শত বছরের পুরাতন শহীদের লাশ ও তার বিস্ময়কর খাদ্য
পাকিস্তানের প্রবীন চিকিৎসক ডাঃ নূর আহমাদ বলেন, আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। আমার এক বন্ধু ছিলেন পাকিস্তানের নৌ-বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী। তাঁর এক ছেলে ছিল পাগল। যাকে অধিকাংশ সময় দড়ি বা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হত। অন্যথায় একটু ছাড়া পেলেই সে ঘরের সকল আসবাবপত্র ভেঙ্গে প্রায় কয়ক হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে ফেলে। পরিশেষে বন্ধুবর তাঁর ছেলেটিকে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে আমার নিকট এই মর্মে অভিযোগ করতে থাকেন যে, ডাক্তার সাহেব! সে আমাকে শ্বাসরুদ্ধ করে রেখেছে। তাঁর রোগ আরগ্যের জন্য অতি শীঘ্রই একটা সফল চিকিৎসা করুন। নইলে এক্ষুনি আমি তাঁকে গলা টিপে হত্য করবো।
তাঁর উত্তেজিত কণ্ঠের অভিযোগ শুনে প্রতিউত্তরে আমি তাঁকে বুঝিয়ে বললাম, জনাব, কখনো এমন কথা বলবেন না, যা রোজ হাশরে আপনার শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আপনি আল্লাহকে ভয় করুন।
আমার কথাগুলো শুনে বন্ধুবর অনেকটা প্রতিবাদের সুরে বলে উঠলেনঃ- মৃত্যুর পর কে আবার আমাদের পুনরুত্থান ঘটাবেন? কার কাছে আমাদের এ ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে? (নাউজুবিল্লাহ…) এবার আমি তাঁর উদ্যত কণ্ঠের কথাগুলো শুনে এই জন্য নিরব ও নিরোত্তর হয়ে গেলাম যে, তাঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের জবাবে আমি তাঁকে কিছু বললে তিনি হয়তো আরো জঘন্যতম কুফরি কথা বলে ফেলতে পারেন। আমাদের দুইজনের মধ্যে কথোপকথন সে দিনকার মত মোটামুটি এখানেই শেষ।
কিছুদিন পর সেই বন্ধু পাকিস্তানের ডেরাগাজী খাল এর খননকার্যে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে সহযোগিতা করার জন্য সরকার কতৃক আদিষ্ট হন। কর্তব্যের ডাকে সাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে ‘ ডেরাগাজী খালে’ উপস্থিত হলে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের তিনি এক জায়গায় একত্রিত হয়ে সজোরে চিৎকার করতে দেখেন। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে (বন্ধুকে) আসতে দেখে শ্রমিকরা তাঁর কাছে দৌড়ে এসে বলতে লাগলো-স্যার! নহরের তলদেশে একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে মানবদেহের বিশেষ একটি অংশ দেখা যাচ্ছে। শ্রমিকদের এই আশ্চর্য কথা শুনে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন। দেখতে পেলেন, সত্যিই সুড়ঙ্গ পথের শেষ প্রান্তে মানব দেহের একটি বিশেষ অঙ্গ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে তিনি সুড়ঙ্গের উপর থেকে মাটিগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য শ্রমিকদের নির্দেশ দিলেন। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব খানিকটা এগিয়ে সুড়ঙ্গের কাছে চলে যান। দেখা গেল, নহরের তলদেশে পড়ে আছে মানুষের একটি অখণ্ড লাশ। তাতে দুটি বস্তু রয়েছে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক।
তন্মধ্যে একটি হচ্ছে যে, উক্ত মরহুমের শরীরে পরনের কাপড়গুলো (কাফনের কাপড়) তাজা রক্ত মাখা অবস্থায় রয়েছে। যার দ্বারা মনে প্রবল ধারণা হচ্ছিল যে, এটা নিশ্চয় কোন শহীদের লাশ হবে।
আরও বিস্ময়কর অপর বস্তুটি হচ্ছে যে, কুদরতি কায়দায় সুস্বাদু ফলসদৃশ একটি সুদর্শন বস্তুকে তাঁর মুখের উপর রেখে দেওয়া হয়েছে। যার নির্যাস থেকে নিঃসৃত ফোঁটা ফোঁটা রস কিছুক্ষণ পর পর মৃত্যুর মুখে পড়ছে…(সুবহানাল্লাহ)
নহরটির গভীরতা ছিল প্রায় ২০ ফুট। উক্ত শবদেহটি নহরের গভীরতার সীমা পেরিয়ে আরো অনেক মাটির নিচে সংরক্ষিত ছিল। এই অখণ্ড দেহের অধিকারী যে শতাব্দীকাল পূর্বে ইন্তেকাল করেছেন-এ থেকে সহজে বুঝা যায়।
শতাব্দী প্রবীন শহীদের এই লাশ এবং তাঁর বিস্ময়কর খাদ্য প্রত্যক্ষ করে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ভুল ভাঙ্গল। পুনরুত্থানের ব্যাপারে তাঁর মনের সন্দেহ-সংশয় কেটে গেল। এ ঘটনা দেখে তিনি পরম মনোতৃপ্তি লাভ করলেন। ফলে তিনি ঐ দিন সন্ধ্যাবেলা আমার বাসায় এসে অত্যন্ত আনন্দের সাথে আমাকে বিস্তারিত ঘটনা জানালেন।
তিনি পরম আবেগ ভরা কণ্ঠে এই মর্মে স্বীকৃতি প্রদান করলেন যে, পবিত্র কোরআনে শহীদগণ সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে, (অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাদেরকে রিযিক প্রদান করে থাকেন ইত্যাদি) আমি তাঁর এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত ও জলন্ত প্রমাণ দেখে এসেছি। এবার আমার পূর্ণ বিশ্বাস হয়েছে যে, মৃত্যুর পরও আরেকটি অনন্ত জীবন রয়েছে। যাতে শেষ বিচার দিবস প্রতিষ্ঠিত হবে। কেননা, যদি তা না হতো, তাহলে শত শত বছর যাবত মাটির গর্তে প্রোথিত ও সংরক্ষিত শহীদের এ লাশকে এতদিন মাটি অবশ্যই গ্রাস করে ফেলতো।
তিনি আরো বলেন, আমার মনে হচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তিরা যেন পুনরুত্থান, শবদেহে রূহের প্রত্যাগমন ও বিচার দিবস প্রতিষ্ঠার অপেক্ষায় সব সময় প্রহর গুনেছে। হযরত ইসরাফিল (আঃ) সিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে তাঁরা যেন হাশরের ময়দানের দিকে দৌড়ে ছুটবে।
বন্ধুর মুখে এ কথাগুলো শুনে আমি সবিনয়ে আরজ করলামঃ ইঞ্জিনিয়ার সাহেব! আসলে আপনার ইমান আর আমাদের ইমানের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে। আমরা ইমান এনেছি শুনে শুনে, আপনি ইমান এনেছেন স্বচক্ষে খোদার কুদরতকে প্রত্যক্ষ করে। আমদের ইমান থেকে আপনার ইমান অনেক পরিপক্ক, অনেক বলিষ্ঠ। আমাদের চেয়ে আপনি অনেক বেশী মর্যাদার অধিকারী।
এ ঘটনার পর ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তাঁর পাগল ছেলের প্রতি জিজ্ঞাসা থেকে ফিরে আসেন এবং পুনরুত্থান ও আখেরাত সম্বন্ধে অতীত জীবনে পোষণকৃত আযাদী চিন্তাধারা ও যথেচ্ছা মন্তব্য করা থেকে খালেছভাবে তাওবা করেন।