বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) – পর্ব ১

বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর নাম ও উপাধি সমূহঃ ইতিহাস পাঠে জানা যায়, রূহানী জগতের খাঁটি প্রজ্ঞাদাতা আওলীয়ায়ে কূলের শিরোমণি হযরত আবুদল কাদের জিলানী (রঃ)-এর কুনিয়াত আবু মোহাম্মাদ। মহিউদ্দীন তাঁর উপাধি। ইতিহাসবেত্তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায় পবিত্র ইরাকের অন্তর্গত জিলান নামক স্থানে জন্মগ্রহণ বলে তাঁকে জিলানী বলা হত। সত্যি কথা বলতে হয়, তিনি সারা বিশ্বের সর্বসাধারণের নিকট এই আবু মুহাম্মাদ মহিউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী নামে পরিচিত হলেও ধরাধমের বিভিন্ন অঞ্চলে তাকে বিভিন্ন গুণবাচক লকবে ভূষিত করা হয়ে থাকে। আমাদের এতদঞ্চলে সাধারণতঃ তিনি কুতুবুল আফতাব, গাওসুল আযম এবং বড় পীর নামেই প্রসিদ্ধ।  

ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে এ কথাও জানা যায় গাওসুল আযম বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (রঃ)-কে কোন কোন মহলের জনসাধারণ তাঁকে কুতুবে রাব্বানী নামেও অভিহিত করে থাকে। কোন কোন স্থানের লোকেরা তাঁকে পীরানে পীর দাস্তগীর আফযালুল আউলিয়া উপাধিতে ভূষিত করে থাকে। ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে একথাও জানা যায়, কোন কোন স্থানে তিনি নূরে ইয়াযদানী নামেও পরিচিত। এমনি ভাবে তাঁর আরও বহু গুনাবাচক উপাধি রয়েছে। মুমীর লাখ নবী কর্তৃক রচিত সাওয়ানেহে ওমরী হযরত গাওসুল আযম নামক কিতাবে বহু কিতাবের হাওলা দিয়ে লিখিত হয়েছে। যে একদা সত্যের সৈনিক আলাওয়ায়ে কূলের শিরমণি রূহানী জগতের খাঁটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত আবদুল কাদের জিলানী ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক বাগদাদ শহরের বাইরে গমন করলেন।  

যাবার পথে পথিমধ্যে জনৈক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন, কৃশতা ও দুর্বলতাবশতঃ সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পথের পাশে পড়ে আছে। পরিতাপের বিষয় হল জনৈক ব্যক্তি উঠবার জন্য পুনঃপুনঃ আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু দুর্বলতার কারণে পড়ে যাচ্ছে। বিশ্ব নিয়ন্ত্রা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসীম রহমতে সে ব্যক্তি আকস্মাৎ মাহবুবে সোবহানী সাধক কুলে শিরমণি বড়পীর হযরত গাওসুল আযমের নূরানী চেহারা মোবারকের প্রতি দৃষ্টিপাত করে কাকুতি মিনতি সহকারে আরয করল, হে ব্যথিতজনের পৃষ্ঠপোষক আল্লাহর ওয়াস্তে আমার দিকে দৃষ্টিপাত করুন এবং আপনার ঈর্ষা তুল্য ফুঁ দ্বারা আমার মৃতপ্রায় দেহে নবজীবন দান করুন।  

যাই হোক তার কাকুতি মিনতি শুনে বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) দয়াপরবশ হয়ে পড়লেন এবং তার হস্ত ধারণপূর্বক ইল্লাল্লাহ বলে তাঁকে জমিন হতে উঠিয়ে দিলেন। সত্যি কথা বলতে হয় মহান করুণার আঁধার আল্লাহ জাল্লাহ শাননুহুর অসীম রহমতে হযরত গাওসুল আযম বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) সাহেবের পবিত্র হস্তের পরশ লাগামাত্র সেই মরণোন্মুখ বৃদ্ধ সবুজ খোরমা বৃক্ষের ন্যায় সতেজ ও সবল হয়ে উঠে দাঁড়ালেন এবং বলতে লাগল- হে মুহিউদ্দীন। আল্লাহর অসীম রহমতে আপনি আমাকে স্থায়ী জীবন দান করলেন। আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি আম্বিয়াকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ইসলাম ধর্ম। দুর্বলতাবশতঃ আমার এই মৃতপ্রায় অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। বিশ্ব নিয়ন্ত্রা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের লাখ লাখ শোকর তিনি আপনাকে সৃষ্টি করে আমাকে নবজীবন দান করেছেন। মহান করুণাময় আঁধার আল্লাহ জাল্লাহ শানহুর তরফ হতে তাই আপনার উপাধি হল মুহিউদ্দীন, ধর্মকে সজীবকারী। যাই হোক তথা হতে বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) বাগদাদে এসে মসজিদে প্রবেশ করলে তাকে দেখা মাত্রই একব্যক্তি হঠাৎ বলে উঠল আসসালামু আলাইকুম ইয়া মুহিউদ্দীন। এরপর হতেই কেহ তাকে দেখলে মুহিউদ্দীন উপাধিতে সম্বোধন করতেন। ইতিহাস পাঠে এ কথাও জানা যায়- বড়পীর সাহেব মসজিদ থেকে নামাজ শেষ করে উঠলে সারা মসজিদে মহিউদ্দীন নামে উপাধি উচ্চারণে ধুম পড়ে গেল। সত্যি, আস্তে আস্তে তিনি সকলের নিকট মুহিউদ্দীন উপাধিতে পরিচিতি হয়ে গেলেন। ইতিহাসেবেত্তা ও ইসলামী জ্ঞান তাপসগণ বলেন ইতিপূর্বে তার বহুল প্রচলিত উপাধি কেহই জানত না।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।