শাহজাদ নামের এক যুবকের জীবনে ঘটে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর কাহিনী

১৯৯০ সালের ঘটনা গিলগিট জেলায় মারদাদি দরিয়ালে এক ক্রিকেট  টুণামেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে দর্শক সমাগম হয়েছিল প্রচুর।

সন্ধার পূর্বক্ষণে খেলা শেষ হলো। স্থানীয় সুপার স্টার ক্লাব খেলায় জিতেছিল। খেলায় দর্শকদের মধ্যে আমিও ছিলাম। ফেরার পথে হঠাৎ সালমানের সাথে দেখা। সে এক সময়  ছিল আমার সহপাঠি তার সাথে আমার ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ার আবেগে আনন্দে পরষ্পর জড়িয়ে ধরলাম। কথায় কথায় আমাদের আরেক বন্ধু শাহজাদের কথা উঠল। বললাম অনেক দিন দেখা নেই শাহজাদের কি খবর। শাহজাদের কথা জিজ্ঞেস করতেই সালমানের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। তারপর সে শোনালো এক অবিশ্বাস্য কাহিনী।

সালমান বলল, দু’বছর আগে সে সেপ্টেম্বর মাসের এক দুপুরে শাহজাদের ছোটভাই আমাকে একটি চিঠি পৌঁছে দিলো। সে চিঠি ছিল শাহাজাদের খেলা। খুলে দেখি সে লিখেছে সালমান বহুদিন যাবত তোমার সাথে সেখা নেই। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে, এসো কথা বলা যাবে। আমি ভীষণ অসুস্থ হয়তো এটাই হবে আমার শেষ দেখা।

শাহজাদের ঘরে গেলাম। তার মা দরোজা খুলে দিলেন। দেখলাম হাড্ডিসার কঙ্কালের মতো শাহজাদ শুয়ে আছে বিছানায়। সুদর্শন স্মাট শাহজাদের এ পরিনীতি মেনে নিয়ে কষ্ট হচ্ছিল। তার শয্যাপাশে বসলাম। চোখ বন্ধ করে থাকা শাহাজাদ আমার পায়ের আওয়াজ পেয়ে চোখ খুললো। তার এ রকম অবস্থা হলো কি করে জিজ্ঞেস করলাম। শাহজাদ শোনালো এক অবিশ্বাস্য কাহিনী।

শাহজাদ বলল জুলাই মাসে গ্রীষ্মের ছুটিতে চাচার সাথে দেখা করার জন্য আমাকে কানভরি যেতে হয়েছিল। এক মাস চাচার কাছে থাকার পর এক সকালে পাড়ির পথে রওয়ানা হলাম। মাগরিবের আযানের সময় ইয়ালুট নামক জায়গায় পৌঁছলাম। তারপর আমি একা হয়ে গেলাম। রাতের আধার ক্রমে বাড়ছিল। দ্রুত পথে হেঁটে চললাম। চারদিকে ছিল ঘন জঙ্গল। রাত ১০টা নাগাত নাওকোট পৌঁছলাম। সামনের রাস্তা ছিল সংকীর্ণ। একদিকে ছিল পাহাড় অন্য দিকে ছিল নদী। বেশ দূরে সামনে একজন লোক দেখতে পেলাম। বেশ মোটা লোকটি ছিল সাদা পোশাক পরিহিত। সে সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। তার কাছাকাছি পৌঁছার জন্য আমি দৌড়াতে লাগলাম।

কিন্তু দীর্ঘ সময় দৌড়ানোর পরেও তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হলো না।

কিন্তু দেখে মনে হচ্ছিল সে ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছে। আবার দৌড়াতে লাগলাম এবং এক সময় তার কাছাকাছি গেলাম। লোকটি তখন চুপচাপ দাঁড়ানো। লোকটির দেহ ছিল কাঠের মতো শুকনো। তার চেহারা ছিল ভয়ঙ্কর। তার সাথে কোন কথা বলার আমার সাহস হল না। তাকে  এড়িয়ে পেছনের দিকে যাওয়ার কথাও মনে এলোনা। হঠাৎ দেখি সে নেই।

এটি দেখে আমার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। ভীষণ ভয় পেলাম। তারপর দ্রুত পায়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম। তারপর কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে দেখি সে আমার পেছনে। মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে পেছনের দিকে টেনে নিচ্ছে। কোরআনের আয়াত পাঠ করার কথা চিন্তা করলাম কিন্তু কনো আয়াতই পুরাপুরি মনে এল না। কোনো আয়াতের শুরুর অংশ কোনো আয়াতের শেষের অংশ মনে হচ্ছিল। মনের উপর জোর দিয়ে শেষ পর্যন্ত আয়াতুল কুরসী পাঠ করলাম। এক কিলোমিটার পথ সামনের দিকে এগোলাম।

হঠাৎ লোকটি আমার সামনে পেছনে ফিরে দাঁড়ানো। আমি মনে মনে মৃত্যুর জন্য তৈরি হলাম। এক সময় সে আমার দিকে মুখ করলো। তার চেহারা ছিল ভয়ঙ্কর। চেহারায় লম্বা লম্বা লোম। সামনের দুটি দাঁত ৮ থেকে ৯ ইঞ্চি লম্বা। হঠাৎ সে হা করলে তার মুখ থেকে আগুন বের হতে লাগলো। সে আমাকে বলল, এবার তুমি আমার হাত থেকে বাচতে পারবে না। আমি পালাতে চাইলাম কিন্তু পালাতে পারলাম না। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। যখন জ্ঞান ফিরে এলো দেখলাম আমি একা পড়ে আছি চারদিকে জনমানবের চিহ্ন নেই। পাশে পাশে তাকালাম পুনরায় দৌড়াতে লাগলাম। আমার বাড়ি তখন বেশি দূরে ছিল না। ঘরের সামনে দৌড়ে দরোজার কড়া নেড়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

কতোক্ষণ বেহুশ ছিলাম জানি না। জ্ঞান ফেরার পর চিৎকার করে বললাম সে আসছে তাকে ধরো, সে আমাকে খেয়ে ফেলবে। তারপর সাময়িকভাবে আমি সুস্থ হয়েছিলাম কিন্তু প্রায়ই অসুস্থ থাকতাম। এখনকার অবস্থাতো তুমি দেখতেই পাচ্ছো।

শাহজাদকে শান্তনা দিয়ে বললাম শীঘ্র তুমি ভালো হয়ে যাবে। এ সান্তনার কথা শুনে শাহজাদ অঝোর ধারায় কেঁদেছিল। শাহজাদকে সান্তনা দিয়ে আমি ফিরে এলাম। কয়েকদিন পর খবর পেলাম শাহজাদ ইন্তেকাল করেছে। 

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।