বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-পর্ব ৩
বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এবার তিনি নিজ উটকে কোন পথ নির্দেশনা দিলেন না উঠ তাঁর আপন গতিতে চলতে থাকল। দীর্ঘ সময় পরে ছওয়ারী থেকে নেমে একটু বিশ্রাম নেন এবং শিশু সন্তান কে পরিচর্যা করেন। এভাবে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পরে মক্কা শরীফ বাইতুল্লার নিকটে এসে উট বসে পড়ল। তখন নবী অ তাঁর স্ত্রী হাজেরা ইসমাইল (আঃ) সহ সেখানে অবতরণ করলেন। বিশাল মরু প্রান্তরে এক পাহাড়ের পাদদেশে তাঁরা বিশ্রাম নিলেন।
একটু পরে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হাজেরাকে বললেন, তোমরা এখানে বস, আমি আসছি। এই বলে তিনি উটের পৃষ্টে আরোহণ করে চলে গেলেন। বিবি হাজেরা নবজাত সন্তানকে নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে রইলেন। কিন্তু হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আর ফিরলেন না। রৌদ্রের প্রখরতায় ইসমাইল ও হাজেরা খুবই অতিষ্ঠ হলেন। বিশেষ করে পানির পিপাসায় তাঁর খুব অস্তির হয়ে পড়লেন। ইসমাইল (আঃ) কাঁদতে আরম্ভ করলেন। বিবি হাজেরা তখন সন্তানকে বাহুর উপর রেখে নিজে পানি অনুসন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। জন মানবহীন এ প্রন্তরে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার কোন সুযোগ ছিল না। তাই তিনি ছাফা ও মারওয়া পর্বত ছুটির মাঝে বার বার ছুটাছুটি করতে আরম্ভ করলেন। একবার এ পর্বতে আবার ও পর্বতে এবং তাঁর আশেপাশে উম্মাদের ন্যায় ছুটিতে থাকেন। এর মধ্যে সন্তানের আকর্ষণে মাঝে মাঝে তাঁর দিকেও দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মঙ্কে আশ্বাস্ত রাখেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রচণ্ড রৌদ্রের তাপে অজ্ঞান হয়ে পড়ার উপক্রম হলেন। তখন তিনি মনে মনে ভাবেন এ জন মানবহীন মরুভূমিতে পানির সন্ধান মেলা কঠিন। অতএব আর ছোটাছূটি করে লাভ নাই। ইসমাইল (আঃ)-এর নিকট ফিরে যাই। আল্লাহ্ যদি তাঁর খাছ রহমত দ্বারা রক্ষা করেন তবে বাঁচব না হয় নির্ঘাত মৃত্যুবরণ করতে হবে।
এরপরে তিনি আর কোন দিক না গিয়ে সোজা ইসমাইল (আঃ)-এর নিকট ফিরে এলেন। তিনি যখন সন্তানের নিকটবর্তী হলেন তখন দেখলেন কিছু পূর্বে ইসমাইল যখন চিৎকার দিয়ে কাঁদছিলেন এবং পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করছিলেন, সে আঘাতের স্থান থেকে একটি পানির ফোয়ারা ছুটে ইসমাইলকে ভিজিয়ে দিয়েছে এবং মাটিতে প্রচুর পানি জমা হয়ে গেছে। তখন তিনি আল্লাহ্ তা’য়ালার এহেন কুদরতি করুণার জন্য পাঠ করলেন, “ছোবাহান আল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ্, লা’ইলাহা ইল্লাল্লাহ ।” অতপর তিনি বিসমিল্লাহ্ বলে পানি পান করলেন এবং ইসমাইলকে পান করালেন। যখন ফোয়ারা থেকে পানি উঠে ইসমাইল (আঃ) কে ভিজিয়ে দিয়েছিলেন তখন থেকেই ইসমাইল (আঃ)-এর ক্রন্ধন বন্ধ হয়ে যায়। এ পানি ক্রমশ এত প্রবল বেগে ফোয়ারা থেকে উঠতে থাকে যাতে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। এর গতি যখন প্রবল থেকে প্রবলতর হতে আরম্ভ করে এবং অনেক ঊর্ধে পর্যন্ত প্রবল গতিতে উঠতে শুরু করে তখন প্রায় আঠারো গজ এলাকা পর্যন্ত ঝর্ণা ধারায় পানি বর্ষণ হতে থাকে। বিবি হাজেরা ভয় পেয়ে গেলেন এবং ভাবলেন যদি এভাবে পানির গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে একদিনের মধ্যে সমস্ত মরু এলাকা প্লাবিত হয়ে ডুবে যাবে। তাই তিনি তাড়াতাড়ি করে বড় বড় পাথর এনে ফোয়ারার মুখ সংকোচিত করে দিলেন। তখন পানির গতি নিয়ন্ত্রিত হল। কোন কোন তাফসীরকারক লিখেছেন যদি বিবি হাজেরা সেদিন পানির গতি নিয়ন্ত্রণ না করতেন তাহলে এর গতি বৃদ্ধি পেয়ে সমগ্র পৃথিবী পানিতে তলিয়ে যেত।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-চতুর্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন