ভাগ্যফল – তারাপদ রায়

রবিবারের সকালবেলা উকিলবাবু তাঁর বাইরের ঘরে বসে মক্কেলদের কাজ সারছিলেন। এমন সময়ে এক জ্যোতিষীঠাকুর এলেন। … মাথায় টিকি, কপালে ফোঁটা, পরিধানে গেরুয়া বা রক্তাম্বর। উকিলবাবু জ্যোতিষীঠাকুরকে দেখে যথাসাধ্য সম্ভ্রম প্রদর্শন করতে ইতস্তত করলেন না। এবং কিছুক্ষণ কথাবার্তা, কুশল বিনিময়ের পরে নিজের ডানহাতটি জ্যোতিষীর হাতে সমর্পণ করলেন।

জ্যোতিষী তার নামাবলীর ঝোলা থেকে একটি আতস কাচ বার করে খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। অনেকক্ষণ দেখার পর জ্যোতিষীটি খুব নিম্ন কণ্ঠে যেন খুব গোপন কথা শোনাচ্ছেন এইভাবে বেশ আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বললেন, ‘আপনার মাতাঠাকুরাণী গত শীতে মারা গেছেন।’ উকিলবাবু কিছু বললেন না, চুপ করে রইলেন। … ‘বড় মেয়েটির বিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমে, শিগগিরিই বাচ্চা হবে অথচ সপ্তাহ দুয়েক চিঠি পাননি, খুব চিন্তিত আছেন। আপনার গৃহিনীর শরীরটা আজ কিছুদিন হল ভাল যাচ্ছে না।

আপনি নিজেও কয়েকদিন আগে আদালতের সিঁড়ির ওপরে হোঁচট খেয়ে বেশ কাহিল হয়েছিলেন, এখনও গোড়ালিতে ব্যথা আছে।’ উকিলবাবু একথার পর নিজের দু’পায়ের গোড়ালির দিকে তাকাতে লাগলেন। … অবশেষে যখন গণকঠাকুর আসল কথায় এসে বললেন, ‘আপনার এখন সময় খারাপ যাচ্ছে। আপনার শনি আর রাহু…’, তখন উকিলবাবু একবার খুব জোরে কেশে উঠলেন। উকিলবাবুর কাশি শুনে জ্যোতিষীঠাকুর বাধ্য হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘কিছু ভুল বললাম?’ উকিলবাবু কাশি থামিয়ে রীতিমতো বিষ্মিত দৃষ্টিতে জ্যোতিষীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘না ঠিক ভুল নয়, তবে…!’ জ্যোতিষী বললেন, ‘তবে?’ অবশেষে উকিলবাবু পরিষ্কার করে বললেন, ‘দেখুন কী আশ্চর্য! সবই ঠিকঠাক, খুবই মিলে গেছে।

কিন্তু এগুলো একটাও আমার নয়।’ সন্ত্রস্ত জ্যোতিষীবাবু বললেন, ‘আপনার নয়, মানে?’ উকিলবাবু বললেন, ‘আপনার সমস্ত কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে কিন্তু সেটা হল এই গলিরই ওই মাথায় সাতান্ন নম্বর বাড়ির মহেশ উকিলের সম্পর্কে, আর আমার বাড়ির নম্বর সাতাশ এবং আমি হলাম মহিম উকিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

ইচ্ছাপূরণ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-১ম পাঠ

সুবলচন্দ্রের ছেলেটির নাম সুশীলচন্দ্র । কিন্তু সকল সময়ে নামের মতো মানুষটি হয় না । সেইজন্যই…

ইচ্ছাপূরণ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-২য় পাঠ

সুশীল ভাবিয়াছিল, বাপের মতো স্বাধীন হইলে তাহার সমস্ত ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে সমস্তদিন ধরিয়া কেবলই ডুডু…

একটী পাঁঠার গল্প

একলোকের একটি পাঁঠা ছিলো। পাঁঠা ছিলো অত্যন্ত চাপাবাজ আর ভিতু প্রকৃতির। পাঁঠা রোজ রোজ ঘাস…