বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-নবম পর্ব
বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দিন শেষে রাত্রি বেলায় মেহমানদেরকে উছাম উত্তম খাদ্য পরিবেশন করল এবং উত্তম বিছানা পত্র দিয়ে তাদেরকে বিশ্রামের ব্যবস্থা করল। তিন তালাবিশিষ্ঠ এক অট্টলিকার নীচতলায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিল। গভীর রজনীতে বৃদ্ধ চাচা লোকমান তনয়কে ডেকে ঘুম থেকে জাগালেন এবং বললেন আমার সাথে চল। এ কথায় উভয়ে উক্ত অট্টলিকার তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখলেন উছামের এক ছেলে একটি খাটিয়ার উপর শুয়ে আছেন। তখন তারা দু’জনে খাটিয়া ধরে নিচ তলায় নামিয়ে আনল। যেখানে উছাম তাদের রাত্রি যাপনের জন্য বিছানা করে দিয়েছিলেন সেখানে তাঁর খাটিয়া রেখে তারা দু,জনে তৃতীয় তলায় ঘুমিয়ে পড়ল। ভোর ভেলা উছামের চিৎকারে তাদের ঘুম ভাংল। তারা নীচতলায় এসে দেখল চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। যে কক্ষে তাদের বিছানা করে দিয়েছিল সে কক্ষটি সম্পর্ণ পানিতে পরিপূর্ন । উছামের ছেলে সেই পানিতে ডুবে মারা গেছে। মরা ছেলেকে সম্মুখে রেখে উছাম চিৎকার দিয়ে কাঁদছে। বৃদ্ধ ও লোকমান তনয় নিচে আসলে তাদেরকে লক্ষ্য করে বলল, তোমরা আমার উপযুক্ত শিক্ষা সিয়েছ। আপনারা যে এত দূরদশী তা আমি ভাবতে পারি নি। আমি আমার নিচতলায় মরণ ফাদ পেতেছি। রাত্রি বেলায় এখানে সমুদ্রের ঢেউ এসে পানিতে কক্ষটি ডুবে যায়। সম্মুখের দরজা আমি গভীর রাতে এসে বন্ধ করে যাই যাতে করে এখানে বসবাসকারী বের না হতে পেরে পানিতে ডুবে মরে যায়। আজকে আপনাকে এখান থেকে দরজা বন্ধ করার পূর্বেই এখান থেকে সরে গিয়ে আমার ছেলেকে রেখে গিয়েছিলেন। আজকে আমি রাত্রে শেষে দরজাটি বন্ধ করে গিয়েছিলাম। তখন জানিনা যে, এ কক্ষে আপনারা নেই। এখানে আমার ছেলে শায়িত রয়েছে। যদি আমি কোন রকম এ খবর অবগত হতাম তাহলে ছেলেটির এভাবে সলিল সামাধি হত না। যাই হোক সবই আমার কর্মফল। আমি জীবনে বহু পাওনাদের কে এভাবে হত্যা করেছি। শেষ পর্যন্ত প্রতিফল আমিই পেয়েছি। বাকি জীবনে এমন এহেন গর্হিত কাজে প্রবৃত্ত হব না। আল্লাহ আমাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছেন। আমি আপনাদের হাতে তওবা করে নতুন জীবন গ্রহন করব। আপনারা আমার এ দৃষ্টতাপূর্ন অপরাধ ক্ষমা করে দিন। বৃদ্ধ উছামের কথা শুনে বললেন, আল্লাহ মনে হয় তোমাকে হেদায়েত করার জন্য আমাদেরকে প্রেরণ করছেন। যে অপরাধ তুমি জীবন ভোর করেছ তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তোমার নিকট যে সমস্ত মানুষেরা পাওনা টাকা পাবে তাদের বাড়িতে গিয়ে অতি সত্তর তাদের টাকা ফেরত দাও। না হয় আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না। উছাম তখন লোকমান হাকিমের পাওনা টাকা এনে তাঁর ছেলের হাতে দিয়ে বলল, আমি এখন থেকে বাকি সকল পাওনাদাদের টাকা অল্প দিনের মধ্যে পরিশোদ করার নিয়ত করছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করুন। আমি যে ছেলের ভবিষ্যতের জন্য জঘন্য পন্থায় টাকা পয়সা অর্জন করেছি, সে ছেলে আমার সম্মুখে বিদায় হয়ে গেল। আমার আর কোন ছেলে নেই। অতএব আমি আর কার জন্য উর্পাজন করব। আমার লোভের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
উছামের নিকট থেকে টাকা নিয়ে বৃদ্ধা ও লোকমান তনয় দেশের দিকে রওয়ানা করলেন। পথিমধ্যে শ্বশুর বাড়ি এসে তাঁর বিশ্রাম নিলেন। লোকমান তনয় পরের দিন স্ত্রীকে বলল, আচ্ছা আমার এই বিশাল স্টেটের দায়িত্ব ভার কাছে রেখে যাই। লোকমান তনয় বলল, তোমার যে চাচা এ বিবাহ কার্য সম্পাদনের দায়িত্ব নিয়ে ছিলেন, তাঁর উপর সকল কিছু ন্যস্ত করে চল। তখন তাঁর স্ত্রী চাচাকে খবর দিয়ে তাঁর উপর সকল স্টেটের সমুদয় দায়িত্ব অর্পণ করে। বিবাহে পাওয়া উপহার, নিজ অলংকার, কাপড় –চোপড় ও কতক টাকা পয়সা নিয়ে তারা সকলে কয়েকটি উটের পৃষ্ঠে ছওয়ার হয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করল।
বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন