মন্ত্রীত্বের পদমর্যাদায় হযরত ইউসুফ (আঃ)-২য় পর্ব

মন্ত্রীত্বের পদমর্যাদায় হযরত ইউসুফ (আঃ)-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আজিজ মেছের বললেন, “রাজা বাহাদুর! আমি যে অন্যায় আপনার সাথে করেছি এবং মিথ্যা কথাগুলো বলেছি তাতে আমি দ্বিতীয়বার আপনাকে মুখ দেখাতে ভীষণ লজ্জাবোধ করছি। বিশেষ করে আপনার পরিষদবর্গ আমার কথা শুনে আমাকে একটি গাদ্দার, মিথ্যাবাদী মনে করেছে। এমতাবস্থায় আমি আর দ্বিতীয়বার দরবারে গিয়ে সকলের সম্মুখে উপস্থিত হব কোন মুখে। এছাড়া আমি মানসিক দিক দিয়ে খুব অসুস্থতা বোধ করছি। আমার স্ত্রীর পক্ষ থেকে যে আঘাত আমি পেয়েছি তা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি বোধ হয় আর বেশিদিন বাঁচব না।

 আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। ইউসুফ সম্বন্ধে আমার আবেদন হল, ইউসুফের এর ন্যায় একটি সচ্চরিত্রবান ছেলে এ যুগে পৃথিবীতে আছে বলে আমার মনে হয় না। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে অশেষ রূপ দিয়েছেন, অগাত জ্ঞান দিয়েছেন, অসাধারণ বুদ্ধি দিয়েছেন, নেতৃত্বের সমুদয় গুণাবলী দিয়ে তাঁকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এছাড়া ধর্মানুরাগ তাঁর একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। যা নিরীক্ষণ করলে তাঁকে ভক্তি শ্রদ্ধা না করে উপায় নেই। এছাড়া আরো অশেষ গুণের অধিকারী এই বালক ইউসুফ। অতএব আপনি রাজকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দিধায় তাঁর সাহায্য নিতে পারেন।

আমি মনে করি তাতে আপনার রাজ্যে শ্রীবৃদ্ধি অনেকগুণ বেড়ে যাবে এবং আপনার পরিশ্রম লাঘব হবে। বিশেষ করে আগামী দুর্ভিক্ষের দিনের মহা সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য তাঁর কার্যকারী ভূমিকার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন হলে আপনি তাঁকে কয়েকদিন কাছে রেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিতে পারেন। হে মহান প্রভু! আমি আমার এ অন্তিম সময়ে আপনার নিকট যা বলছি তাঁর প্রতিটি অক্ষর সত্য। পুনরায় শপথ করে বলছি, আমার কথা সম্পূর্ণ সত্য। এর মধ্যে সামান্য মিথ্যার বালাই নাই।

রাজা আজিজ মেছেরের কথা শুনে বললেন, “ এখন আমি ইউসুফ (আঃ)-কে তোমার পদে রাখতে চাই। এ বিষয়ে তোমার বক্তব্য কি? “ আজিজ মেছের বললেন,“আমি এটাই ইঙ্গিতে আপনার নিকট বলতে চেয়েছিলাম। কারণ আপনার প্রতি ও মিশর রাজ্যের প্রতি হৃদয়ের এক বিরাট আকর্ষণ রয়েছে। মিশরের সর্বত্র আমার কীর্তির অসংখ্য নিদর্শন দাঁড়িয়ে আছে। আমি সেগুলোকে চিরদিনের জন্য স্মরণীয় করে রাখতে চাই। অতএব যোগ্য নেতৃত্ব ব্যতীত সেগুলো যথাযোগ্য মান-মর্যাদা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। তাই আপনার নিকট ইউসুফের নিয়োগ সম্বদ্ধে শেষ নিবেদন করছি। আপনি আমার জন্য দোয়া করুন।

রাজা আজিজ মেছেরের কথাবার্তা শুনে তাঁর মঙ্গল কামনা করে সেখান থেকে বিদায় গ্রহণ করলেন। দরবারে এসে দেখলেন হযরত ইউসুফ (আঃ) দেশবাসীর প্রতি আগামী সাত বছরের জন্য একটি নির্দেশ জারি করার লক্ষে লেখাপড়া সমাধা করে রাজার আদেশের জন্য অপেক্ষা করেছেন। নির্দেশটি ছিল নিম্নরূপ – আগামী সাত বছর পর্যন্ত দেশের সকল শস্য উৎপাদনকারগণকে সকল শস্যের ওশর (উৎপাদিত ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ) রাজকোষে জমা দিতে হবে। রাজা হযরত ইউসুফ (আঃ) এর দূরদর্শিতা দেখে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং নির্দেশটি দেশের সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার জন্য কর্মকর্তাদেরকে আদেশ দিলেন।

অতঃপর রাজা হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করলেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, “ জাহাপনা! আমি এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে সম্মত নই। কারণ মিশরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এখন পর্যন্ত আজিজ মেছের সাহেব সমাসীন আছেন। তিনি আমার পির্ততুল্য মুরব্বি, তিনি আমাকে আমার মহা বিপদের দিনে আশ্রয় দিয়েছেন এবং অত্যন্ত যত্ন সহকারে দীর্ঘ সাত বছর যাবত আমাকে প্রতিপালন করেছেন, অতএব আমি তাঁহার বর্তমান থাকা অবস্থায় তাঁর পদে অধিষ্ঠিত হতে পারি না। এটা হবে আমার জন্য চরম অকৃজ্ঞতা ও বে-আদবী।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

মন্ত্রীত্বের পদমর্যাদায় হযরত ইউসুফ (আঃ)-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।