সত্যদাসের নব-জন্ম

সত্যদাস অমন হঠাৎ মারা যাওয়াতে প্রথমটা সকলের চমকে উঠেছিল বৈকি! সারা দেশ জুড়ে সে যেন এক বিরাট হৈ-চৈ শোর-গোল! আমাদের সেশের প্রান্তে সে দেশ,হিমালয়ের দক্ষিনে।নাম?নামটা না-ই বা শুনলে সে দেশের।ধরো,তাঁর নাম মিথ্যাপুর!হ্যাঁ এই নামই ভালো।কারণ,ওটা তো তাঁর সত্যিকারের নাম নয়,সবটাই যখন মিথ্যা তখন মিথ্যা যখন মিথ্যাপুরি ধরে নেওয়া যাক না।আর সে দেশের মানুষগুলো যখন অত বেশি মিথ্যা বলে,তখন ও নামটা খুব বে মানান হবে না।তাঁরা শুধু মুখে মিথ্যা বলে সমস্ত কাজে,সমস্ত কাজে যেন মিথ্যা তাঁদের জ্বল জ্বল করে!মুখে যখন ভাল ভাল কথা বলে তখন মনে থাকে খারাপ কাজ।খাটি দুধ বলে জল বেঁচে;ঘি বলে বেঁচে তুলোর বিচির তেল।
কোন জিনিসই সে দেশের আধা দামে পাওয়া যায়না।চারগুন আটগুন,এমন কি বার গুন দাম দিতে হয়।ঘুস না দিয়ে কিন্বা সুপারিশ না ধরে সে দেশের কেউ কাজ করতে পারে না।সোজা-পথে চলা আর সোজা কথা বলা দেশের লোক বহুকাল ভুগে গেছে।সে দেশের বালক রা পাশ করে টুকে,কিন্বা পরীক্ষকদের সুপারিশ ধরে।যুবকরা কর্মক্ষেত্রে দেয় ফাঁকি।আর বৃদ্ধরা চেষ্টা করে স্বয়ং ভগমানের ঠকাতে।জপ-কিন্বা পূজো,বড় জোর উপোস-এর আড়ালে তাঁরা তাঁদের অসৎ কাজ ও তাঁদের অসৎ-চিন্তা ঢাকতে চেষ্টা করে।সে দেশের জমিদার প্রজাকে আর প্রজা জমিদার কে ঠকায়।রেলের লোক চেষ্টা করে যাত্রিদের ঠকাতে,আর যাত্রি রা চেষ্টা করে রেলমালিক কে ঠকাতে।সব চেয়ে হয়ত অবাক হয়ে যাবে একটা কথা শুনলে-সেখানকার ছাত্ররা পর্যন্ত শিক্ষকে ঠকাতে চেষ্টা করে,শিক্ষকরা চেষ্টা করে ছাত্র কে ঠকাতে।কাজেই এমন দেশের নাম যদি মিথ্যাপুর দিই অন্যায় হবে কি?এমন মিথ্যাপুরে সত্যদাসের জন্মটা আশ্চর্য,আরও আশ্চর্য এই যে তিনি সত্যিসত্যিই সত্যদাস হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।অবশ্য বেশিদিন যে তাকে এখানকার লোক সহ্য করতে পারবে না,এ আমরা সবাই জানতাম।আর হলোও তাই!সত্যদাসের চেষ্টাতেই যখন দেশের সুখ শান্তি ফিরে এলো,তখন দেশের একজন লোক তাকে অতকিতে খুন করে বসলো।অন্ধকারে থাকতে তাঁরা অভ্যস্ত,আলো তাঁদের সইবে কেন?প্যাঁচার সব চেয়ে বড় শত্রু হল সূর্যদেব-যারা আলো থেকে আমরা সবাই,এমন কি প্যাঁচারা পর্যন্ত,প্রান শক্তি পাচ্ছি।
প্রতিটি খাদ্য তৈরি হচ্ছে যা থেকে প্রান আহার করে,প্রতিটি ফুল ফোটে যার দয়ায়,সেই সুর্য কিরন কে,পরিহার করে চলে এমন প্রানীর ত অভাব নেই!মিথ্যাপুরের রাজা হলেন শ্বেত-দ্বিপের লোক।ওখানকার সিংহবংশীরাই প্রতিনিধি রেখে রাজাত্ব চালাতেন। তাঁরা এদেশে আসেনও একদিন মিথ্যার দৌলতে-মিথ্যা কে,শঠতাকে আশ্রয় করেই রাজ্যটাকে ধরে রেখেছিলেন এতকাল।তাঁদের প্রশ্রয়েই দেশে পাপ এমন করে বেড়ে উঠেছিল;তাঁরা জানতেন এদেশের মানুষ নেই,যা খুশি আর যত খুশি অত্যচার করুক না কেন,এরা সবই সইবে তাঁরা এদেশের এমনই দমিয়ে রেখেছিলেন ভয় দেখিয়ে যে প্রথমটা সত্যদাসের কথায় তাঁরা একটুও ঘাবড়ে যাননি,বরং হেসেছিলেন।তারপর যখন দেখেলেন যে সত্যদাসের বড়ই গোলমাল বাধাচ্ছে,তখন তাঁরা ওদিক টায় খুব জোর দিলেন।পাইক-পেয়াদা বরকন্দাজের অত্যাচারে চারিদিকে হাহাকার উঠলো।কতো লোক যে বিনাদোষে শাস্তি পেল তাঁর ঠিক নেই।স্বর্গত রাজা চতুর-চিল্লিসিং বিপুলবিক্রম সত্যি-সত্যি খুব চতুর ছিলেন-তাঁর বিক্রমও ছিল কম নয়,কিন্তু আগেই বলেছিল তাঁদের যা কিছু বুদ্ধি আর কৌশল,শবই চলতো মিথ্যার পথ ধরে।তাই যখন তিনি বাঁধন শক্ত করতে চেষ্টা করেন,ততই তা সত্যদাসের সত্যে লেগে আলগা হয়ে যায়।
যত অস্ত্র সব তাঁর সত্যের বর্মে ঠেকে ফিরে আসে-পাইক-পেয়াদা-বরকন্দাজের হাতের অস্ত্র নিরস্ত্র এবং অহিংস সত্যদাসকে আপনি যেন খসে পড়ে।অবশেষে এমন অবস্থা হলো যে শ্বেত-দিপের লোকেরাই রাজার উপর চটে গেল এই অত্যাচারের জন্য।তাঁদের রাজা তাঁদের হাতেই নিহত হলেন একদিন-নতুন যিনি এলেন রাজা হয়ে,তিনি বললেন,আর দরকার নেই ওখানে আমাদের রাজত্ব করে-ও দেশ সত্যদাসই নিক!শেষ রাজপ্রতিনিধি সিংহ-বংশীদের দণ্ড ও মুকুট,সত্যদাসের পায়ের সামনে রেখে বললেন তোমারই জয় হয়েছে সত্যদাস!এ মুকুট-তোমার।সত্যদাস বললেন,মুকুটে আমার কাজ নেই,দণ্ডতে না।যারা দেশের সত্যকার কল্যান চায়,দেশের উন্নতির জন্য এতকাল কষ্ট স্বীকার করে এলো-তারাই নিক।আমি যেমন আছি তেমন থাকি!সত্যি,অদ্ভুত মানুষ ছিলেন সত্যদাস।সমস্ত পৃথিবী যা বলে,তিনি বলেন তাঁর উল্টো।চিরকাল সবাই যেন এলো যুদ্ধ করতে হয় অস্ত্র দিয়ে;তিনি বলেন অস্ত্র না দিয়ে যুদ্ধ না করাটাই সবচেয়ে বড় বীরের কাজ।অহিংসাই হলো আসল অস্ত্র।সবাই জানে,জোর যার মুল্লুক তাঁর;উনি বেলেন,সে জোর গায়ের নয়,সে জোর মনের।বলতেন বাপু যে আগে মানুষ যুদ্ধ করতো পাথর দিয়ে,তাঁর পর এলো লোহার অস্ত্র-তলোয়ার বল্লম বর্ষা তাঁর ধনুক-তখন এইসব দেখলেন লোকে ভয় পেতো।
কিন্তু কামান বন্দুক যখন এলো তখন ওগুলো মানুষ অকেজো বলে ফেলে দিলে,আবার আগের বন্দুক কামান কিছুদিন পরে ছেলের হাতের খেলনা হয়ে উঠলো-লোকে বাড়ি বাগান সাজাতে সুরু করলে তা দিয়ে এমন সব ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর নতুন অস্ত্র বেরোলো!এলো বোমা,তা থেকে আণবিক বোমা,আবার আলোক বোমা কতো কি শুনছি।কাজেই কতোগুলো অস্ত্র তৈরি করলেই কি নির্ভয়ে থাকতে পারবে?তাঁর চেয়েও শক্তিশালী অস্ত্র তৈরি করলেই কি নির্ভয়ে থাকতে পারবে? তাঁর চেয়ে শক্তিশালি অস্ত্র তৈরি হতে কতোক্ষণ?বরং যদি সমস্ত-রকম অস্ত্রের সামনে প্রান তুচ্ছ করে দাড়াতে পারো, দেখবে,অস্ত্র আপনিই খসে পড়বে অস্ত্রধরদের হাত থেকে।নিরস্ত্র লোককে আঘাত করতে খুব বড় অত্যচারি ইতস্তত করে।এমনি করে,সমস্ত পৃথিবীর লোক যখন কলকারখানা ছাড়া চলবে না একথা সবাই মেনে নিলে,ওখানে সত্যদাস বললেন উহু উহু!তা নয়।কলে দরকার নেই,চাষবাস করো,নিজের খাবার নিজেরা তৈরি করো,হাতে কেটে কাপড় বুনে নাও।কলকারখানা কি হবে?বিলেতে তো অতো কলকারখানা কিন্তু খাবারের জাহাজ না গিলে উপাস করে থাকতে হয়,তুলো না গেলে কাপড় হয় না।খাবার যদি নিজের দেশে না থাকে তো হাজার পয়সা থাক এক এক সময় উপোস করতে হয়।তখন তা আর কলকারখানা চিবতে পারবে না!কলকারখানাতে অল্প সময়ে বেশি জিনিস হয় মানি-কিন্তু বেশি জিনিসের আমাদের দরকার কি?যে যার কাপড় যদি তৈরি করে নি,তাহলে কেনবার প্রয়োজন থাকে না।বিজ্ঞান যতো রিলাস বা আরামের বাজে জিনিস তৈরি করছে,তাতে আমাদের কি উপকার হচ্ছে বলতে পারো?আমরা আরো আরাম চাইছি,আরো বাজে জিনিসের ঘর ভরাচ্ছি।আসল প্রয়োজন কতটুকু?খাওয়া এবং পরা।
কলকারখানায় থাকলেই অল্পসময়ে বেশি জিনিস হবে,তখন তা আর নিজেদের দরকার লাগবে না,কাজেই বেচতে চেষ্টা করবো,সহজে খদ্দের না পেলে জোর করে বেচবো,আর তাই নিয়েই তো দুনিয়ার যত অশান্তি,যত যুদ্ধ।সত্যদাসের কথা কেউ মানত আর কেউ মানত না,যারা মনে-প্রানে মানত না তাঁদের সংখ্যা বেশি।কিন্তু সত্যদাস অনেকে কাজের সুবিধার জন্য মুখে মেনে নিয়েছিল।কিন্তু সত্যদাস যখন তাঁদের স্বাধীনতা এনে দিলেন,হাতে-কলমে কাজ করবার সময় এলো-তখন আর সেভাবে কাজ করতে চাইলেন না কেউ।বললে সারা পৃথিবী যেদিক যাচ্ছে,আমদের ও সেদিক যেতে হবে,নইলে বাঁচব কি করে?সব তাইতে পাগলামি করলে তো আর চলবে না!যা কেউ পারলে না,বুদ্ধ না,যীশু না গাদ্ধি না,সত্যদাস তাই পারবেন?পাগল না মাথা খারাপ?সত্যদাস ওদের ব্যাপার দেখে দুঃখিত হলেন,কিন্তু হাল ছাড়লেন না।যাদের উনি একান্তে আপনার লোক বলে ভবতেন,তারাও যখন এমনি কপটতা করলে,তখন উনি একাই ঘুরে বেড়াতে লাগলেন দেশ থেকে দেশান্তরে।বলে বেড়াতে লাগলেন,বর্তমানে সভ্যতা মানেই মিথ্যা তাতে কখনও শেষ পর্যন্ত ভাল হবে না,ঝগড়া ঝাটি দলাদলিতে দুঃখ বেড়েই যায়,কেউ সুখি হয়না।
প্রয়োজন বাড়িও না,স্বাবস্বী হও, মানুষ কে ভালবাসো তাহলেই সুখে থাকবে।প্রথমটা সবাই ভেবেছিল ওর দিন চলে গেছে,আর ওর কথাতে কেউ কান দিব না।কিন্তু যখন দেখলে,সাধারন প্রজারা এখনও ওর দিকে আছে,এমন ভাবে চলছে মহা অসুবিধে হবে তখন দেশের একদল লোক উনি বেঁচে থাকলে যাদের অসুবিধা,তারাই ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেললে।সত্যদাসের যে সব ভক্ত ও শিষ্যরা মিথ্যাপুরে শাসন চালাচ্ছিলেন,তাঁরা প্রথমটা ওর মৃত্যুতে,খুব হাহাকার করে উঠলেন।মুখে বলেলেন,উনি চলে গেছেন,কিন্তু ওর আরর্শ ত আছে-সেইভাবেই কাজ করবো আমরা।ফলে যে সব প্রয়োজন মনে একটু অসন্তোষ যমছিল তারাও শান্ত হয়ে গেল।কিন্তু এখন তো সত্যদাস বেচে নেই,সুতরাং শাসনকর্তাদের খুব সুবিধা হলো যার যা খুশি তাই করতে লাগলেন,লোককে বললেন,এ তাঁরই ইচ্ছামত করছি।আবার যারা চাইলে ওদের সরিয়ে দিয়ে শাসন-ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে,তারাও সত্যদাসের নাম করে দল পাকিয়ে বেড়াতে লাগলো।হায়,যার নামে এই মিথ্যা বেসাতি চললো,সেই সত্যদাসের কণ্ঠে যে নীরব,কে প্রতিবাদ করবে?এমনি করে আর পাচাটা দেশের মতই মিথ্যাপুর-সভ্যতার দিকে এগিয়ে চললো।
কলকারখানায় দেশ ভরে গেল চিমনির ধোয়াতে আকাশ অন্ধকার হয়ে উঠলো।অস্ত্রের কারখানাতে নানারকমের মারণাস্ত্র জমে উঠল,সৈন্যদল সবাইকে ধরে জোর করে নাম লেখানো হলো।মনে হল এই বার মিথ্যা পুর মাথা তুলে দাঁড়াবে জগতের মাঝে তাঁর প্রতাপে অপর দেশ কাপবে এইবার।সত্যদাসের কথাই ভুল-এমনি কথাটা ধারনাও লোকের মনে হতে লাগল ক্রমশ।কৈ এই তো এতকাল কেটে গেল,মিথ্যাপুরের উন্নতি তো হচ্ছে, অবনিতি তো হয়নি!কিন্তু সে উন্নতি যে অন্য-দেশের চোখ টাটাচ্ছিল তা এতদিন ওরা বুঝতে পারেনি।বিশেষত,পাশেই ভারতবর্ষ।মিথ্যা পুর জন্য তাঁদের মাল বিক্রি হয় না বাজারে।দুনিয়ার বাজারে মিথ্যাপুরের মালের আদর,তা সস্তা অথচ টেকশই।তারপর ওরা এত অস্ত্রশস্ত্র সঞ্চয় করেছেন,সে ও একটা ভয়ের কথা।
শুধু ভারতবর্ষের নয়-অন্যান্য দেশেরও টনক নড়লো।সবাই নানারকম ভয় দেখাতে লাগলো।বললে,যদি বাইরের মাল পাঠানো বন্ধ না করো তো দেখে নেবো।অথচ মাল না পাঠাইলে বা চলে কিসে এত মাল কিনবে কে? কতগুলো এখন বন্ধ করে দিলে এতগুলো লোক বেকার হয়ে পড়ে।সে ভারি গন্ডগোল বেধে উঠল।ওধারে আরও অন্য যেসব দেশের মাল বিক্রি হচ্ছে না,তাঁরা চাইছে গায়ের জোরে ভিনদেশের বাজারে মাল বেঁচতে।আবার বুঝি একটা প্রচণ্ড একটা যুদ্ধ বেধে উঠে।এই কারনেই তো এর আগের দুটোই বড় যুদ্ধ বেদেছে।এধারে দেশের মধ্যোও গণ্ডগোল শেষ নেই।কলকারখানায় যারা কাজ করে তাঁরা ভাবে,আমরাই সব করছি,মালিকেরা ফাঁকি দিয়ে বসে খাচ্ছে।আবার মালিকেরা ভাবে,সবটাই তো ওরা আমারা ব্যবসা চালাছি কি জন্য,আমাদের লাভ কি?শ্রমিকদের আরও বেশি তাঁর চেয়েও বেশি টাকা দিতে দিতে লাভ একসময়ে আরও বেশি তাঁর চেয়েও বেশি টাকা দিতে দিতে লাভ এক সময়ে শূন্য হয়ে আসে-তবুও তাঁরা খুশি হয় না।টাকার লোভ বেড়েই যায়।তখন তবু তাঁরা খুশি হয় না।টাকার লোভ বেড়েই যায়।
তখন স্থির হলো,লাভের অংশ দেওয়া হোক শ্রমিকদের মধ্যেই ভাগ করে;কিন্তু তাতে ওরা সন্দেহ করে যে,এর ভেতরে ওরা সন্দেহ করে যে এর ভিতরে কর্তাদের কোন জোচ্চুরি আছে।গণ্ডগোল বাধাবার লোকেরও তো অভাব নেই।একদল শ্রমিক তাতায় আর এলদল মালিকের।যে সব বিদেশি লোকেরা এদেশে গোলমাল বাধালে সুবিধা হয়,তাঁরা চেষ্টা করে গোপনে পয়সা দিয়ে এইসব হাঙ্গামা পাকিয়ে তুলতে।তখন ঘর ও বাইরের এইসব গণ্ডগোল থামাবার জন্য সৈদল বাড়াতে হয়-অস্ত্র পর অস্ত্র তৈরি করতে হয়।ওসবে যা খরচা হয় তাতে কোষাগার খালি হয়ে দেনা ব বেড়ে যায়,তবু এমন-কিছু করা যায় না।অন্য দেশের তুলনায় তা খুবই নগণ্য।অথচ এটা সবাই মানতে হলো,এই টাকার দশ ভাগের একভাগ খরচ করলেই দেশের অনেক উন্নতি করা যেত,প্রজারা এর চেয়ে ঢের বেশি সুখে থাকতো।ফলে এইবার কর্তার পড়লেন এক ফ্যাসাদে।কি করা যায় কি যায়-যখন ভাবছেন,তখন সত্যদাসেরই এক দরিদ্র শিষ্য,যাকে এতকাল কেউ লক্ষ্যও করেনি তাঁর কথা শোন তো দূর থেকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে এগিয়ে এসে কর্তাদের জানালেন যে,সত্যদাস পুথিপত্রগুলো একবার পড়ে দেখলে বোধায় একটা হদিস মেলতে পারে।শিষ্যটি তখন নিতান্ত বৃদ্ধ,তাকে পাগল বলেই ভ্রম হবার কথা,তবুও অনেকের মনে পড়ে গেল,তাইতো বুড়ো সত্যদাস সত্যই তো এইবার ধরনের কথাই সব কী কী লিখে গেছেন!তখন খোঁজ খোঁজ কোন ধলোর গাদা থেকে দু-একখানা ছেড়া-খোড়া পুথি উদ্ধার করা হল।দেখা গেল,এমনটা যে ওদের তিনি অতদিন আগেই বুঝতে পেরেছিল,এবং ওদের সাবধান করার চেষ্টা করেছিলেন,কিন্তু কেউ কান দেয়নি তাঁর কথাতে পৃথিবীর বড় বড় বত্তৃতা ও ঝুটো সমস্যার মধ্যে,তাঁর সেই দিন সাদাসিধে সরল সত্যি কথাগুলোকে সেদিন প্রলাপ বলেই বোধ হয়েছিল।এখনও অনেকে বিশ্বাস করতে রাজি হলেন না যে,এত সহজে এত বড় সমস্যার মীমাংস হওয়া সম্ভব।
অথচ আর কোনও উপায় ছিল না।অগ্যতা এই উপায় মেনে নিতে হলো।ভাঙ্গ কলকারখা,ভেঙ্গে ফেল শহরের বড় বড় বাড়ীগুলো!অন্ত্রগুলো সব নদির জলে ভাসিয়ে দে!ফিরে যা গ্রামে,এই রব উঠল চারিদিকে।আর সত্যদাস যা সবচেয়ে জোর দিয়ে বলে গিয়েছেন উঠিয়ে দে,সবার আগে ঐ টাকশালাটা যাতে অবিরাম টাকা তৈরি হচ্ছে,নোট ছাপা হচ্ছে।ঐটেই হলো যত গণ্ডগোলের মূল।কিন্তু এইবার সত্যি সত্যি ফিরে এলো সবাই নিজের খাবার নিজে করে নেয়,চরকায় নিজর কাপড় নিজে কাটে,মুচি জুতো দিয়ে তাঁর বদলে নেয় ধান,তেল,নুন,কাপাড়।বাজনদাররা বাজনার বদলে পায় খাবার মালিরা ফুল দিয়ে নিয়ে যায়,টাকার দরকার কি?প্রয়োজন কম,অভাব বোধ কম।শান্তি ফিরে এল বলেই সুখও দেখাদিল।আর তুচ্ছ কারনে বিবাদ হয় না-টাকা নেই বলে মনোমানিল্য নেই।ওরা আর কারুর প্রতিযোগি নয় দেখে বিদেশীরা নিশ্চিন্ত হলো।এদের জয় কেরেও কোন লাভ নেই সে চেষ্টা কেউ করে না।কারণ,টাকা নেই,মাল নেই-কি নেবে।ওরা দিন খাটে দিন খায়।।
সবাই শ্রম করে-কেউ বসে খাবার খাবার চেষ্টা করে না বলে সবাই কার স্বাস্থ ভালো হয়ে উঠে,কারণ মনে কোন অসন্তষও থাকে না।এদের এই শান্তি আর সুখ দেখে পৃথিবীর লোক অবাক হয়ে যায়।বলে,কেমন করে এ হলো। যারা নিজেদের সুবিধার জন্য সত্যদাসকে মেরেছিল,তারাও মাথায় হাত দিয়ে ভাবে এ কী হল? মিথ্যাপুরের লোকেরা দেখিয়ে দেয় সত্যদাসের পুথি,বলে,তিনি তো মরেন নি।তিনি আবার আমাদের বাচাবার জন্য জন্ম নিয়েছেন।তাঁর বানি এবং তাঁর জিবনের আর্দশের মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন উঠেছেন আবার!যা সত্যি তাঁর যে মরন নেই!আর ডাক দিয়ে বলে ওদের,যাদের মধ্যে ঝগড়া আর শান্তি আর অশান্তি জমে উঠেছে পাহাড়ের মত-ওদের তোরা আয়,শান্তি চাস,তো আয়।অমন করে মরেসনি,এখনও বাঁচবার পথ খোলা আছে!

আরো পড়তে পারেন...

হাম্মামখানা –শামসুদ্দোহা চৌধুরী

প্যাচপেচে গরমে ঘামাচির মহোৎসব শরীরে। জ্যৈষ্ঠের রোদের ঝাঁজালো আগুনের পরশমণিতে হুল ফুটানো উৎসবে মেতে উঠছে…

একটি অনুগল্প…

সত্যব্রত মাঝি। মাঝির পুরো নাম। সবার কাছে ও মাঝি বা মাঝিদা এসব নামেই পরিচিত। আজ…

সাতরঙের দরোজা || উত্তম সেন

এখানে কী করে এলো সে! একেবারে অচেনা জায়গা। এর আগে কোনোদিন এসেছিল বলে মনে পড়ে…