বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-পর্ব ২

বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ইতোমধ্যে বিবি সায়েরা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে তাঁর নিকট যেতে খবর দিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) খবর পেয়ে সন্তানটিকে আর একবার বুকে লাগিয়ে বিবি হাজেরার কোলে দিয়ে তিনি সায়েরার নিকট চলে এলেন। সায়েরা এতক্ষণ যাবত হাজেরার নিকট কাটানোর কৈফিয়ত তলব করলেন এবং হাজেরাকে কখন বাড়ি থেকে নির্বাসনে নিয়ে যাবেন তা জানতে চাইলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রের মায়ায় কিছুটা আকৃষ্ট হলেন। তাই তিনি একটু নরম ভাষায় বললেন, হ্যাঁ ওকে দু এক দিনের মধ্যেই নিয়ে যাব। তুমি এ নিয়ে আমাকে এতটা অতিষ্ঠ কর না। সবেমাত্র শিশুটি ভূমিষ্ঠ হল, আর এ মুহুর্তেই তাঁকে বনবাসে পাঠানোর জন্য তুমি অধৈর্য হয়ে উঠেছ। মানবতা বলতে একটা আচার-আচারণ সকলের থাকা উচিত। সকল ক্ষেত্রে উম্মাদের ন্যায় অধৈর্য হলে চলে না। আমি যখন জবান দিয়েছি তখন তা আমি রক্ষা করবই। এমন সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) সেখানে হাজির হয়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ)- কে বললেন, হে আল্লাহ্‌র দোস্ত ! সায়েরা বিবি কথা অনুসারে অতি সত্তর কাজ করুন । এটাই আল্লাহ্‌ তা’য়ালার অধিক পছন্দনীয়। হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর কথা শুনে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) থ খেয়ে গেলেন। তিনি আল্লাহ্‌ তা’য়ালার এ রহস্যময় খেলার কোন তাৎপর্য খুঁজে পেলেন না। তিনি দীর্ঘ সময় স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এক মহা ভাবনার সাগরে তিনি হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। কিভাবে কি করবেন তা ভেবে তিনি কিছু স্থির করতে পারলেন না। অবশেষে তিনি অজু করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করে বললেন, “হে মহান প্রভু! আমি আমার ভবিষ্যতের মঙ্গল অমঙ্গল সম্বন্ধে কিছুই জানি না। আমি এক মাত্র তোমার উপর ভরসা করছি। তুমি আমাকে সঠিক পথে পরিচালনা কর। আমি বিবেক দ্বারা সঠিক পথের সন্ধান কোন দিন পাব না। তাই তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

হযরত জিব্রাইল (আঃ) দ্বিতীয় বার উপস্থিত হয়ে নবীকে সম্বোধন করে বললেন, হে আল্লহর দোস্ত ! আপনি আপনার নবজাত সন্তানের নাম রেখে দিন ইসমাইল জবিহুল্লাহ এবং অনতিবিলম্ভে তাঁকে ও তাঁর মাতাকে নির্বাসিত করুণ। এটাই আপনার জন্য মঙ্গলজনক। এবার হযরত ইব্রাহীম (আঃ) উঠে দাঁড়ালেন ।এবং বিবি হাজেরার নিকটবর্তী হয়ে বললেন, আমি আল্লাহ্‌ তা’য়ালার অনুমোদন ক্রমে এ সন্তানের নাম রেখে দিলাম ইসমাইল জবিহুল্লাহ। যে হাজেরা বিবি ! তুমি আরো শুনে রাখ আগামী দিন শুক্রবার ভোরবেলা, তোমাকে ও ইসমাইল কে আমার সঙ্গে এক উত্তম দাওয়াতে যেতে হবে। এজন্য তোমারা যথাসত্তর প্রস্তুতি গ্রহণ কর। বিবি হাজেরা নবীর ফরমান শুনে হতজ্ঞান হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, হুজুর ! আপনি কি বলছেন, এ নবজাত সন্তানকে কোথায়, কেন ও কি দাওয়াতে যাব? আপনার কথার কোন তাৎপর্য আমার বোধগম্য হচ্ছে না। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, “আগে পথ চলতে আরম্ভ কর পরে সব কিছু জানতে পারবে।” স্বামীর হুকুম শীরধার্য। তাই বিবি হাজেরা আর অতিরিক্ত কোন কথা জিজ্ঞেস করলেন না।  

পরের দিন শুক্রবার ভোর বেলা দুটি উট এনে একটির উপর নবী ছওয়ার হলেন। ওপরটির উপর ইসমাইল ও বিবি হাজেরাকে উঠালেন। সায়েরা বিবি এ যাত্রার দৃশ্য দেখে আনন্দিত হলেন। নবী হাজেরা বিবি ও সদ্য পুষ্পতুল্য নবজাত সন্তান হযরত ইসমাইল (আঃ) –কে নিয়ে চললেন ! দিগন্তহীন মরুময় প্রান্তরে কোথায় গেলে আল্লাহ্‌ তা’য়ালার আদেশ সঠিকভাবে পালন করা হবে। তাই দীর্ঘ সময় পথ চলার পরে এক জায়গায় ক্ষণিকের জন্য বিশ্রাম নিলেন এবং সেখানে বসে দু’রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাজ তা’য়ালার দরবারে প্রার্থনা করে বললেন, হে রহমান রহীম! আপনি আমাদের সঠিক গন্তব্য পৌঁছে দিন। আমরা পথ চিনে আপনার মনোনীত স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম নই। নবী দোয়া শেষ করে পুনরায় ছওয়ারীতে আরোহণ করলেন।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।