মহা সত্যের সন্ধানে হযরত জন্নুন মিশরী (রহঃ)
বিখ্যাত বুজুর্গ হযরত জুন্নুন মিশরী (রহঃ) বলেন, একবার আমি এক আরবীয় বুজুর্গী ও কামালিয়াতর তারীফ শুনে তাঁর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ভ্রমনে বের হলাম। দীর্ঘ পথ অতিক্রমের পর সে বুজুর্গের সাথে সাক্ষাত করে আমি তাঁর খেদমতে চল্লিশ দিন অবস্থান করলাম। কিন্তু আমার নিজের ইবাদত বন্দেগীর ব্যস্ততার কারণে সেই বুজুর্গ এলেম দ্বারা আমার বিশেষ উপকৃত হওয়ার সুযোগ হয়নি।
একদিন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথাকার অধিবাসী? উত্তরে আমি আমার বিস্তারিত পরিচয় দিলাম। আমার পরিচয় পাওয়ার পর তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমার নিকট কি উদ্দেশ্যে এসেছ? আমি আমার আগমনের উদ্দেশ্যে ব্যক্ত করে বললাম, আপনার নিকট হতে এমন এলেম অর্জন করতে এসেছি যা দ্বারা আল্লাহর পথের সন্ধান পাব। এবার তিনি বললেন, আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং তাঁর উপরই ভরসা কর। একমাত্র তিনিই তোমার সঙ্গভাব ভাব এবং তিনিই সকল প্রশংসার উপযুক্ত।
এই পর্যন্ত বলার পর তিনি চুপ হয়ে রইলেন। আমি আরজ করলাম, আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। আপনি আরো কিছু নসীহত করুন। আমি একজন মুসাফির। আমার মনের কিছু প্রশ্নের সমাধান পাওয়ার উদ্দেশ্যে বহু দূর হতে ভ্রমন করে আপনার খেদমতে উপস্থিত হয়েছি। এবার তিনি জানতে চাইলেন, তুমি কি শিক্ষার্থী না আলেম? নাকি বিতর্ককারী? আমি বললাম, আমি একজন শিক্ষার্থী।
তিনি বললেন, যদি শিক্ষার্থী হয়ে থাক তবে একজন শিক্ষার্থীর মতোই আদরের সাথে প্রশ্ন কর। কেননা, এক্ষেত্রে যদি তুমি আদবের কোন ক্রুটি কর, তবে শিক্ষক হতে উপকৃত হতে পারব না। অতঃপর বললেন, বুদ্ধিমান আলেম এবং আরেফ ও মুফতীরা সর্বদা সততা ও আনুগত্যের পথে চলেন, তারা নৈকট্য ও পরিচ্ছন্নতার হাতিয়ার দ্বারা দুঃখ ও মুসীবতের জঙ্গল সাফ করে জাহেরী ও বাতেনী দেহের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করেন। আমি বললাম, আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন।
মানুষ কেমন করে ঐ মর্যাদা অর্জন করতে পারে? তিনি বললেন, মানুষ যখন দুনিয়ার যাবতীয় আসবাব ও মানুষের সংস্রব ত্যাগ করে তখনই সে ঐ মর্যাদায় পৌঁছতে সক্ষম হয়। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ঐ মর্যাদায় পৌঁছাবার সহজ উপায় কি? তিনি বললেন, মানুষ যখন দুনিয়ার যাবতীয় শক্তি ও সামর্থ ত্যাগ করে এমন অবস্থায় উপনীত হয় যখন তাঁর মালিকানায় আর একটি তিল পরিমাণ বস্তু না থাকে এবং নিজের সম্পর্কে ও সে কিছুই বলতে পারে না তখনই সে ঐ মর্যাদা লাভ করে থাকে।