মাতালদের কথা
আবুল জাওয়াল মাগরাবী (রহঃ) বলেন, একদা এক নেক্কার ব্যক্তির সাথে আমি বাইতুল মোকাদ্দাসে বসা ছিলাম। হঠাৎ কোথা হতে এক যুবক আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হল। যুবক মসজিদের ভেতর প্রবেশ করে চিৎকার করে বলতে লাগল, হে আল্লাহ! আমাকে এ দুনিয়া হতে মুক্তি দাও।
আমি এগিয়ে গিয়ে যুবককে বললাম তুমি যা বললে, তা তো কোন মাতালের কথা বলে মনে হয় না। এ হেকমতের কথা তুমি কোথায় শিখেছ? সে উত্তর দিল যে ব্যক্তি এখলাসের সাথে খেদমত ও ইবাদত করে আল্লাহ পাক তাকে অসাধারণ হেকমতের বিষয় শিক্ষা দান করেন। আর আমি পাগল নই। আল্লাহ পাকের ভয়ে আমার মাঝে এ পেরেশানী কাজ করে।
অতঃপর সে কয়েকটি বয়াত পাঠ করল। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনলাম। এবং বললাম তুমি চমৎকার বয়াত পাঠ করেছ। তোমাকে যে পাগল বলেছে সে ভুল করেছে। এবার সে আমার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে বলল, বলতে পার, তরীকত পন্থী ভাইদের মরতবা কত? তাঁরা নিজের চরিত্রকে যাবতীয় নাপাকী হতে পবিত্র রেখে সামান্য রিজিকের উপর তুষ্ট রয়েছে। সততা ও খোদাভীতি তাদের ভূষণ।
আল্লাহর মোহাব্বতের সন্ধানে পেরেশান হয়ে তাঁরা লোকালয় ত্যাগ করে পাহাড় পর্বত ও বিরান জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের দৃষ্টি হতে অদৃশ্য হয়ে গেলেও কেউ তাদের সন্ধান করে না। জনসম্মুখে উপস্থিত থাকলেও কেউ তাদের পরিচয় পায় না। তাঁরা ইন্তেকাল করলে কেউ সন্ধান লইতে আসে না। একথা বলে অদৃশ্য হয়ে গেল। আবুল জাওয়াল বলেন, যুবকের এ বক্তব্য শুনার পর আমি দুনিয়াদারীর কথা একেবারেই ভুলে গেলাম।
জনৈক সুফী বর্ণনা করেন, আমরা কয়েক ব্যক্তি এক পাগল খানা পরিদর্শনে গেলাম। সেখানে এক যুবকের অবস্থা ছিল করুন। আমরা তাঁর অবস্থা জানার উদ্দেশ্যে তাঁর দিকে অগ্রসর হওয়ামাত্র সে চিৎকার করে বলে উঠল, ভাই সকল! কতিপয় লোক কি সুন্দর নকশিদার জুব্বা পরে বেড়াচ্ছে। তাদের দেহ হতে কি সুন্দর আতরের ঘ্রান বের হচ্ছে। তাঁরা দ্বীন দুনিয়ার সব কাজকর্ম ত্যাগ করে অর্থহীন বিষয়ের পেছনে ছুটছে।
আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা তোমাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করলে তুমি কি তার সঠিক জবাব দিবে? জবাব দেয়। আমরা জিজ্ঞেস করালাম, সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ কে? সে জবাব দিল, যে ব্যক্তি কোন মুসীবত হতে মুক্তি পাবার পর সে মুসীবতের অপর কোন মানুষকে লিপ্ত দেখার পরও তা হতে শিক্ষা গ্রহণ করে না এবং অর্থহীন কাজে সময় নষ্ট করে।
যুবকের কথা শুনে আমাদের দিল নরম হয়ে গেল। তাকে আবার বললাম কিছু উত্তম চরিত্রের কথা বল। সে সংক্ষেপে বলল, তোমাদের স্বভাবের বিপরীত যা তাই উত্তম চরিত্র। অতঃপর সে আমাদেরকে প্রহার করতে উদ্দত হলে আমরা তথা হতে প্রস্থান করলাম।