মুখোশ

ফাতুর মা একটু বেলা করেই আজ কাজে আসে। যে বাসায় কাজ করে, সে বাসার আপা দরোজা খুলে ওকে দেখেও দেরীর কারণ জিজ্ঞেস করে না। একটু অবাক হয় ফাতুর মা। সেও প্রতিদিনের মত নির্ধারিত কাজগুলি শেষ করার জন্য ভিতরের দিকে আগায়। একটু লজ্জিত এবং কিছুটা শংকিত মন নিয়ে কিছু কথার ঝাপটা আসার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু আজ আবহাওয়া খুবই পরিষ্কার- রৌদ্র আলোকোজ্জ্বল নির্মেঘ আকাশে সাদা মেঘের ভেলাগুলোও দৃশ্যমান। সেখানে বাড়িওয়ালির নিরেট কালো মুখের উপস্থিতি আজ কেন জানি নেই।

তরকারি ধুয়ে সামনে রাখে। বাড়িওয়ালি ফ্রিজ থেকে মাছের প্যাকেট বের করে রান্নাঘরের বেসিনে পানিতে ডুবিয়ে রাখে। একটা প্লাষ্টিকের মোড়া টেনে ফাতুর মার পাশে বসে। আজকাল আর এফ এল এর এই সুদৃশ্য মোড়াগুলি মধ্যবিত্তদের রান্নাঘরের শোভা বর্ধন করছে। ফাতুর মা কান খাড়া করে রাখে। আসন্ন কিছু তিক্ত বাণ শরীরে বিদ্ধ হবার অপেক্ষায় সারা শরীর প্রস্তুত হয়ে থাকে।

কিন্তু ওর সকল প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে বাড়িওয়ালি বলে উঠে- ‘ঈদের দিন তোমার মেয়েকে নিয়ে সারাদিন আমার বাসায় বেড়াও।’ হঠাৎ তরকারি কুটা থামিয়ে দেয় ফাতুর মা। বাড়িওয়ালির দিকে তাকায়। তিনি আবার বলেন- ‘বলছিলাম ঈদের দিনে তোমার বাসায় রান্না-বান্নার আর আয়োজন করো না। মেয়েকে নিয়ে সকালে এখানে চলে এসো।’

কিছুই না বলে চুপ থাকে ফাতুর মা। কল্পনায় ওর ভেসে উঠে ঈদের একটি দিন। সে এবং তার মেয়ে ফাতু দিনভর এই বাসায় কোরবানির গোশত নিয়ে বাড়িওয়ালির ফরমাশ মত কাজ করে যাচ্ছে। বাহ! কি সুন্দর বেড়ানোর দাওয়াত! গরীবের ভিতরে ওরা আরো গরীব। নিজেদের একান্ত একটি দিন বলেও বোধ হয় ওদের জন্য কিছু নেই। তাইতো বাড়িওয়ালির এই আগাম দাওয়াত।

যন্ত্রের মত একজন ছুটা বুয়া নিজের ভাগ্যের কথা চিন্তা করতে করতে কাজ করে চলে। তবে এইমাত্র সে তার প্রতি বাড়ীওয়ালি আপার এতো নরম ব্যবহারের কারণ খুঁজে পায়। ঈদের দিনে অতিরিক্ত কিছু কাজ করিয়ে নিতেই এতো রাখঢাক। সোজা বললেই তো হত।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায় ফাতুর মা। হৃদয়ে জমে উঠা আরো কিছু বিবর্ণতাকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়।

চাচা কাহিনী

অবসর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *