রাজা রায়হানের স্বপ্নের তাবীর-২য় অংশ
রাজা রায়হানের স্বপ্নের তাবীর-প্রথম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি এ বাতীর বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইহা বাস্তবে রূপ নেয়। অতএব আমি মনে করি, রাজা বাহাদুরের স্বপ্নের বিষয়বস্তু তাঁর নিকট পেশ করলে নিঃসন্দেহে উপযুক্ত তাবীর পাওয়া যাবে। এখন মহাত্মন, যদি আমাকে আদেশ করেন তবে আমি তাকে দরবারে ডেকে আনতে পারি। অথবা তাঁর নিকট বিষয়টি আলাপ করে আসতে পারি। রাজা এমনিতেই খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। অন্যদিকে তাঁর পরিষদ বর্গ স্বপ্নের সঠিক কোন তাবীর করতে সক্ষম হয়নি। তাই তিনি আর বিলম্ব না করে ভৃত্যকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন।
ইউসুফ (আঃ) ভৃত্যটিকে দেখেই বললেন, কি জন্য এখানে এসেছ? ভৃত্য বলল, হুজুর! মিশরের রাজা রায়হান একটি অত্যাশ্চার্য স্বপ্ন দেখেছেন। যার তাবীর কেউ করতে সক্ষম হয়নি। এখন স্বপ্নটি আপনার নিকট পেশ করে উহার তাবীর জেনে নেওয়ার জন্য আমি এখানে প্রেরিত হয়েছি। ইউসুফ (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি স্বপ্ন দেখেছেন বল। তখন ভৃত্য বলল, রাজা স্বপ্ন দেখেছেন সাতটি সবল গাভীকে সাতটি কৃষ্ণ গাভী খেয়ে ফেলছে এবং সাতটি তাজা শস্যশীষকে সাতটি শুকনো শীষে খেয়ে ফেলছে। হযরত ইউসুফ (আঃ) স্বপ্নের বিবরন শুনে বললেন, স্বপ্নের তাবীর খুব সহজ বটে কিন্তু উহার বাস্তব রূপ অত্যন্ত কঠিন ও ভয়াবহ। ভৃত্য হযরত ইউসুফ (আঃ) – এর কথা শুনে বলল। “হুজুর! দয়া করে তাবীরটি আমাকে বিস্তারিত বলুন।” হযরত ইউসুফ (আঃ) তখন বললেন, মিশর রাজ্যে একাধারে সাত বছর অনেক শষ্য উৎপাদন হবে। পরবর্তী সাত বছর কোন শষ্য উৎপাদন হবে না।
সারা মিশর, সিরিয়া ও অন্যান্য দেশে নেমে আসবে দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া। অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। ভৃত্য স্বপ্নের তাবীর শোনা মাত্র উন্মাদের ন্যায় রাজ দরবারের দিকে চলল। রাজা রায়হান ভৃত্যের পথের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। যখন ভৃত্য তাঁর নিকট পৌঁছল, তখন সে অস্থিরতার সাথে জিজ্ঞেস করলেন, কি খবর এনেছ? ভৃত্য মলিন বদনে রাজার নিকট বলল, মহাত্মন! তিনি স্বপ্নের বিবরন শুনে বলেছেন যে, মিশর রাজ্যে আগামী সাত বছর অধিক ফসল ফলবে। পরবর্তী সাত বছর কোন ফসল ফলবে না। ফলে সারাদেশে আরম্ভ হবে মহাদুর্ভিক্ষ। রাজা রায়হান ভৃত্যর মিখে স্বপ্নের তাবীর শুনে খুব বিচলিত হয়ে পড়লেন। তাই তিনি ভৃত্যকে বললেন, বাবা! “তুমি গিয়ে তাঁর নিকট পুনারায় জিজ্ঞেস করে এস, এ মহাদুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস থেকে মানুষকে কিভাবে রক্ষা করা যাবে?”
ভৃত্য পুনারায় জেলখানায় এসে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর! রাজা আপনার নিকট জানতে চেয়েছেন যে, এ দুর্ভিক্ষের কবল থেকে মানুষকে কিভাবে রক্ষা করা যাবে? হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, প্রথম সাত বছর অধিক ফসল ফলাতে চেষ্টা করতে হবে। যেন দেশবাসীর চাহিদার পরেও ফসল উদ্বৃত্ত ফসল ভালকরে শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে।। যেন পোকা মাকড়ে নষ্ট করতে না পারে। অতপর এ সাত বছরের উদ্বৃত্ত ফসল দ্বারা পরবর্তী সাত বছর চালাতে হবে।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
রাজা রায়হানের স্বপ্নের তাবীর-তৃতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন