বিসমিল্লাহর বিস্ময়কর ক্ষমতা-শেষ পর্ব
তখন ফের সে বিসবিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলতে বলতে আমার দিকে এগিয়ে এল। এবং আমাকে এমন জোরে টানল যে, আমি তার নীচে চলে গেলাম এবং সে আমার বুকের উপর চড়ে বসল। বলল, তোমাকে হত্যা করব না ক্ষমা করব?
আমি বললাম, ক্ষমা করো।
(সুতরাং সে আমাকে ছেড়ে দিল।)
ফের আমি বললাম, তোমার মা তোমাকে খতম করে দিক! তোমার যাবতীয় মালসম্পদ আমাকে দিয়ে দাও।
সে ফের বিসবিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলতে বলতে আমার কাছে এল। তো আমার গা শিউরে উঠল। এবং সে আমাকে এমনভাবে টান মারল যে, আমি একেবারে তার নিচে গিয়ে পড়লাম। তখন আমি বললাম, এবারেও আমাকে ছেড়ে দাও।
সে বলল, এই তিন বারের মাথায় তোমাকে তো আমি ছাড়ব না। এরপর সে বলল, ওহে বাদী! ধারালো তলোয়ার নিয়ে এসো। বাদী তলোয়ার নিয়ে বুড়োর কাছে এল, বুড়োর তখন আমার টিকি কেটে দিল। তারপর আমার উপর থেকে উঠে গেল।
হে আমীরুল মুমেনীন! আমাদের এই রীতি ছিল যে, টিকি কেটে দিলে পুনরায় তা না উঠা পর্যন্ত আমরা বাড়ী ফিরতে লজ্জা বোধ করতাম। এজন্য আমি এক বছর যাবৎ সেই হওয়ার পর সেই বুড়ো আমাকে বলল, ওহে ওমর, আমি চাই তুমি আমার সঙ্গে জঙ্গলে চলো।
তো আমি তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। সে এক জঙ্গলের কাছে পৌঁছে, সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বিসবিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর আওয়াজ দিল। ফলে সমস্ত পাখ-পাখালি আপনা আপনি বাসা ছেড়ে বেরিয়ে গেল। তারপর দ্বিতীয় আওয়াজ দিতে খেজুর গাছের মত লম্বা পশমের পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে দেখা যেতে লাগল। যাকে দেখে আমার গা শিউরে উঠল। সেই বুড়ো তখন আমাকে বলল, ওহে ওমর! ঘাবড়িও না। আমরা হেরে যাওয়ার মুখোমুখি হলেও বিসবিল্লাহির রাহমানির রাহীমের বদৌলতে জিতে যাব।
কিন্তু মোকাবেলায় আমরাই হেরে গেলাম। আমি তখন বললাম, আমার মনিব লাত ও উযযার কারণে হেরে গেছেন। একথা শুনে বুড়ো আমাকে এমন এক থাপ্পড় মারল যে আমার মাথা উপড়ে যাবার উপক্রম হল। বললাম, আর কখনও এমন কথা বলব না। তারপর মোকাবেলায় আমরা জিতে গেলাম। তখন আম বললাম, আমার মালিক বিসবিল্লাহির রাহমানির রাহীমের দৌলতে জিতে গেছেন।
বুড়ো তখন পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বীকে তুলে ধরে চারাগাছ পোঁতার মতো মাটিতে পুঁতে দিল। তারপর তার পেট চিরে তার ভিতর থেকে কালো লণ্ঠনের চিমনির মত কোনও জিনিস বের করল। তারপর বলল, ওহে ওমর! এই হল এই দুশমনের প্রতারণা ও কুফর।
আমি বললাম, আপনার সাথে এই হতভাগার দ্বন্দ্বটা কি নিয়ে?
সে বলল, ওই যে, মেয়েকে তুমি তাবুর মধ্যে দেখেছ, ও হল নারিআহ বিনতে মাসতুরদ। জ্বিনদের কাছে আমার এক ভাই বন্দী আছে। সে হযরত ঈসা মাসীহ (আঃ)-এর দ্বীনের অনুসারী। মেয়েটি ওই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। ওদের মধ্যে থেকে একটা করে জ্বিন প্রতি বছর আমার সাথে লড়াই করতে আসে। এবং আল্লাহ আমাকে বিসবিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর বরকতে ওদের বিরুদ্ধে জিতিয়ে দেন।
এরপর আমরা ময়দানে-প্রান্তরে চলতে লাগলাম, এক সময় সেই বুড়ো আমার হাতে ভর দিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি তখন তার খাপ থেকে তলোয়ার টেনে নিয়ে, তার উপর আঘাত করে, হাটুর নিচ থেকে কেটে দিলাম। সে তখন আমাকে বলে উঠল, ওরে গাদ্দার! তুই এত ভয়ানক ধোকা দিলি। বুড়োর আর্তনাদে কর্ণপাত না করে আমি তখন টুকরো টুকরো করতে লাগলাম। তারপর তাবুর কাছে গেলাম। মেয়েটি আমার সামনে এল। বলল, ওহে ওমর! বুড়ো শায়খ কি করল? বললাম, জ্বিন তাকে কতল করে ফেলেছে। সে বলল, তুমি মিথ্যা কথা বলছ! ওহে বিশ্বাসঘাতক! তুমিই ওকে হত্যা করেছ। এরপর সে তাবুর ভিতরে ঢুকে কাঁদতে লাগল। এবং কিছু কবিতা বলল। আমি তখন তাকেও খুন করার জন্য তাবুর মধ্যে গেলাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। মনে হল যমীন তাকে গিলে নিয়েছে।