহলে লাশকে এখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র দাফন করতে হবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কবর খোলা হল। দেখা গেল যে, সত্যিই তাঁর কবরে পানি ঢুকে পড়েছে। পরিশেষে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁর লাশকে উঁচু ও নিরাপদ ভূমিতে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করা হল।
বৃদ্ধ যাযাবর আরো জানানঃ হযরত হামযা (রা.)-এর সেই পুরাতন কবর খোলার কাজে অন্যান্য লোকদের সাথে আমিও অংশগ্রহণ করেছিলাম। কবর খোলার সময় অসতর্কতাবশতঃ হঠাৎ তাঁর হাটুতে কোদালের মৃদু আঁচড় লাগলে সেখান থেকে সাথে সাথে খুন প্রবাহিত হতে থাকে। সাথে সাথে তাতে পট্টি বেঁধে দেওয়া হল। অবস্থাদৃষ্টে উপস্থিত সকলে একেবারে আশ্চর্যন্বিত হয়ে গেল। হযরত হামযা (রা.) কাফনাবৃত দেহকে খোলা হলে দেখা গেল যে, তাঁর শরীরের নিম্নভাগে বিছানো কাফন পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রয়েছে। ক্ষতস্থানসমূহ হতে অনবরত তপ্ত রক্ত ঝরছে। চোখের কুঠুরি বহির্ভূত দু’টো চক্ষু, কর্তিত কর্ণদয় আর বিদীর্ণ উদর নিয়ে সুমহান আত্নতৃপ্তি সহকারে ঘুরে ঘুরে তাঁকে দেখলেন। তারপর তাঁকে এই অবস্থায়ই পুরতন কবর থেকে উত্তোলন করতঃ উঁচু ও নিরাপদ স্থানে পূর্বাবস্থাতেই পুনঃ দাফন করা হল।
বুড়ো যাযাবার হযরত হামযা (রা.) লাশ উত্তোলন সংক্রান্ত ঘটনাটি এ জন্য আমাকে বিস্তারিতভাবে শুনালেন, যাতে আমার ঈমান অধিকতর তাজা ও পরিপক্ক হয়, পূনরুন্থান সম্বন্ধে আমার আকিদা-বিশ্বাস যেন আরো মজবুত ও সুদৃঢ় হয়, মৃত্যুর পর অনন্তকালীন জীবনকে আমি যেন পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাস করি। কেননা, মৃত্যুর পর যদি আমাদের পূনরুন্থান না-ই হত, তাহলে শাহাদাতবরণের সুদীর্ঘ ১৪ শত বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মাটি গর্ভে দাফনকৃত হযরত হামযা (রা.)-এর লাশ এভাবে সুরক্ষিত থাকতো না।