মায়ের কোলে মূসা (আঃ) – ৩য় পর্ব

মায়ের কোলে মূসা (আঃ) – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

মূসা (আঃ) এর বোন তাদের প্রশ্নের ধারা এবং কথাবার্তার ধরন ধারণে বুঝে ফেললেন, দাসীরা তাকে সন্দেহ করছে সুতরাং তারা যদি কোন ভাবে তার পরিচয় উদঘাটন করতে পারে তবে অত্যন্ত দুঃখজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

এ সব ভেবে তিনি খুবই অস্থির হয়ে পড়েন, কিন্তু তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে এমন এক ভাব দেখালেন যাতে ধাত্রী অন্বেষণকারী ফেরআউনের দাসীরা বুঝতেই না পারে যে, তাদের প্রশ্নের কারণে তিনি বিব্রতবোধ করেছেন।

তিনি দাসীদের চিন্তা ভিন্ন খাতে ধাবিত করার উদ্দেশ্যে বলেন-আমি যে বলছি, আমার সন্ধানদাতা ধাত্রী পরিবার শিশুটির মঙ্গলাকাঙ্খী হবে- এর দ্বারা আমি একথাই বুঝাতে চেয়েছি যে, শিশুটিকে স্তন্যদানের দায়িত্ব পেলে তারা ফেরআউনের নিকটজনে পরিণত হবে। ফলত তারা শিশুটিকে খুব বেশি স্নেহ মমতা করবে এবং তার হিতাকাঙ্খী হবে।

দাসীরা তার কথায় নিশ্চিত হয়ে বলল, তা হলে তোমার এ ধাত্রীকে এখানে নিয়ে আস। আমরা বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখি। মূসা (আঃ) এর বোন যখন দেখলেন দাসীরা তার জবাবে নিশ্চিন্ত হয়েছে এবং তাদের সন্দেহ দূরীভূত হয়েছে, তখন তিনি তার মায়ের নিকট ফিরে গিয়ে সব ঘটনা বিবৃত করেন এবং তাঁকে সাথে করে দাসীদের অবস্থান স্থলে যান।

তাকে দেখে দাসীরা বলল, এ মেয়েটি আপনার কথা আমাদেরকে বলেছে, আপনি শিশুটিকে দুগ্ধ স্তন্য পান করাতে পারেন কিনা দেখুন। তাদের কথায় মূসার মাতা শিশু মূসাকে কোলে নিয়ে মুখে স্তন্য দিতেই তিনি পান করা শুরু করে দেন। এমনকি তিনি পেট পুরে স্তন্য দুগ্ধ পান করেন।

এ দৃশ্য দেখে দাসীরা খুবই আনন্দিন হয়। খুশীতে আত্নহারা হয়ে সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে তারা আছিয়াকে এ সুংবাদ দেয়। এ সংবাদ শুনে আছিয়ার মনে দুশ্চিন্তার যে কালো ছায়া পড়েছিল তা দূর হয়।

তাঁর পাহাড়সম পেরেশানী নিমেষে দূর হয়ে যায়। তিনি দাসীদেরকে বলেন, সে ভাগ্যবতী ধাত্রীকে আমার নিকট নিয়ে আস। দাসীরা ধাত্রীরূপে মূসার মাতাকে সম্রাজ্ঞী আছিয়ার নিকট নিয়ে যায়।

আছিয়ার সাথে সাক্ষাতে মূসার মাতা বুঝতে পারলেন সম্রাজ্ঞী এ শিশুর প্রতিপালনের জন্য একান্ত উন্মুখ হয়ে আছেন। সুতরান আছিয়া তাঁকে ধাত্রী নিয়োগ করতে সম্মত রয়েছেন।

আছিয়া আছিয়া এ সময় ফেরআউনকে ডেকে আনে। স্বামী স্ত্রী উভয়ে স্বচক্ষে শিশুটির দুগ্ধপানের দৃশ্য দেখে পাপাত্না ফেরআউন ঘোরতর সন্দেহে পতিত হয় এমনকি সে বলেই ফেলল আমার সন্দেহ তুমিই এ শিশুর মান।

নতুবা সে এ পর্যন্ত কারো স্তন্য পান করনি অথচ তোমার স্তন্য সে স্বচ্ছন্দে পান করছে। মূসার মাতা জবাবে বলেন, আমি এক শুচি শুদ্ধ পবিত্র নারী। তাই আমার স্তন্যে বিশেষ ধরনের স্বাদ ও সুগন্ধযুক্ত।

তদুপরি আমার স্তন্য খুবই মিষ্টি মধুর এবং কোমল। আর স্তন্যের এ বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো জন্মগতভাবে শিশুটির অত্যন্ত প্রিয় বলে আমার মনে হয়। এ জন্যই সম্ভবত সে আমার স্তন্যপানে এতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। মূসা মাতার যুক্তিপূর্ণ জবাব ফেরআউনের মনঃপূত হয়। তাই সে এ ব্যাপারে আর বেশি দূর এগোয়নি।

মায়ের কোলে মূসা (আঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।