“অন্ধকার আর ঘন কুয়াশা ভেদ করে বেরিয়ে এলো তিনটে ছায়ামূর্তি। প্রথম জন একটু খাটো- সেই সাথে মানানসই একটা মেদযুক্ত পেট। পেছনের দুইজন- বোঝাই যায় তারা চামচা গোছের কেউ- বেশ লম্বা,স্বাস্থ্যটাও সেরকম দশাসই। একইসাথে তাদের দুইজনের হাতে জ্বলে উঠলো দুটো শক্তিশালী টর্চ, আলো এসে পড়লো আমার চোখে। প্রথম ছায়ামূর্তির কথা শুনতে পেলাম। -‘তারপর, সিনর মজিদ, আরো একবার আমাদের দেখা হয়ে গেলো। এবং এইবার…এইবার কিন্তু আমিই জিতবো !!!’ চোখে আলো সইয়ে নিতে সময় লাগলো, কিন্তু কণ্ঠের মালিককে চিনে নিতে বেগ পেতে হলো না। ইউরোপের ১১টা দেশের পুলিশ যার সাথে চোরাচালান আর মাফিয়া চক্রের সম্পৃক্ততা নিয়ে নিশ্চিত,কেবল প্রমাণের অভাবে লোকটাকে ধরতে পারছে না- ইতালিয়ান ধনকুবের, গুইসেপ্পে মিয়াজ্জা।
আমার পুরোনো শত্রু, মহারাজ বিজয়কুমারের গুপ্তধন উদ্ধারের সময় যাকে ধোঁকা দিয়ে আটকে রেখেছিলাম দক্ষিণ ভারতের ইলোরা গুহায়। -‘সিনর মিয়াজ্জা যে,’ আমি বললাম। ‘আসুন , আসুন। আপনার জন্যেই তো এতোক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। ভাবছিলাম বটে কে হতে পারে, কিন্তু আপনিই যে আবার প্রতিপক্ষ হবেন; সত্যি বলছি, এতোটা আন্দাজ করতে পারিনি।’ -‘বটে, আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলে?? তা বেশ। কিন্তু সাবধান করে দেই সিনর মজিদ, এবার কিন্তু ভারতের মত আমার হাত থেকে নিস্তার পাবে না। কারণ,তুরুপের তাস এবার আমার হাতে।’ -‘সে তো নিশ্চয় সিনর মিয়াজ্জা। অর্ধেক পৃথিবী পাড়ি দিয়ে রাত দুপুরে এই যে পেরু সীমান্তে পারিন হ্রদের ধারে দাঁড়িয়ে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছি- এতো সেই তুরুপের তাসের জন্যেই!! আমার গুরু- স্যার রিচার্ড বার্টনের অপহরণও তাহলে তোমার কাজ ?’ -‘হা হা ! সে আর বলতে ! বুড়ো মানুষ, তার ওপর আবার এল ডোরাডোর ম্যাপের অর্ধেক তাঁর কাছে আছে, আর যে ভাষায় লেখা-সেই প্রাচীন কিচুয়া লিপির তিনি এক অন্যতম বিশেষজ্ঞ।
কী আর করা, তাঁকে অপহরণ না করে তো আর পারা গেলো না। কিন্তু তাও গন্ডগোল এড়াতে পারলাম কই ??’ -‘সে তো বটেই, তুমি নিশ্চয় ভেবেছিলে আতাহুয়াল্পার গুপ্তধন চুপিচুপি হাতিয়ে সরে পড়বে। তোমার তো আর জানার কথা নয়, ম্যাপের বাকি অর্ধেক গচ্ছিত এই আমার, মজিদ আহমেদের কাছে।’ -‘ঠিক,ঠিক। গোল বেধেঁছিলো বটে,সেটির সমাধান তো তুমিই করে দিলে। সশরীরে হাজির হয়ে গেলে এইখানে।’ -‘কী আর করা সিনর মিয়াজ্জা। আমার গুরু বৃদ্ধ মানুষ, তিনি কি আর তোমার অত্যাচার সহ্য করতে পারবেন?? কাজেই গুরুকে বাঁচাতে আমাকেই আসতে হলো।’ -‘এসেছো, তা বেশ করেছো। সুবুদ্ধি দেই বাপু, এবার আর বাড়তি চালাকির চেষ্টা করো না। করলে তুমি তো মরবেই,তোমার গুরু ও প্রাণটা হারাবে। এই , তোরা এটাকে ধরে আস্তানায় নিয়ে আয়।’ ষণ্ডা দুটো এগিয়ে এসে আমার হাত শক্ত করে পাঁকড়ে ধরলো। ঠিক এইভাবে, পেরু সীমান্তে আমি ঐ বদমাশ পিয়াজ্জার হাতে বন্দী হলাম।” মজিদ ভাই থামলেন।
ক্যাফেটরিয়ার নিষ্কর্মা কর্ণারে বসে থাকা আমি, নারীলিপ্সু কবির, ঘুমকাতুরে নান্টু আর টিচার ফরহাদ শ্বাস চেপে শুনছিলাম। সাথে সাথেই প্রশ্ন ছুঁড়লাম,’ তারপর ?? তারপর কী হলো মজিদ ভাই ??’। -‘বলছি। তার আগে-তোকে বলছি পিপুল- যা একখানা ফান্টা নিয়ে আয়। গলাটা শুকিয়ে গেলো।’ -‘আবার আমি?’, আমি বিরক্ত প্রকাশ করি। ‘খানিক আগেই না তোমায় একটা খাওয়ালাম মজিদ ভাই ?’ -‘চোপ! মুখের উপর কথা! নিজে ফ্রী কুপন পেয়ে ভালো মন্দ সাঁটাবেন,আর আমাদের বেলায় কেবল একটা ফান্টা?? যা,তোর শাস্তি। ফান্টার সাথে বেয়াদপির নিদর্শন হিসেবে একটা চীজ বার্গারও নিতে আসবি। যা, যা বলছি।’ হাঁড়ির মত মুখ করে আমাকে যেতে হলো। এনে দিলাম বার্গার আর ফান্টা।
মজিদ ভাই আয়েশে বার্গার চিবোচ্ছেন,নান্টু ঘুমাচ্ছে, ফরহাদ ল্যাপটপে একটা নেটওয়ার্কিং এর ঝামেলা সমাধান করছে আর কবির পাশের টেবিলের বার্মিজ বার্মিজ চেহারার মেয়েটির উদ্দেশ্যে মধুর হাসি দেয়া প্রাকটিস করে চলেছে। এই ফাঁকে আমি বরং আজকের আড্ডার প্রথমাংশ বর্ণনা করি। ক্যাফেটরিয়ার নিষ্কর্মা কর্ণারে আজকের আড্ডাটা বড়ই গোলমালে শুরু হলো। পিজা হাটের ৪৫০ টাকায় আনলিমিটেড অফারটার একটা ফ্রী কুপন আমি পেয়েছি। তাই নিয়েই ঐ বদমাশ কবিরটা গোল বাঁধালো। তার দাবি, সেই কোন নব্য-প্রস্তর যুগে আমি তার কাছ থেকে ৪৫০ টাকা ধার করেছিলাম, তার বিনিময়ে এই ফ্রী কুপন তার প্রাপ্য। আমি তাকে রীতিমত ভদ্রতার সাথে বললাম যে- তার প্রাপ্য হচ্ছে মাত্র ৪৫০ টাকা। এইরুপ আনলিমিটেড অফার তার বদলে তাকে দেয়া রীতিমত বেআইনী হয়ে যাবে। কৃতঘ্নটা এই যুক্তি মানতেই চাইলো না। তার দাবি হলো ফ্রী কুপন,নচেৎ নগদ ৪৫০ টাকা। নগদ টাকা কি দেয়া সম্ভব ? আপনারাই বলুন। ছোটলোকটা রীতিমত হট্টগোল লাগিয়ে দিলো।
নিষ্কর্মা কর্ণারে নান্টুর ঘুম প্রায় ভেঙ্গে যায় যায় অবস্থা!! ঠিক এই সময়ই এসে হাজির হলেন মজিদ ভাই।হ্যাঁ,হ্যাঁ-সেই মজিদ ভাই, বিগত একশ বছরে পৃথিবীর ইতিহাস আর ভূগোলে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই যাকে ছাড়া অনুষ্ঠিত হয়নি। কবির শয়তানটা তার কান ভারী করতে বিলম্ব করলো না,’দেখুন না মজিদ ভাই, এই পিপলুটা আমাকে আমার প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না।’ -‘বটে,টাকা দিচ্ছে না ?? কী বৃত্তান্ত বল দেখি শুনি।’ সবিস্তারে বর্ণনা শুনে মজিদ ভাই নিজেই আগ্রহী হয়ে উঠলেন। -‘বটে, ফ্রী অফার ?? শোন,তোরা হলি ছেলেমানুষ। অযথা গিয়ে অফারটা এভাবে নষ্ট করিসনে। তারচেয়ে বরং ওটা আমায় দে।’ আমি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলাম। ‘না, কক্ষনো না! মজিদ ভাই, ক্যাফেতে না হয় তোমায় দুয়েকটা কোক খাওয়াই। কিন্তু তা বলে এমন চাঁদপানা কুপন আমি তোমার হাতে তুলে দেবো ?? ছি ছি, এটা তো ঠিক না।’আমি সযত্নে বুকপকেটে কুপনটা তুলে রাখলাম। মজিদ ভাই প্রচন্ড আশাহত হলেন। ‘দিবি না বলছিস ?? আচ্ছা,বেশ। অফারটা আমার পছন্দ হয়েছে,একটা কুপন তাহলে জোগাড় করতে হয়। …আচ্ছা,তুই বরং আপাতত একটা ফান্টাই খাওয়া।’ আমি তো মহাখুশি।
যাক,মাত্র ১২ টাকার ফান্টার উপর দিয়ে ঝড়টা গেলো। সানন্দে নিয়ে এলুম ফান্টা। টিচার ফরহাদ এর মাঝে নান্টুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো। মজিদ ভাই কবিরকে বললেন,’রাগ করিসনি। পিপলে ছোঁড়া আসলে ছেলে মন্দ নয়।’ -‘হুঁ, একেবারে সোনার ছেলে !’কবিরের গলায় ক্ষোভ। -‘সোনার ছেলে… সোনার ছেলে…’,মজিদ ভাই বিড়বিড়িয়ে উঠলেন। ‘এই পেয়েছি, সোনার ছেলেকে একটা সোনাদানা ভর্তি গপ্পো শোনাই। এই ফরহাদ,এল ডোরাডো মানে জানিস ?’ -‘এল ডোরাডো ?? মানে ঐ যে সোনার শহর ??’ -‘তা মোটামুটি ঠিকই বলেছিস। কিন্তু শহর নয় রে, এল ডোরাডোর আক্ষরিক অর্থ করলে সেটা দাঁড়ায় সোনার মানুষ। কিন্তু কিংবদন্তী অবশ্য বলে একটা সোনার শহরের কথা।’ ফরহাদ বাদে আমরা বাকি তিনজন অবাক হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকি। আমাদের এই হতবিহবল ভাব মজিদ ভাইয়ের দৃষ্টি এড়ালো না। উদাস উদাস মুখে চোখ মুদে তিনি তাঁর গল্প শুরু করলেন। -“১৫৩২ সাল। স্প্যানিশ সেনাপতি ফ্রান্সিস্কো পিজারো তাঁর ছোট্ট একটা সেনাদল নিয়ে এসে পৌঁছলো পেরুর উপকূলে। সেই সময় পেরুতে ছিলো ইনকা সম্রাজ্য- আর ইনকাদের রাজা ছিলেন আতাহুয়াল্পা। ধুরন্ধর পিজারো রাজা এবং তাঁর প্রধাণ অমাত্যদের নিমন্ত্রণ জানালো এক ভোজে।
রাজা আতাহুয়াল্পা সে নিমন্ত্রণে সাড়া দিলেন এবং বন্দী হলেন পিজারোদের হাতে। রাজা আতাহুয়াল্পা পিজারোকে জানালেন- মুক্তিপণ হিসেবে তিনি ৬০ ঘনমিটার আকারের একটি ঘর স্বর্ণ এবং অনুরুপ দুইটি ঘর রৌপ্য দিয়ে ভরে দিবেন। রাজি হলো পিজারো। সে সময় ইনকারা সূর্যের পূজারী ছিলো। স্বর্ণ ছিলো তাদের দৈনন্দিন জীবনে বহুল প্রচলিত একটা ধাতু। কিংবদন্তী বলে,সূর্যের আলোকে ব্যবহার করে ইনকারা সোনা তৈরীর কৌশল জানতো। আর তাদের ছিলো এক স্বর্ণ-শহর, যার নাম এখনকার ঐতিহাসিকেরা দিয়েছেন এল ডোরাডো। যাই হোক, এবার মূল গল্পে আসি। ১১০০ লামার পিঠে স্বর্ণের মূল্যবান সংগ্রহ নিয়ে রাজধানী কুজকোর দিকে অগ্রসর হলো ইনকারা। পিজারোর ঘর ধীরে ধীরে ভর্তি হয়ে উঠতে লাগলো সোনা রুপায়। কিন্তু হঠাৎ পিজারোর ধারণা হলো- রাজা আতাহুয়াল্পাকে জীবন্ত ছেড়ে দিলে হয়তো ইনকাদের মাঝ থেকে পালাতে পারবে না। তাই হত্যা করা হলো রাজা আতাহুয়াল্পাকে।
আর সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী অভিমুখী ইনকারা তাদের স্বর্ণসম্ভার লুকিয়ে ফেললো অ্যাজানগার পর্বতমালার গহীনে- বলা হয় এল ডোরাডোতে।ফ্রান্সিস্কো পিজারো যুদ্ধে পরাজিত করলো ইনকাদের- যারা সংখ্যায় ছিলো প্রায় হাজার চারেক। কী বললি ?? পিজারোর সৈন্য সংখ্যা ? সেটা ছিলো নিতান্ত নগণ্য। কেউ বলে ১৬৮ জন,কেউ বলে ১৮০ জন। কিন্তু তাদের কাছে দুটো মারাত্বক জিনিস ছিলো- বন্দুক আর ঘোড়া। আদিবাসী ইনকারা এর সাথে এঁটে উঠতে পারলো না। পিজারো পেরুতে স্প্যানিশ রাজত্ব কায়েম করলো- কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পেলো না সেই স্বর্ণনগরী। শুধু পিজারো নয়,খুঁজে পেলো না কেউই। পরবর্তী ৪০০ বছরে কত বিখ্যাত অভিযাত্রী লাতিন আমেরিকা চষে বেড়ালো এই এল ডোরাডোর খোঁজে, কেউই সফল হলো না। আমার কাছেও এই এল ডোরাডো একটা ব্যাখ্যাতীত রহস্য হয়েই থাকতো, যদি না… যদি না বলিভিয়ার স্যান ইগনাসিও শহরে আমার আর স্যার রিচার্ড বার্টনের সাথে এক বুড়োর দেখা হয়ে যেত। স্যার রিচার্ড আর আমি সে সময় বলিভিয়ায়, একটা সম্মেলনে অংশ নিতে গেছি। দুইদিনের সম্মেলন শেষে আমি আর স্যার রিচার্ড বেরোলাম শহরটা ঘুরে দেখতে।মাঝারী মানের একটা পাবে ঢুকে দুজন দুই গ্লাস লেমোনেডে চুমুক দিচ্ছি, আর টুকটাক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি- ঠিক এই সময় ঘটনাটা ঘটলো। পাবে ঢুকেই এক বুড়ো দৌড়ে এলো আমাদের দিকে।
এলোমেলো চুল, অগোছালো বেশভূষা, পাগলাটে মুখ। হতচকিত স্যার রিচার্ডের দিকে চেয়ে বুড়ো প্রশ্ন ছুঁড়লো-‘আপনিই কি বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক আর প্রাচীন ভাষার বিশেষজ্ঞ স্যার রিচার্ড বার্টন ??’ স্যার রিচার্ড বিহবল মুখে মাথা নাড়তেই বুড়ো তাঁর হাতে একতাড়া কাগজ গছিয়ে দিলো। ‘নিন, এটা রাখুন।’ স্যার রিচার্ড অপ্রস্তুত হয়ে সেটা নিতে গড়িমসি করছিলেন, ‘ঈশ্বরের দোহাই,এগুলো ধরুন। আমি জানি আপনারা রিসোর্ট স্যান ইগনাসিওতে উঠেছেন- কাল দেখা হবে। সকাল দশটা,রিসোর্ট লবিতে।’ এই বলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুড়ো বেরিয়ে গেলো পব থেকে- রেখে গেলো হতভম্ব দুই প্রত্নতাত্ত্বিক আর একতাড়া কাগজ। হুঁশ ফিরে পেয়েই ছুট লাগালাম দরজার কাছে,কিন্তু লাভ হলো না। অন্ধকারে বুড়ো মিলিয়ে গেছে। ফিরে এলাম টেবিলে,দেখলাম স্যার রিচার্ডের মুখ উত্তেজনায় লাল বর্ণ ধারণ করেছে। ‘মজিদ, দ্রুত হোটেলে ফিরে চলো। প্রাচীন কিচুয়া ভাষার এক অনন্য পার্চমেন্ট এখন আমার হাতে। যা ভাবছি তা যদি সত্য হয়,তাহলে আমাদের সামনে এক চমৎকার অভিযান অপেক্ষা করছে।’
হঠাৎ গলা নামিয়ে ফেললেন তিনি, ফিসফিসিয়ে বললেন,’এল ডোরাডো !!’ আর কথা চলে না। বুড়োর রেখে যাওয়া পার্চমেন্ট আমার মাঝেও কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছে। ফিরে এলাম হোটেলে। রুমে ঢুকেই স্যার রিচার্ড ব্যস্ত হয়ে পড়লেন পার্চমেন্টের মাঝে। ঝাড়া দুঘন্টা পর মুখ তুললেন। -‘মজিদ, যা ভেবেছিলাম- তাই সত্য হয়েছে। এ পার্চমেন্ট আসলে একটা ম্যাপ-প্রাচীন কিচুয়া ভাষায় লেখা। এখানে বলছে একটা বিশেষ জায়গার কথা। লেখকের দাবি এল ডোরাডোর গুপ্তধনের একটা অংশ এখানে লুকিয়ে রাখা।’ -‘স্যার রিচার্ড, আমার খটকা লাগছে অন্য জায়গায়। কে এই বুড়ো ?? বিনা কারণে আমাদের হাতে এই পার্চমেন্ট তুলে সে কেনো দিলো ?? সেই বা এই পার্চমেন্ট পেলো কোথায়??’ -‘তার উত্তর পাবে এই চিঠিটাতে।’স্যার রিচার্ড আলাদা আরেকটা কাগজ তুলে ধরলেন,সেটা অপেক্ষাকৃত নতুন। ‘এই চিঠিটা ঐ বুড়ো লিখেছে,আমাকে উদ্দেশ্য করে। চিঠির সার কথা হলো- বুড়োর নাম মাশুপা। তার কোন এক পূর্বপুরুষ ছিলো ইনকাদের সূর্যদেবের মন্দিরের পুরোহিত। ফ্রান্সিস্কো পিজারোর মুক্তিপণ দেয়ার জন্যে সেই পূজারী দুটো লামার পিঠে চড়িয়ে মূল্যবান স্বর্ণের অলংকার নিয়ে যাচ্ছিলো রাজধানী কুজকোর উদ্দেশ্যে।
কিন্তু রাজার হত্যা সংবাদ পেয়ে সে তার স্বর্ণালংকার লুকিয়ে ফেলে কোন এক পাহাড়ি উপত্যকায়। এই পার্চমেন্টটা সেই পূজারীর লেখা।’ -‘তাই যদি হয়,স্যার রিচার্ড-ধরে নিচ্ছি বুড়ো মাশুপা আমাদের সাহায্যে এই পার্চমেন্টের পাঠোদ্ধার করে ঐ গুপ্তধন খুঁজে বের করতে চায়। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, বুড়ো অমন আচরণ করলো কেনো ??’ -‘এর উত্তর আমারও জানা নেই মজিদ। দেখি, কাল সকাল দশটায় বুড়ো তো আসবে বলে কথাই দিয়েছে। এই ফাঁকে আমি বরং রাতে পার্চমেন্টের অর্থটা বের করে ফেলি।’ … উত্তেজনার একটা রাত কাটলো। পরের দিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে আমরা দুজন অপেক্ষা করতে লাগলাম হোটেল লবিতে। স্যার রিচার্ডকে প্রশ্ন করলাম পার্চমেন্টের পাঠোদ্ধারের বিষয়ে। -‘মজিদ, পুরো পার্চমেন্টের অর্থ আসলে ঠিক ধরতে পারছি না। প্রথমাংশ পাঠ করতে আসলে ঠিক অসুবিধে হয়নি। এটা কেবল কিচুয়াতেই লেখা। সমস্যা হচ্ছে শেষের কয়েকটা বাক্যে। এটা কী ভাষা, তা আসলেই বুঝতে পারছি না। দুয়েকটা অক্ষর চেনা লাগছে কিচুয়া বলে- কিন্তু ঐ পর্যন্তই। এগোতে পারছিনা কিছুতেই।’ হতাশ হলাম আমি। তবে কি এল ডোরাডো রহস্যই থেকে যাবে ?? অপেক্ষা করতে লাগলাম বুড়ো মাশুপার জন্যে। হয়তো সে এর কোন সূত্র দিতেও পারে, ব্যাখ্যা করতে পারে তার গতকালের আচরণের।কিন্তু মাশুপা এলো না। সেদিন না, পরের দিনও নয়।
কেবল স্থানীয় সংবাদপত্রে ছাপা হলো- এক বুড়োর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে শহরের শেষ প্রান্তে। তার নাম মাশুপা। পকেটের পরিচয়পত্র থেকে বোঝা গেছে বুড়ো পেরুর নাগরিক ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে কোন চোরাচালান দলের সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিলো। ভাগের বনিবনা না হওয়াতে তাকে তার সহকর্মীরাই হত্যা করেছে। স্থানীয় পুলিশ জোর তদন্ত চালাচ্ছে। আমি আর দেরী করতে রাজি হলাম না। ‘স্যার রিচার্ড, দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নিন। এটা কোন চোরাচালান দলের কাজ নয় তা বেশ বুঝতে পারছি। এল ডোরাডোর এই পার্চমেন্টটাই কারো খুব প্রয়োজন। এখান থেকে পাততাড়ি গুটাতে হবে, নিরাপদ নেই আমরা।’ -‘সে কী মজিদ ?? এল ডোরাডোর রহস্য উদ্ধার না করেই চলে যাবো ??’ -‘স্যার, আপাতত আমাদের আর এই পার্চমেন্ট নিয়ে কিছু করবার নেই। প্রস্তুত হয়েই এরপর আসত হবে।আর স্যার, আমার মনে হয় পার্চমেন্টটা আপনার কাছে থাকা ঠিক হবে না।’ -‘কেনো মজিদ ?? তুমি কি ধারণা করছো আমাদের উপরও…?’ -‘হ্যাঁ স্যার। এই জাতীয় গুপ্তধন শিকারীরা তক্কে তক্কেই থাকে। আপনার উপর দ্রুত হোক,দেরীতে হোক- ওদের নজর পরবেই। আপনি বরং পার্চমেন্টটা দুই ভাগে ভাগ করুন।
এক ভাগ আপনার কাছে থাক, আরেকভাগ আমার কাছে।’ যেই কথা সেই কাজ। স্যার রিচার্ড দ্রুত পার্চমেন্টটার কপি করলেন, দুই ভাগে। নিজের কাছে রাখলেন যে অংশটার পাঠোদ্ধার করা হয়েছে সেটি,আমার কাছে রাখলেন অপর অংশ। আমার কথায় নিজেরটা তিনি সাথে রাখলেন না, পার্সেল করে পাঠিয়ে দিলেন ব্যাঙ্ক অভ লন্ডনে- স্যার রিচার্ডের বাস লন্ডনেই। কথা হলো সময় করে আমরা দুজনেই আবার বেরুবো এই লুকানো স্বর্ণের খোঁজে।কিন্তু সময় আর হলো না। আমি আর স্যার রিচার্ড দুজনেই ব্যস্ত থাকলাম নানা কাজে। কেটে গেলো পাঁচটা বছর। তারপর… তারপর একদিন খবর পেলাম প্রাচীন ভাষার বিশেষজ্ঞ স্যার রিচার্ড বার্টন নিখোঁজ়। কোন প্রমাণ না রেখেই তিনি নিরুদ্দেশ হয়েছেন। টনক নড়লো আমার। এবং যখন জানতে পারলাম নিরুদ্দেশের আগে স্যার রিচার্ড ব্যাঙ্ক অভ লন্ডন থেকে তুলে নিয়েছেন পাঁচ বছর আগে জমা রাখা একটা পার্সেল- সন্দেহ রইলো না আর। বুঝতে পারলাম স্যার রিচার্ডের অপহরণ করা হয়েছে কেবল মাত্র ঐ ইনকাদের গুপ্তধনের লোভেই। কাজেই স্যার রিচার্ড পার্চমেন্টের যে অংশ পর্যন্ত পাঠোদ্ধার করেছিলেন,সেই অংশের নির্দেশ মনে করে আমি পাড়ি দিলাম পেরুতে,স্যার রিচার্ড নিরুদেশ হবার দুদিন পর। আমি জানতাম সেই পার্চমেন্টের নির্দেশ মেনে পেরুর পারিন হ্রদেই দুষ্কৃতিকারীরা শেষ পর্যন্ত আসবে।
আর তাই আমি রাত নামতেই অপেক্ষা করতে লাগলাম হ্রদের ধারে।” এরপর মজিদ ভাই কীভাবে মিয়াজ্জার হাতে বন্দী হলেন- তা নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে। মজিদ ভাই এখন তাঁর খানাপিনা শেষ করে একটা সিগারেট ধরিয়েছেন। কাজেই তাঁর সাথে আমরা এখন ক্যাফেটরিয়ার নিষ্কর্মা কর্ণারে ফেরত আসি। -“বুঝলি, মিয়াজ্জার হাতে পাকড়াও তো হলাম। ষন্ডা দুটো আমায় বেঁধে নিয়ে ওঠালো একটা ক্যারাভানে। তারপর যাত্রা শুরু করলো, কে জানে কোথায়। মিনিট দশেক পর ক্যারাভানটা থামলো। হাত বাঁধা অবস্থাতেই আমাকে সেখান থেকে বের করে ঢোকানো হলো আরেকটা ক্যারাভানে। সেখানে ঢুকেই দেখতে পেলাম…,’স্যার রিচার্ড, যাক তাহলে দেখা হয়েই গেলো !’। -‘কে মজিদ ?? এসো এসো। এই বদমাশটাকে আমি কালই বলছিলাম তুমি আসবে। পার্চমেন্টের বাকি অংশ তোমার কাছে – এই কথা ওকে বিশ্বাস করাতে আমার যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে।’ -‘সেটা আমি সঙ্গে করে নিয়েই এসেছি স্যার, কিন্তু আপনি কি এবারো সেটার পাঠোদ্ধার করতে পারবেন ?’ আলাপের এই অংশে এসে নাক গলালো মিয়াজ্জা। ‘হয়েছে,হয়েছে। আর ন্যাকামি করতে হবে না।
ওহে মজিদ, তোমার গুরুকে একটু বোঝাও। তাঁকে বলো যে ঐ লেখার পাঠোদ্ধার ছাড়া তাঁর জীবনের কানাকড়ি মূল্যও আমার কাছে নেই।’ -‘শোন হে মিয়াজ্জা- যতটা সহজ ভাবছো, ততটা সহজ কাজ এটা নয়। লেখার মাঝে কোন চালাকি নিশ্চয় আছে। স্যার রিচার্ড সত্যিই এর অর্থ পুরো উদ্ধার করতে পারেননি।’ -‘ওসব চালাকি ছাড়ো মজিদ। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও। নয়তো… নয়তো ভারতে আমার সাথে যা করা হয়েছিলো তার শোধ এবার উসুল করবো।’হতাশ আমি আর স্যার রিচার্ড মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলাম, মিয়াজ্জা বেরিয়ে গেলো। স্যার রিচার্ড প্রথম অংশের সমাধান করেই রেখেছিলেন,আগেও বলেছি। পারিন হ্রদের দক্ষিণে এগিয়ে গিয়ে বেশ কয়েকটা পাহাড়ের মাঝ দিয়ে পৌঁছতে হবে একটা পাহাড়ী উপত্যকায়। কাজেই পরদিন সকালে রওয়ানা দিলো মিয়াজ্জার ক্যারাভান বহর। বদমাশটা তৈরী হয়েই এসেছে। সাথে তার সাতটা ক্যারাভান। একটায় সে থাকে, একটায় তার পোষা গোটা পাঁচেক ষণ্ডা, একটায় আমি আর স্যার রিচার্ড বন্দী। টুকটাক কাজ আর গুপ্তধনের উদ্ধারের জন্যে দশজন স্থানীয় আদিবাসীকে ভাড়া করা হয়েছে- তারা রয়েছে একটা ক্যারাভানে। আর তিনটের একটায় সব যন্ত্রপাতি-অস্ত্র-খাবারের গুদাম,অন্য দুটো আছে গুপ্তধন বয়ে নেবার জন্যে। সমাধান করা পার্চমেন্ট আমাদের নিয়ে গেলো একটা প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রে।
সেখানে রয়েছে আদিবাসী যোদ্ধাদের কবর। এই সমাধিক্ষেত্রের কোন একটা সমাধির নীচেই পাওয়া যাবে পূজারীর রেখে যাওয়া গুপ্তধন।…এবং ঠিক এই জায়গাটাতে এসেই আমাদের থমকে যেতে হলো। স্যার রিচার্ড অবশিষ্ট অদ্ভূত লিপির কোন সমাধানই করতে পারলেন না। মিয়াজ্জা প্রথমে রেগে গেলো, পরে হতাশ হয়ে বসে পড়লো। তার কথা মোতাবেক- প্রয়োজনে সে পুরো সমাধিক্ষেত্র বোমায় উড়িয়ে দেবে গুপ্তধনের জন্যে। পুরো দুইটা দিন সেখানে বেকার বসে রইলো সবাই। কেবল স্যার রিচার্ড একা চেষ্টা চালিয়ে গেলেন লিপির অর্থ উদ্ধারের। সমাধান পাওয়া গেলো দ্বিতীয়দিন বিকালে আর সেটা হলো… কেবল একটা এনামেলের বাটির জন্যে !! হ্যাঁ, ভুল শুনিসনি। ক্লান্ত স্যার রিচার্ড সেই বিকেলে একটা এনামেলের বাটিতে স্যুপ খাচ্ছিলেন আর আমি সেই অবোধ্য সেই লিপি উদ্ধারের ব্যর্থ চেষ্টা করছিলাম। হতাশ আমি আনমনে স্যার রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই দেখতে পেলাম এনামেলের বাটিতে প্রতিফলিত হয়ে অবোধ্য ভাষাটাকে নিছক সাধারণ কিচুয়া বলেই মনে হচ্ছে।
মাথায় খেলে গেলো চিন্তাটা , মিরর ল্যাঙ্গুয়েজ নয় তো !! চতুর্দশ শতাব্দীতেই তো ইউরোপে অনেক বিজ্ঞানী তাদের মৌলিক কাজগুলো যাতে কেউ চুরি করতে না পারে- সেজন্যে সেটা মিরর ল্যাঙ্গুয়েজে লিখতেন। সাধারণ ভাবে দেখলে কিছুই বোঝা যাবে না- কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়ালেই গড়গড় করে পড়া যাবে। সূর্যদেবের পূজারী এই ভাষাই কি ব্যবহার করেছে ?? একটা আয়না নিয়ে দাঁড়াতেই বোঝা গেলো আমি ভুল করিনি। স্যার রিচার্ড ‘ইউরেকা’ বলে চ্যাঁচাতে বাকি রাখলেন কেবল। পার্চমেন্টের অবশিষ্ট অংশের অনুবাদ শেষ হলো অত্যন্ত দ্রুত। আর সন্ধ্যার সময় সেই লিপির আদেশ মেনে আমরা গিয়ে দাঁড়ালাম নির্দিষ্ট একটা সমাধির সামনে যেটা খুঁড়লেই গুপ্তধন পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ঐ পার্চমেন্টে। মিয়াজ্জাকে খুবই উৎফুল্ল দেখাচ্ছে।কাজেই সমাধি খোঁড়ার কাজ শুরু করতেই আমি জানতাম চাইলাম-‘ওহে মিয়াজ্জা, আতাহুয়াল্পার গুপ্তধন তো প্রায় হাতের মুঠোয়। তা আমরা এর বিনিময়ে কী পাচ্ছি ??’ -‘ওরে মজিদ, আজ আমার খুশির সীমা নেই। মন খারাপ করিস না- পাবি,পাবি।
গুপ্তধন যা পাবো তার চারভাগের এক ভাগ তোদের দুজনকে দেবো বলে আমি আগেই মনস্থির করে রেখেছি। তারপর তোদের দুজনকে সসম্মানে এখান থেকে চলে যেতে দেবো।’ -‘হুম, চারভাগের এক ভাগ?? তা খারাপ কী! তোমার আমার কথা রক্ষা করার অভ্যস তেমন নেই কী না।’ -‘বলছিস?? যাই হোক, তোর ভাগ নিয়ে চিন্তা করিসনে। আগে স্বর্ণগুলো হাতের মুঠোয় আসুক।’ আমি আর কী বলব, অপেক্ষা করতে লাগলাম। সমাধি খুঁড়ে বের হলো একটা চৌকোণা বাক্স- সেটার উপরে সূর্যদেবের মন্দিরের ছাপ মারা। বুঝতেই পারছিস,আমরা তখন প্রায় নিশ্চিত যে সফল হতে চলেছি। আর বাক্সটা খুলতেই… উহ !! সে যদি দেখতি । চাঁদের আলোতেও স্বর্ণালংকার গুলো প্রায় ঝলমলিয়ে উঠলো রে !! সোনার কী অদ্ভূত সব অলংকার আর মূর্তি। মিয়াজ্জার তো খুশিতে পাগল দশা প্রায়। সব স্বর্ণ বয়ে নিয়ে দুটো ক্যারাভানে তোলা হলো। আর তারপর আমি মিয়াজ্জাকে বললাম- ‘কই মিয়াজ্জা, আমাদের ভাগ কোথায় গেলো ?? চারভাগের এক ভাগ আমাদের পাওয়ার কথা ছিলো না ??’ মিয়াজ্জার মুখে একটা শয়তানী হাসি দেখা গেলো।’বটে ?? চারভাগের এক ভাগ ?? তামাশা পেয়েছিস ভেতো বাঙ্গাল ?? চার সিকি পয়সাও পাবি না।
তোর সাথে আমার কিছু পুরানো দেনা আছে।’ এই বলেই আমায় আর স্যার রিচার্ডকে বদমাশটা একটা ক্যারাভানে ঠেলে দিলো। -‘থাক এখানে বন্দী হয়ে। ইলোরা গুহায় আমায় আটকে রেখেছিলি মনে আছে ?? এখন থাক এখানে দুদিন বন্দী হয়ে। মানুষটা আমি স্বভাবে ভীষণ কোমল। তাই প্রাণে মারলাম না। দুদিন পর পেরু পুলিশকে ফোন করে তোদের দশা জানিয়ে দেবো। এই দুটা পাউরুটি আর দু বোতল পানি রেখে যাচ্ছি- দুদিন চালিয়ে নিস।’ -‘কাজটা তুমি ভালো করলে না সিনর মিয়াজ্জা। এটা কিন্তু কথা ছিলো না।’ বললাম আমি। -‘কি ? তুই আমার মুখের উপর কথা বলিস ভেতো বাঙ্গাল ?? যা, তোর শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দিলাম। এখন তোদের তিনদিন এখানে বন্দী থাকতে হবে।’ এই বলে মিয়াজ্জা দরজা আটকে বেরিয়ে গেলো। বদমাশটা তার চ্যালা-চামুন্ডা গুলোকে নিয়ে রাতে আবার আমাদের দেখিয়ে দেখিয়ে বারবিকিউ পার্টি করলো।… তারপর আর কী। রাত না পোহাতেই আমি আর স্যার রিচার্ড দুটো স্বর্ণ বোঝাই ক্যারাভান নিয়ে রাজধানী লিমার পুলিশ সদরে পৌঁছে রিপোর্ট করলাম- একদল বদমাশ আটকে পড়েছে, তারা পেরুর মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ চুরি করতে এসেছে। অবস্থানটাও জানালাম। তার ঘন্টা দুয়েকের মাঝেই মিয়াজ্জা আর তার দলবল ধরা পড়লো।
উদ্ধার করা স্বর্ণালংকারের কিছু অংশ তোরা দেখতে পাবি পেরুর জাতীয় জাদুঘরে আর কিছু পাবি কলম্বিয়ার বোগোটা যাদুঘরে…।” ক্যাফেটরিয়ার নিষ্কর্মা কর্ণারে একটা শোরগোল উঠলো যেনো। -‘মানে ??’ নান্টু এখন পুরো সজাগ। -‘কীভাবে ??’ কবিরের চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসবে। -‘আপনাকে না বন্দী করে রেখেছিলো ??’ফরহাদ উত্তেজিত। -‘বেরোলেন কীভাবে ??’ আমি শেষ প্রশ্ন ছুঁড়ি। মজিদ ভাই সিগারেটে শেষ একটা টান দিয়ে সেটাকে ছুঁড়ে ফেলে বললেন,’ফেকু মিয়ার ছাত্র ছিলাম আমি, তা জানিস ?? তিনটে মাস সাধনা করেছি। ওস্তাদ বলেছিলো, লেগে থাকলে এ লাইনে আমি সেরা হতে পারতাম।’ -‘মানে ??’ এবার নিষ্কর্মা কর্ণারের চারজনের মুখ থেকে একই সাথে একটা মাত্র প্রশ্ন বেরুলো। মজিদ ভাই তাঁর ট্রেডমার্ক একটা হাসি দিয়ে বললেন,’হোয়াইট হাউসের পার্টিতে স্বয়ং মার্কিন ফার্স্ট লেডির পকেট থেকে কেজিবির হয়ে মাইক্রোফিল্ম উদ্ধার করেছি, আর সন্ধ্যা রাতে একটা ইতালিয়ান জোচ্চোরের পকেট থেকে একটা ক্যারাভানের চাবি তুলে নিতে পারবো না ??’। এই বলে, যেন প্রমাণ দেখাতেই মজিদ ভাই তাঁর একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন। সবিষ্ময়ে দেখলাম,আমার থেকে প্রায় চারফুট দূরত্বে বসা মজিদ ভাইয়ের বাড়িয়ে দেয়া হাতে শোভা পাচ্ছে- আর কিছু নয়- পিজা হাটের একটা ফ্রী কুপন !!