
কুরআন মাজীদে ‘যুলকিফল’ নামটি দুবার উল্লেখ হয়েছে। দু’বারই অন্যান্য নবীদের সাথে তাঁর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একবার উল্লেখ হয়েছে সূরা আল আম্বিয়াতে। সেখানে বলা হয়েছে এভাবে- “আর ইসমাঈল, ইদ্রীস ও যুলকিফল, এরা সবাই ছিলো ধৈর্যশীল। আমার রহমত দ্বারা এদের সিক্ত করেছিলাম। এরা ছিলো যোগ্য সৎ কর্মশীল।” (সূরা ২১, আল আম্বিয়াঃ ৮৫-৮৬) সূরা সোয়াদে তাঁর কথা উল্লেখ হয়েছে এভাবে- “ইষমাঈল, আলইয়াসা আর যুলকিফলের কথা স্মরণ করো। এরা সবাই ছিলো উত্তম মানুষ।” (আয়াত- ৪৮)
যুলকিফল ছিলেন বনী ইসরাইলের একজন নবী। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তিনি ছিলেন হযরত আইয়ুব (আঃ) এর পুত্র। ‘যুলকিফল’ শব্দের অর্থ ভাগ্যবান। দুনিয়াবী দৃষ্টিতে নয়, পরকালীন দৃষ্টিতে ভাগ্যবান। এটি তাঁর আসল নাম নয়, বরং এটি ছিলো তাঁর উপাধি। তাঁর মূল নাম ছিলো ‘বিশর’।
যুলকিফল যদি আইয়ুব (আঃ) এর পুত্র হয়ে থাকেন, তবে পিতার পরেই তিনি নবী হয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন যুলকিফল আসলে বাইবেলে উল্লেখিত যিহিস্কেল নবী। যিহিস্কেল মুসলমানদের কাছে হিযকীইল নামে পরিচিত। তাঁর এই পরিচয়টি সঠিক মনে হয়। বাইবেলের যিহিস্কেল পুস্তক থেকে জানা যায়, রাজা বখতে নযর যখন শেষবার জেরুজালেম ধংস করেন, তাঁর আগে তিনি বহু বনী ইসরাইলীদের বন্দী করে নিয়ে যান। বখতে নযর ইরাকের খাবুর নদীর তীরে বনী ইসরাইলী বন্দীদের একটি উপনিবেশ গড়ে তোলেন। এর নাম ছিলো তেলআবিব।
এখানেই খ্রিষ্টপূর্ব ৫৯৪ অব্দে হযরত হিযকীইল নবুয়্যত লাভ করেন। এ সময় তাঁর বয়েস ছিলো ত্রিশ বছর। এখানে তিনি বাইশ বছর যাবত বনী ইসরাইলীদের মাঝে নবুয়্যতের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বীন প্রচারের কাজকে তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন।
তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর লোকেরা যখন তাঁর বাড়িতে শোক প্রকাশের জন্যে আসে, তখন তিনি এতো দুঃখের মাঝেও তাঁদেরকে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখাতে থাকেন। এই হিযকীইল বা যিহিস্কেলই ছিলেন হযরত যুলকিফল (আঃ)। তিনি সেই সব নবীদের একজন যারা নিজেদের জীবনের একটি অংশ বন্দী হিসেবে কাটিয়েছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠাবান। দিনরাত আল্লাহর দীনের কাজে নিমগ্ন থাকতেন। মানুষকে আল্লাহর ভয় দেখাতেন। তিনি শাসকদের সবসময় সত্য সততা ও ন্যায়পরায়নতার ব্যাপারে সতর্ক করতেন।