বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) – পর্ব ৫
বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রাথমিক শিক্ষাঃ সত্যেরসেনানী আওলীয়াকূলের উজ্জ্বল নক্ষত্র বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) সাহেবকে তাঁর যোগ্য পিতা জিলান নগরীর একটি মক্তবে বিদ্যা শিক্ষা করার জন্য ভর্তি করান। মক্তবে ভর্তি হবার আগেই মাতার মুখে কোরআন তিলাওয়াত শুনে আল কোরআনের বিরাট অংশ মুখস্ত করে ফেলেছিলেন। ইসলামী জ্ঞানবীদদের দৃষ্টিকোণ থেকে একথাও জানা যায় যে, গাওসুল আযম হযরত বড়পীর সাহেবকে (রঃ) প্রথমে শিক্ষার উদ্দেশ্যে মক্তবে পাঠানো হলে যাত্রাপথে পথিমধ্যে একদল ফেরেশতা এসে তাকে বেষ্টন করে রইলেন এবং তাকে তারা বেষ্টন করে শিক্ষা কেন্দ্র নিয়ে গেলেন। ইতিহাস পাঠে একথাও জানা যায় হযরত বড়পীর সাহেবকে (রঃ) যখন কোন স্থান ছিল না, তখন হঠাৎ তাঁর সঙ্গী ফেরেশতাগণ গায়েব হতে আওয়াজ দিলেন তোমরা বিশ্বনিয়ন্ত্রা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয় বান্দার জন্য স্থান প্রশস্ত করে দাও। সত্যি এহেন অদৃশ্য বাণী শুনে শিক্ষক-ছাত্রবৃন্দ চমকিয়ে উঠলেন। যাই হোক সাথে সাথে শিক্ষক ছাত্রগণ আগন্তুকের জন্য জায়গা করে দিতে নির্দেশ প্রদান করলেন। যাই হোক ছাত্রগণ তৎক্ষণাৎ পার্শ্বের দিকে চেপে বসে মাহবুবে সোবহানী রূহানী জগতের খাঁটি প্রজ্ঞাদাতা দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায় মক্তবে ভর্তি করার পর ওস্তাদজী আওলীয়াকুলের শিরমণি সূফী সাধক হযরত বড়পীর সাহেবকে (রঃ) একেবারে প্রাথমিক স্তরে পড়তে বললেন, সত্যি, মাথার তাজ সমতুল্য ওস্তাদজীর নির্দেশ মোতাবেক সর্বপ্রথম আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পাঠ করলেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ শুনলে অবশ্যই অবাক হবেন। হ্যাঁ অবাক হবারই কথাও।
আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পাঠ করতঃ আলিফ-লাম-মীম হতে আরম্ভ করে মহাগ্রন্থ আল কুরআন পনের পারার শেষ পর্যন্ত মুখস্ত পড়ে ফেললেন। শুধু মুখস্ত নয় বরং তারতীব তাজবীদ সহকারে পড়েছিলেন। তার পড়া শুনে ওস্তাদজী অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কিভাবে কার নিকট হতে এত সুন্দরভাবে কুরআন পড়া শিখেছ এবং কিভাবে পনের পারা কুরআন শরীফ মুখস্ত করলে? ওস্তাদজীর কথার জবাবে সত্যের সেনানী মাহবুবে হাফেজ, তিনি তাহা প্রত্যেহ তিলাওয়াত করে থাকেন। তার তিলাওয়াত শুনে আমারও মুখস্ত হয়ে গেছে। ইতিহাস বেত্তারা বলেন, হযরত বড়পীর সাহেব (রঃ) সেই পনের পারার হাফেজ হয়ে দুনিয়ায় আসেন। তিনি যখন গায়েব মক্তবে পড়াশুনার জন্য ভর্তি হন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। তবে বয়সের দিক দিয়ে কম হলেও পড়াশুনায় ছিলেন খুবই মনোযোগী। অল্পদিনের মধ্যে পড়া আয়ত্ত করতে পারে নাই রূহানী জগতের খাঁটি প্রজ্ঞাদাতা মাহবুবে সোবহানী হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) তা দু’এক দিনেই আয়ত্ব করে ফেলতেন।
ভাল ছাত্র হিসাবে সুনাম সুখ্যাতি মক্তবের বাইরেও ছড়িয়ে পড়লো। সত্যি ওস্তাদগণ বড়পীর সাহেবের মেধার অবস্থা দেখে লোকমুখে বলতে লাগলেন আবদুল কাদের সাহেব (রঃ) শুধু পড়েই সন্তুষ্টি ছিলেন না, জীবন জগৎ ও প্রকৃতি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। তাকে এমনও দেখা গেছে যখন যে বিষয়ে পড়াশুনা করতেন তা শেষ না করে ক্ষান্ত হতেন না, ওস্তাদগণকে আদব সহকারে নানারকম প্রশ্ন করতেন, যে প্রশ্নগুলো ছিল অনেক উচ্চস্তরের। শিক্ষকগণ বড়পীর সাহেবের জন্য অদম্য জ্ঞান-পিপাসা ও বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা দেখে অবাক হয়র যেতেন। আর দুহাত তুলে মহান করুণার আঁধার আল্লাহ জাল্লাহ শানহুর শাহী দরবারে তার জীবনের উন্নতির জন্য দোয়া করতেন। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায় পরিতাপের বিষয় হল মক্তবের শিক্ষা সমাপ্ত হতে না হতেই তার পিতা দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। পিতার ইহধাম ত্যাগের পর থেকে সংসারের যাবতীয় ভার পড়ে মাহবুবে সোবহানী হযরত আবদুল কাদের (রঃ)
এর উপর। সাংসারিক অবস্থা তাদের তেমন ভাল না থাকায় নিজ হাতে অনেক কাজ করতে হয়। কিন্তু আল্লাহর অসীম রহমতে সাংসারিক ঝামেলার মধ্যে পড়া সত্ত্বেও তার বিদ্যাশিক্ষার আগ্রহকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সাংসারিক কাজ সমাধা করেই লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতেন। এমনও সর্বজনবিদিত যে ছোট বেলা থেকেই মাহবুবে সোবহানী সূফী সাধক হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) একটু ভিন্ন প্রকৃতির ছিলেন। ধর্মের প্রতি ঝোঁক ছিল। ধর্মের প্রতিটি হুকুম আহকাম মেনে চলতেন। ছোটবেলা হতেই তিনি বেশী কথা বলা পছন্দ করতেন না। তার সহপাঠীদের সাথেও কোনদিন একটু বাজে আলাপ করেননি। সর্বদা তার খেয়াল ছিল পড়াশুনার দিকে, কিভাবে জ্ঞান অর্জন করা যায়।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন