বড় দাতা কে?
শায়েখ আবূ ছাইদ হারকুশী নিশাপুরী (রহঃ) বলেন, আমি মোহাম্মদ বিন হাফেজ বিন মোহাম্মদ হতে শুনেছি যে, মিশরের এক ব্যক্তি বিত্তহীন ও অভাব গ্রস্থ মানুষের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করে বেড়াত। একদিন এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল, ভাই আজ আমার স্ত্রীর গর্ভে একটি ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে। অথচ আমার স্ত্রী ও সন্তানের সেবা-চিকিৎসা করার মতো আমার নিকট কোন টাকা পয়সা নেই। এ কঠিন সময়ে আমি তোমার সাহায্য কামনা করছি। আগন্তুকের বক্তব্য শুনে সে তাকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জনের নিকট গেল। কিন্তু কোথাও কোন সাহায্য পাওয়া গেল না।
অবশেষে সে সবার হতে নিরাশ হয়ে লোকটিকে নিয়ে এক কবরস্থানে গেল। সেখানে একটি কবরের নিকট বসে সেই কবরবাসীকে লক্ষ্য করে বলতে লাগল, আল্লাহ পাক তোমাকে ক্ষমা করুন। তুমি মানুষকে বহু সাহায্য করেছ। আজ আমি এ বিপদ গ্রস্থ অভাবী লোকটির জন্য কিছু সাহায্যের আশায় বহু মানুষের দরবারে ঘুরলাম। কিন্তু কোথায়ও কোন সাহায্য পাওয়া গেল না। অতঃপর সে নিজের পকেট থেকে অর্থ দিনার বের করে তার হাতে দিয়ে বললেন, এটা তোমাকে করজ দিলাম। সুযোগ মত পরিশোধ করে দিও।
লোকটি সাথে সাথে ঐ দিনার নিয়ে ঘরে ফিরে গেল এবং উহা দ্বারা স্ত্রী সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করল। এ দিকে ঐরাতেই সেই মিশরীর চাঁদা সংগ্রহকারী স্বপ্ন দেখল, সেই কবরবাসী তাকে বলছে, তুমি আমার কবরের নিকট বসে যা যা করছ, তার সবই আমি শুনতে পেয়েছি। কিন্তু যেহেতু আমার কথার উত্তর দেওয়ার অনুমতি ছিল না। একারনে আমি তোমার কোন কথার জবাব দেয় নি। এখন আমি তোমাকে যা যা বলছি ভাল করে শুনে রাখ। তুমি আমার বাড়িতে গিয়ে আমার সন্তানদের বলবে, অমুক চুলার নীচে একটি পাত্র পাঁচশ দিনার রয়েছে। সেখান থেকে ঐ দিনার উদ্ধার করে যেন সেই অভাবগ্রস্থ লোকটিকে দান করা হয়।
সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে ঐ কবরবাসীর বাড়িতে গিয়ে তার সন্তানদের নিকট স্বপ্নের বিবরণ শুনাল। সাথে সাথে তারা ঐ চুলা খনন করে তার নীচ হতে সেই দিনারের পাত্র উদ্ধার করে তার হস্তগত করলে সে বলল, আসলে এই সম্পদের মালিক তো তোমরা, নিছক আমার স্বপ্নের ভরসা করেই কি এটা আমার হাতে তুলে দেবে? তার উত্তরে বলল এ মালের যিনি প্রকৃত মালিক তিনি তো মৃত্যুর পরও তার সম্পদ দান করছেন। আর আমরা জীবিত থেকে কেমন করে তা আটকিয়ে রাখব?
অতঃপর সে ঐ দিনার নিয়ে ফিরে এল এবং সেই অভাবগ্রস্থ লোকটিকে দান করে তার নিকট বিস্তারিত ঘটনার বিবরণ দিল। লোকটি ঐ পাঁচশ দিনার হতে এক দিনারের অর্ধেক নিজের জন্য রাখল। এবং অপর অর্ধদিনার তার করজ পরিশোধ করে অবশিষ্ট সকল দিনার ফকির মিছকিনদের মধ্যে বিলিয়ে দিল।
উপরোক্ত ঘটনার রাবী আবূ ছাইদ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা কাউকে বড় দয়ালু দাতা বলা হবে এ বিষয়ে আমি কোন সিদ্ধান্ত আসতে পারিনি।