রোম ও পারস্য অভিযান-শেষ পর্ব
খুবই দাম্ভিক প্রকৃতির লোক ছিলেন শাহ খসরু। তিনি দূতকে খারাপ ভাষায় তিরস্কার করলেন এবং অপমানও করলেন। দূতের সামনেই তিনি পত্রখানা টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলেন। শুধু তাই নয়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কয়েদ করার জন্য ইয়ামেনের শাসনকর্তার কাছে হুকুমনামা প্রেরণ করলেন। পারস্য রাজের স্পর্ধা সীমা অতিক্রম করায় সমগ্র মুসলিম সমাজ এবং রাষ্ট তাঁর প্রতি বিরুপ হয়ে রইল। তখন থেকেই পারস্যের জনগণ ইসলাম ধর্ম ও রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধন করার জন্য না না রুপ চেষ্টা করতে থাকে। ফলে বিদ্রোহী বাহরাইনদের তাঁরা নানাভাবে সাহায্য করতে থাকায় হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উপযুক্ত শিক্ষা না দিলে সীমান্তে নানা প্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি করতে থাকবে।
হিজরী ১২ সালে খলিফা আবু বকর (রাঃ) পারস্য সম্রাট খসরুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী একদল সৈন্য পাঠালেন। মুসান্না বিন হারিস ছিলেন এ সিপাহী দলের অধিনায়ক। সে সময়ে পারস্যের অধিপতি খসরুর প্রতাপ এবং অমিত পরাক্রম বিদ্যমান ছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ) সমগ্র বিষয়ের গুরত্ব উপলব্ধি করে পুনরায় মহাবীর খালেদকে মাসান্না বিন-হারিসের সাহায্যার্থে একদল সৈন্যসহ প্রেরণ করলেন। হাফির নামক স্থানে সর্বপ্রথম মুসলিম ফৌজের সাথে পারস্য সৈন্যের সংঘর্ষ হয়। মুসলমান সৈন্যের বীরত্ব এবং শৌর্যে পারস্যের সৈন্যদল ছত্রভঙ্গ হয়ে মেসোপটেমিয়া অভিমুখে পলায়ন করতে বাধ্য হয় হয়েছিল। অতপর দুর্ধর্ষ পারস্য বাহিনীর সাথে মুসলিম সৈন্যদের মোট পনেরটি যুদ্ধ হয়েছিল। প্রত্যেক যুদ্ধে পারস্য বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। রোম সাম্রাজ্য সে সময়ে অতিশয় শক্তিশালী ছিল। এর অধিপতি হিরাক্লিয়াস ছিলেন জাতিতে খ্রীষ্টান। তাঁর প্রকৃতি ছিল অতিশয় দুর্ধর্ষ এবং উগ্র। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর কাছে একজন দূত প্রেরণ করেছিলেন ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে।
হিরাক্লিয়াস ক্রোধে অন্ধ হয়ে সে দূতকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। দূতকে হত্যা করা রাজনীতির বিরুদ্ধে- ধর্ম এবং তা খুবই নেক্কারজনক কাজ। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য মুসলমানগণ খুবই রাগান্বিত হয়ে উঠেছিলেন। এর পরিণতি স্বরুপ রোমানদের সঙ্গে মুসলমানদের একটি খণ্ডযুদ্ধ হল। অতপর কিছুকাল নীরবে অতিবাহিত হল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পরে খলিফা আবু বকর শান শওকত রোমানদের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। তাঁরা মুসলমানদের ক্ষতিসাধন করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল। তখন আরববাসীগণ সিরিয়ায় ব্যাবসা-বানিজ্য করতেন। এটা তাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল।সিরিয়া ছিল রোম সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। অতএব, আরববাসী মুসলমানগণ ব্যাবসা বাণিজ্য উপলক্ষ্যে প্রায়ই সিরিয়ায় যাতায়াত করতে হবে। রোমানগণ আরবের এ ব্যাবসায়ী সম্প্রদায়কে জব্দ করার উপায় উদ্ভাবন করল। তাঁরা আরবসাসীদেরকে সিরিয়া প্রবেশে বাধা দিতে আরম্ভ করল। এ ছাড়া সীমান্তের মুসলমানদের না না ভাবে উৎপীড়ন সংবাদ পেয়ে খুবই বিরক্ত হয়ে উঠলেন। তিনি তাঁদের সমুচিত শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে রোমানদের বীরুদ্ধে একদল সাহসী এবং বীর সেনাদলকে প্রেরণ করলেন।
এ সৈন্য বাহিনী চার শ্রেনীতে বিভক্ত হয়ে সাম্রাজ্য আক্রমণ করল। রোমান সৈন্যদলের সাথে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একদল সাহসী এবং বীর সেনাদলকে প্রেরণ করলেন।
এ সৈন্য বাহিনী চার শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে রোম সাম্রাজ্য আক্রমণ করল। রোমান সৈন্যদলের সাথে মুসলমান সিপাহীদলের খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ চলতে লাগল। এ সময়ে খুবই চতুর রণবিদ মহাবীর খালেদ বিন-ওয়ালিদ ছিলেন পারস্য রাজ্যের সমরক্ষেত্রে। খলিফারা তাঁকে রোমানদের বিরুদ্ধে সিরিয়ার রণপ্রাঙ্গণে মুসলমান সৈন্যের অধিনায়কত্ব করার জন্য নির্দেশ প্রদান করলেন। এদিকে রোমান সৈন্যে বাহিনীর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সংবাদ হিরাক্লিয়াস ক্রোধে অন্ধ হয়ে মুসলমান বাহিনীকে পর্যুদস্ত করার জন্য এক দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীকে প্রেরণ করলেন। মুসলিম সৈন্যে বাহিনীর সাথে রোমান সেনাদলের প্রবল যুদ্ধ চলতে লাগল। রোমানরা বিপক্ষে দলের অস্ত্রের সামনে টিকে থাকতে পারল না। তাঁরা ধীরে ধীরে পেছনের দিকে যেতে বাধ্য হল। মুসলমানগণ বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে দামেস্ক এবং বসরা নগর অধিকার করলেন।