বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) – পর্ব ৮

বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) – পর্ব ৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

মাদ্রায়-ই-কাদিরিয়াঃ মহান করুণার আঁধার আল্লাহ জাল্লাহ শানহুর অসীম রহমতে জনসাধারণের মিলিত সহযোগিতায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের নতুন ঘর তৈরি হলো। সকলে বহুদিনের আশা পূর্ণ হল। তৈরি হল নতুন পরিবেশ। ইতিহাস পাঠে জানা যায় মাদ্রাসার নাম দেয়া হল মাদ্রাসা-ই-কাদিরিয়া মাহবুবে সোবহানী সত্যের সৈনিক আওলীয়াকুলের শিরমণি হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ)-এর সুযোগ্য পরিচালনার মাদ্রসা যেন নতুন জীবন লাভ করলো।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারীঃ এ কথা দিবালোকের মত সমুজ্জ্বল যে সত্যের সৈনিক রূহানী জগতের খাঁটি প্রজ্ঞাদাতা মাহবুবে সোবহানী বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) শুধুমাত্র ইলমে শরীয়ত ও মারাফাতের পণ্ডিত ছিলেন না। বরং তিনি কাব্য, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি শাস্ত্রের সুপণ্ডিত ছিলেন। সত্যি কথা বলতে কি তার প্রণীত বহু কিতাব অদ্যাবধি এ কথার সাক্ষ্য বহন করছে। এসব কিতাবের মধ্যে ফুতহু গায়ব, গুনিয়াতুত তালেবিন, ফতহুর রব্বানী, কাসীদায়ে গাওসিয়া সমধিক প্রসিদ্ধ। আল্লাহর অসীম রহমতে এই সকল কিতাবের বাংলা তরজুমাও হয়েছে। যার দ্বারা অসংখ্য লোক সিরাতুল মুস্তাকিমের সঠিক সন্ধান পেয়েছে। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ হযরত বড়পীর সাহেব কেবল শরীয়ত মারেফাত বিদ্যায়ীই পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন তা নয়, তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। এক কথায় বলতে গেলে যাবতীয় ইসলামী আখলাকের অপূর্ব সমাবেশ ও বিকাশ ঘটেছিল হযরত বড়পীর সাহেবের জীবনে।

হযরত বড়পীর (রহঃ)-এর কয়েকটি উপদেশাবলীঃ একথা সর্বজন বিদিত যে রূহানী জগতের খাঁটি প্রজ্ঞাদাতা আওলীয়াকুলের শিরমণি হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) গোটা জীবনের সাধনাই ছিল মানব কল্যাণে। মানুষের অকল্যাণের জন্য তিনি আজীবন চেষ্টা করে গেছেন। সোনালী ইসলামের নির্মল আদর্শ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল সত্যের সৈনিক গাওসুল আযম হযরত বড়পীর সাহেবের (রঃ) প্রধান ও একমাত্র জীবনের লক্ষ্য ও কর্তব্য। তিনি শিক্ষকতা, পুস্তক প্রণেতা, ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে মানুষদেরকে ইসলামের পথে আনার চেষ্টা করে গেছেন। মোট কথা মাহবুবে সোবহানী গাওসুল আযম হযরত বড়পীর (রঃ) ছিলেন ইসলামের একনিষ্ঠ খাদেম। বিশ্ব নিয়ন্ত্রা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছায় তিনি তার উপর নির্দিষ্ট দায়িত্ব সযত্নে পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছেন। ইসলামী জ্ঞান তাপসদের দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায় হযরত বড়পীর সাহেব (রঃ) ইসলামের শরীয়ত ও মারেফাতের জ্ঞান সাধনা ও বিতরণ করে অন্তরে বাইরে তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার সত্যিকার প্রশস্ত রাজপথ নির্মাণ করে গিয়েছেন, যাহা বিশ্বের সকল মুসলমানদের পাথেয় সত্যের সেনানী বড়পীর সাহেব যাহা বলেছেন তাহাই মানবজাতীয় কল্যাণের জন্য করেছেন। তিনি ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। হযরত বড়পীর সাহেব (রঃ) পরহেজগার ব্যক্তিবর্গের জন্য কয়েকটি মূল্যবান নির্দেশ রেখে গেছেন যা নিম্নে দেওয়া হল-

১। শপথ ও প্রতিজ্ঞা করা উচিত নহে। তবে শপথ বা প্রতিজ্ঞা করে বসলে তাহা পালন করবেন।

২। মিথ্যা কথা বলিও না। কোনভাবেই মিথ্যা বলতে নাই। উপহাস, ঠাট্টা, হাস্য-কৌতুক করেও মিথ্যা বলও না। সদা-সর্বদা সত্য কথা বলবে।

৩। কখনও বিশ্বনিয়ন্ত্রা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাম শপথ করো না।

৪। কোন মুসলমানকে নিশ্চিতভাবে মুনাফিক কাফের বল না। মহান করুণার আঁধার আল্লাহ জাল্লাহ শানহুর ছাড়া কে জানে না কে মুনাফিক, কে মুশরিক।

৫। কোন মানুষের নিকট কোন আশা-আকাঙ্ক্ষা কর না।

৬। বিনয়ী হও। আদব-কায়দা, নম্রতা ও শিষ্টাচারের মধ্যে ধর্মভীরুতা রয়েছে। তোমার সৎ আচরণগুলি ইবাদতের সহিত করবে।

৭। কাকেও অভিসম্পাত কর না। ধৈর্যধারণ পূর্বক যে কোন বিপদ-আপদ দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন মুকাবিলা করবে।

৮। নিজের মর্তবা অর্জনের জন্য কারও উপর কার্যদায়িত্ব চাপাইয়া দিওনা। ইহা পুরাপুরিভাবে বিশ্বনিয়ন্ত্রা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দায়িত্ব। তিনিই তোমার রিজিকদাতা।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।