বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-৬ষ্ঠ পর্ব
বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা- ৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চাচা মিয়া! এ ছেলের নিকট আপনি পূর্বেই সমস্ত ঘটনা খুলে বলবেন, তাঁর পর যদি সেইচ্ছায় আমাকে শাদী করে এখানে আসে তবে আমি তাকে স্বাগত জানাব। লোকটি গিয়ে লোকমান হাকিমের ছেলের ও বৃদ্ধাকে কন্যার সমস্ত কথা বলল, অতপর তারা একত্রে বসে বিয়ের তারিখ ও সময় নির্ধারন করল। দেশ বাসি এ বিয়ের খবর শুনে বলল, আর একটি নিষ্পাপ ছেলে মুত্যুকে আলিঙ্গন করতে চলেছে। লাশ বহন কারি ডোমেরা একে অপরের বলল, কালকে আর অন্য দিকে যাত্রা হবে না। আজকে রাক্ষুসে কন্যার বিবাহ হচ্ছে। আগামি দিন ভোর ভেলা সেখানে লাশ সরাতে যেতে হবে। এভাবে দেশের মানুষের মধ্যে আলোচনার এক বন্যা বইতে আরম্ভ হল। অনেকে এ বরকে জীবিত অবস্থায় একবার দর্শনের জন্য হাজির হল। কেউ কেউ বর কে বলল, জনাব, আপাকে দিয়ে রাক্ষুসে কন্যার দশজন স্বামী পূর্ণ হবে। আপনার পরে যে আসবে সে হবে একাদশ নাম্বার। কেউ তাকে বলল, জেনে শুনে মৃত্যুর ঝুকি নিচ্ছেন? আবার কেউ বলল, সম্পদ এর লোভে ইতিপূর্বে নয় জনে প্রাণ দিয়েছে। অতএব এই সম্পদের লোভ পরিত্যাগ করে দেশে ফিরে যান। এভাবে নানা লোক না না মন্তব্য করল।
লোকমান হাকিমের ছেলে মানুষের কথায় ঘাবড়ে গেল। তখন তিনি পিতার উপদেশগুলো আবার স্মরণ করল। পিতার কথা ছিল গাছের নিচে যে বৃদ্ধা দেখবে তাঁর কথা মেনে চলবে। যদি সে তোমার সঙ্গী হয় তবে তাকে সঙ্গী করে নিবে। এ কথাগুলো স্মরণ করে মনকে সে শক্ত করল। নির্দিষ্ট দিন নির্দিষ্ট সময়, বহু লোকের উপস্থিতে লোকমান তনয়ের বিবাহ কার্য সম্পর্ন হল। বিবাহ অনুষ্ঠানে পূর্বের চেয়ে দশগুণ লোক জমায়েত হল। কারণ একটু যুবক স্বেচ্ছায় মরতে যাচ্ছে। তাকে একবার দেখতে ইচ্ছে না হয় কার। বিবাহ কাজ সমাধা করে লোকজন চলে গেল। ভোর বেলার দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় সকলে সময় কাটাতে লাগল।
বৃদ্ধা লোক লোকমান তনয় কে ডেকে একা একা বললেন, বৎস! তুমি সন্ধ্যা বেলা কন্যার কক্ষে গিয়ে কোথাও বসবে না। দাড়িয়ে দাড়িয়ে একটু সময় কথা বলে তাঁর একখানা পরণের কাপড় ও একটি জামা চেয়ে নিয়ে আসবে। এগুলো নিয়ে সোজা আমার কাছে চলে আসবে। তাঁর পর আমি যা বলব সে অনুসারে কাজ করবে। লোকমান তনয় বৃদ্ধা কথা অনুসারে সন্ধায় তাঁর নব পরিনিতা স্ত্রীর কাছে গিয়ে তন্ময় হয়ে তাঁর প্রতি তাকিয়ে রইল। মানুষ এত সুন্দরি হতে পারে তাঁর কল্পনা কোন দিন তাঁর ছিল না। তাঁর নব স্ত্রী তাঁর স্বামীকে দেখে আনন্দে তাকে জড়িয়ে ধরল। এত সুন্দরি শুশ্রী স্বাস্থ্যবান বর ইতোপূর্বে কোন দিন সে আর দেখিনি। তাই সে আনন্দে আত্নহারা হয়ে উঠল। এভাবে কিছু সসয় কাটিয়ে মেয়টি ফুফিয়ে কেদে উঠল। তখন লোকমান তনয় জিজ্ঞেস করল তুমি কাঁদছ কেন? তোমার ন্যায় ভাগ্যবান এক স্বামীর চরণতলে আমি কতক্ষণ ঠাই পাব আমি জানি না। কারণ আমি যে ভাগ্যহত এক কন্যা। আমাকে ইতোপূর্বে নয়টি যুবোক সাদি করেছে কিন্তু আমি কাউকে মন দিয়ে ভালবাসার সুযোগ পায়নি। তাই তোমাকেও সেভাবে হারাতে হয় নাকি সে কথা ভেবে কাঁদছি। এসময় লোকমান তনয়ের কথা মনে পড়ে গেল, চাচার নির্দেশ। তখন সে স্ত্রীকে বলল, আমি তোমার সাথে একটু পরে আলাপ করব। এখনই তোমার পরণের কাপড় ও একটা জামা আমাকে দিয়ে দাও। মেয়েটি তখন কোন কথা না জিজ্ঞাসা করে জামা ও কাপড় এনে দিল। লোকমান তনয় তখন তা নিয়ে বাইরে চলে গেল। দারোয়ানেরা অবাক হল একটু পূর্বে ঘরে গিয়ে বের হয়ে এলেন কেন? তবে কার কিছু বলার সাহস ছিল না। বৃদ্ধা ছেলেকে কাপড় ও জামা নিয়ে আসতে দেখে বললেন, বাবা এত দেরি করা তোমার ঠিক হয়নি। আর একটু দেরি করলে আমি তোমাকে রুক্ষা করতে পারতাম না। দ্বিতীয়ত আমি তোমার স্ত্রীর কাছে বসতে নিষেধ করেছিলাম। তবুও তুমি স্ত্রীর পাশে বসে তার সাথে কথা বলেছ। এটা খুবি বিপদজনক হতে যাচ্ছিল। আল্লাহ তোমাকে অল্পের জন্য রক্ষা করেছে। যাই হোক বাকি কথা পরে শুনব। এখন তুমি আমার উপদেশ অনুসারে কাজ কর। এ কথা বলে বৃদ্ধা মেয়েটির জামা একটি পাত্রে রেখে তাতে আগুন ধরিয়ে দিলেন। অতপর আগুনের মধ্যে কিছু কাচা লতাপাতা দিলেন। সর্বশেষ নিজ ঝোলা থেকে বের করে একটি সাপের মাথা আগুনের মধ্যে দিলেন। যখন এ গুলি অধিক অংশ পুড়ে গেল এবং প্রচণ্ড ধুয়া নির্গত হতে আরম্ভ হয়। খন তিনি লোকমান তনয়কে বললেন, এ পাত্র নিয়ে তুমি তোমার বাশর ঘরে নিয়ে রেখে দাও। তাঁর পর তোমার স্ত্রীর সাথে নিশ্চিন্তে আলাপ কর তাঁর সাথে সহবাস কর। ভোর রাতে উঠে গোসল করে ফরজের নামাজ শেষ করে আমার সাথে দেখা কর।
বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন