লেবাননের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী নাহাদ ফুতুহ সঙ্গীত চর্চা ছেড়ে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন
নাহাদ ফুতুহ ছিলেন লেবাননের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী। তিনি উগ্র আধুনিক ফ্যাশানেবল জীবন কাটাতেন। তবে তাঁর কন্যা হাব্বাকে শৈশব থেকে তিনি ইসলামী আদব কায়দা এবং ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার শিক্ষা দিয়েছিলেন। হাব্বা নিয়মিত পর্দা করতো। বোরকা পরিধান করে স্কুলে যেত। তাঁর বয়স ছিল সতের বছর।
ম্যাট্রিক পরীক্ষার তিন মাস আগে বোরকা পরিধানের অভিযোগে স্কুল কতৃপক্ষ হাব্বাকে স্কুল থেকে বের করে দিল। হাব্বার পিতা প্রধান শিক্ষককে অনেক অনুরোধ করলেন। তাঁর এক কথা, যদি এ স্কুলে আপনার মেয়েকে পড়াতে চান তাহলে তাকে হিজাব ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু হাব্বা কিছুতেই হিজাব ত্যাগ করতে সম্মত নয়। হাব্বার মা মেয়েকে বুঝালেন, মাত্র তো তিন মাসের ব্যাপার। তুমি তিন মাস পর পুনারায় হিজাব পরিধান করিও, এখন হিজাব ত্যাগ করে পরীক্ষাটা দিয়ে দাও। কিন্তু হাব্বা মায়ের অনুরোধ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করলো। মেয়ে বলল, পড়া লেখা ছাড়তে পারবো কিন্তু হিজাব ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
মেয়ের দৃঢ়তায় মা অবাক হলেন। মেয়ে তাঁর মাকে বলল, মা তুমি আমাকে শিখিয়েছ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ জীবনের সত্যিকার অর্থ জানে না।
জীবনের সার্থকতা হচ্ছে, পরলৌকিক জীবনের সফলতায়। মহান আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলামের অনুসরণেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা। অন্য কোন ধর্ম বিশ্বাস মেনে জীবন কাটিয়ে মৃত্যুর পরে মুক্তির আশা সুচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করানোর মত অসম্ভব। তুমি আমাকে নামাজ আদায়, রোযা পালন, পবিত্রতা অর্জনের ফরজ গোসল, বেগানা পুরুষদের সাথে হিজাব পালনের শিক্ষা দিয়েছ। এসব শিক্ষা যখন দিয়েছিলে তখন তুমি কিন্তু হিজাব পালন করতে না। সিনেমার জন্য, টেলিভিশনের জন্য তখন তুমি জ্ঞান গেয়েছ। তোমার উপদেশ মেনে আমি জীবন কাটাচ্ছি। তোমার স্বাধীনতায় আমি হস্তক্ষেপ করি নাই। তুমি কেন আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে? শোন মা! উচ্চশিক্ষা গ্রহন করলেও জীবন চলবে, না করলেও জীবন চলবে। আমি কিছুতেই ঘরের বাইরে হিজাব ব্যতীত পা বাড়াতে পারবো না। ফ্যাশানেবল জীবন যাপন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি নবী নন্দিনী ফাতেমা, নবী সহধর্মীনী আয়েশার আদর্শ মেনে জীবন কাটাবো। তুমিও ইচ্ছে করলে আমার আদর্শ মেনে চলতে পার। মনে রাখবে, এসব আদর্শ তুমি আমাকে শিক্ষা দিয়েছ।
মেয়ে হাব্বার কথা শুনে মা নাহাদ ফুতুহ সাথে সাথে প্রতিজ্ঞা করে সঙ্গীত চর্চা ত্যাগ করল। পর্দা মেনে ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী জীবন কাটাতে শুরু করলেন।
হাব্বার নানী ছিলেন উগ্র আধুনিক নারী। মেয়ের সিদ্ধান্তের কথা জেনে তিনি মেয়ের কাছে ছুটে এলেন। মেয়েকে বললেন, দেখ তোমার সুরেলা কণ্ঠের সুধা থেকে কেন তুমি দেশের মানুষকে বঞ্চিত করবে? তুমি তোমার প্রতিজ্ঞা ফিরিয়ে নাও।
নাহাদ ফুতুহ তাঁর মাকে বললেন, মা তুমি এসব কি বলছো? তুমি মুসলিম পরিবারের নারী। কত দিন আর বেঁচে থাকবে? বয়স তো কম হল না। তুমিও হিজাব পরিধান কর। হাব্বার পথে চল, ফ্যাশনের জীবন ছাড়। কবরের কঠিন সময়ের কথা চিন্তা কর। কবরের অনন্ত জীবনের প্রস্তুতি নাও। বারযখ জগতের কথা ভাব। সেখানে যাওয়ার পর কেউ ফিরে আসতে পারে না, আর তুমিও ফিরে আসতে পারবে না।